বিশ্ব শরণার্থী দিবস
এক বছরেই উদ্বাস্তু ৩০ লাখ
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে শরণার্থীশিবিরগুলোতে এখন ৬০ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করছেন।
বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির কারণে চলাফেরা সীমিত হয়ে পড়লেও যুদ্ধ, সহিংসতা, নিপীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ নানা কারণে গত বছর ৩০ লাখের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে শরণার্থী হয়েছেন। ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত বিশ্বে শরণার্থী মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ২৪ লাখ। গত শুক্রবার জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল রোববার ছিল বিশ্ব শরণার্থী দিবস। এ উপলক্ষে ভারতের এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
শরণার্থীদের দুর্দশার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার পাশাপাশি তাঁদের জীবন পুনর্গঠনে জরুরিভাবে সহায়তা করতে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি এবং সংস্থান জড়ো করতে বিশ্বজুড়ে এই দিন পালিত হয়।
এই মুহূর্তে অনেকেই অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ, নিপীড়ন, পানি বা জলবায়ু সমস্যায় নিজ ভূমি ছেড়ে অন্য কোথাও পালিয়ে রয়েছেন। এ মানুষগুলো নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় খুঁজে নিতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে যাঁরা বিদেশে রয়েছেন, তাঁরাই উদ্বাস্তু বা শরণার্থী হিসেবে পরিচিত। অনেক সময় নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত ঝুঁকিপূর্ণ এ মানুষগুলোকে অস্থায়ী আবাসস্থল বা কমিউনিটি ক্যাম্পে জীবনযাপন করতে হয়। চরম বৈষম্যের মুখে তাঁদের সহনশীলতা ও সাহসকে সম্মান জানাতে ২০ জুন শরণার্থী দিবস নির্ধারণ করে জাতিসংঘ।
২০০১ সালের ২০ জুন প্রথম বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালিত হয়। ২০০০ সালের ডিসেম্বরের আগে দিবসটি আফ্রিকা শরণার্থী দিবস হিসেবে পালিত হতো। ১৯৫১ সালে শরণার্থীদের স্বীকৃতির বিষয়ে জাতিসংঘের সনদটি গৃহীত হয়। ফলে এবারের বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালিত হচ্ছে ওই সনদের ৫০ বছর পূর্তিতে।
* এখন পর্যন্ত তুরস্ক সবচেয়ে বেশি ৩৬ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। * ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ১০ লাখ শিশু শরণার্থী হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছে।
শরণার্থীশিবির : জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে শরণার্থীশিবিরগুলোতে ৬০ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করছেন। এসব শিবিরে যুদ্ধ, নিপীড়ন ও সহিংসতার কারণে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসা লোকজনকে তাত্ক্ষণিক সুরক্ষা এবং সহায়তা দেওয়ার জন্য অস্থায়ী সুবিধা থাকে। তবে এসব শিবির কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। এসব শরণার্থীশিবির কেবল তাঁদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে মৌলিক সুবিধা যেমন খাদ্য, পানি, চিকিৎসা দিয়ে থাকে।
বিশ্বজুড়ে শরণার্থীর সংখ্যা : জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত বিশ্বে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৮ কোটি ২৪ লাখ। এর মধ্যে ৪২ শতাংশ তরুণ ও তরুণীর বয়স ১৮–এর নিচে। কোভিড মহামারির কারণে বাস্তুচ্যুতির হার কমলেও ভিন্ন দেশে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ২০২০ সালে ১১ লাখ মানুষ আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন।
গত বছরে বিশ্বের করোনা মহামারির বিস্তার রোধে ১৬০টির বেশি দেশ সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যে ৯৯টি দেশ তাদের দেশে কোনো শরণার্থী ঢুকতে দেয় না। গত বছর মাত্র ৩৪ হাজার ৪০০ শরণার্থী আশ্রয় পেয়েছেন।
কোন দেশে শরণার্থী বেশি : বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন পর্যন্ত তুরস্ক সবচেয়ে বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। দেশটিতে ৩৬ লাখ শরণার্থী রয়েছে। এরপর রয়েছে কলম্বিয়া। গত বছর ভেনেজুয়েলা থেকে অনেক শরণার্থী দেশটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে ১৮ লাখের বেশি শরণার্থী রয়েছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউএনএইচসিআর জানায়, ৮ লাখ ৭৮ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন সংঘর্ষে ৫৭ লাখ ফিলিস্তিনি তাঁদের ঘরবাড়ি হারিয়েছেন।
যেসব দেশ থেকে বেশি শরণার্থী এসেছে: ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের দুই–তৃতীয়াংশ শরণার্থী এসেছে মাত্র পাঁচটি দেশ থেকে। এগুলো হচ্ছে সিরিয়া (৬৬ লাখ), ভেনেজুয়েলা (৩৭ লাখ), আফগানিস্তান (২৭ লাখ), দক্ষিণ সুদান (২৩ লাখ) ও মিয়ানমার (১০) লাখ। ইউএনএইচসিআর বলছে, বর্তমানে বিশ্বের ১ শতাংশের বেশি মানুষ বাস্তুহারা। এক দশক আগের তুলনায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির হার দ্বিগুণ হয়েছে। এর মধ্যে ৪২ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের কম। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ১০ লাখ শিশু শরণার্থী হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছে।