এমন দাবি যে উঠবেই, তা তাঁর জানা; তাই জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বিদেশ সফররত প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং জানিয়ে দিলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা বন্ধ রেখে তিনি ‘সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদীদের’ চাল সফল হতে দেবেন না।
নওয়াজ শরিফের সঙ্গে আলোচনার মাত্র ৭২ ঘণ্টা আগে এমন বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা ভারতের বিরোধী দলসহ বিদেশনীতি প্রসঙ্গে কট্টরপন্থীদেরও যে আলোচনা বন্ধের দাবিকে উৎসাহিত করে তুলবে, প্রধানমন্ত্রী তা জানতেন। হয়েছেও ঠিক তা-ই। বৃহস্পতিবার কাকভোরের এ হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিজেপি, সমাজবাদী পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রাক্তন সেনা ও বিদেশনীতির পরিচিত কট্টরপন্থীরা অবিলম্বে আলোচনা বন্ধের দাবি জানাতে থাকেন। বিজেপির সভাপতি রাজনাথ সিং কটাক্ষ করেন, প্রধানমন্ত্রীর কী এমন তাড়া যে, এখনই আলোচনার টেবিলে বসতে হবে? যশোবন্ত সিনহার মন্তব্য, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই যখন আলোচনার পক্ষে নয়, তখন প্রধানমন্ত্রী কেন এত ব্যগ্র? প্রবীণ মুরলি মনোহর যোশিরও দাবি, অবিলম্বে আলোচনা বন্ধ করে পাকিস্তানকে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হোক। বিদেশ থেকে মনমোহন সিং কালক্ষেপণ না করে বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁর সাফ কথা, ‘শান্তির বিরুদ্ধে যারা, এটা তাদেরই আরেক বর্বরোচিত হামলা। শান্তিপূর্ণ আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান যারা চায় না, তাদের লক্ষ্য সফল হতে দেব না।’
মনমোহন সিং আলোচনার পক্ষে এবং পাকিস্তানের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে তুলতে ভারতের সমর্থনের পক্ষপাতী। সরকারের বিদেশনীতি তা-ই, গণতন্ত্রী পাকিস্তানকে শক্তি জুগিয়ে তাদের দিয়ে ভারতবিরোধী শক্তির মোকাবিলা করা। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের এক সূত্রের কথায়, ‘পাকিস্তানও তো সন্ত্রাসের শিকার। সেখানেও নিত্যদিন মানুষ সন্ত্রাসের বলি। তা ছাড়া এটা ভুললে চলবে না যে, পাকিস্তান পরমাণু শক্তিধর দেশ এবং সেই দেশে তালেবানের উপস্থিতি প্রবল।’
পাকিস্তানে নওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এখনো পর্যন্ত তাঁর অধিষ্ঠান পোক্ত করতে পারেননি। ছয় বছর ধরে তাঁর দেশের সেনাবাহিনীর যিনি প্রধান, সেই জেনারেল আশফাক পারভেজ কায়ানির মেয়াদ ২৮ নভেম্বর শেষ হতে চলেছে। শরিফকে নির্ঝঞ্ঝাটে একজন অনুগত সেনাপ্রধান নিয়োগ করতে হবে। এটা খুবই কঠিন একটা কাজ। গত কয়েক মাসে দুই প্রধানমন্ত্রীর নিযুক্ত দুই দূত সতীন্দর লাম্বা ও সারতাজ আজিজের ‘ট্র্যাক টু ডিপ্লোম্যাসি’র ফল নিউইয়র্কে দুই প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন বৈঠক। পাকিস্তানের রাজনীতিতে এ-যাবৎ যা হয়নি, দেশের সেনাবাহিনীকে রাজনীতিমুক্ত করা, শরিফ তা করতে চান। নওয়াজ শরিফকে সেই সুযোগ মনমোহন সিং দিতে আগ্রহী।