বিশ্বের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজন মানুষ চান তাঁদের দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আরও বেশি পদক্ষেপ নিক। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও জিওপোলের এক জরিপ প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। আজ বৃহস্পতিবার ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
জরিপে বিশ্বের ৭৭টি দেশের ৭৫ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন। দৈবচয়ন ভিত্তিতে ফোন করে ১৫টি প্রশ্ন করা হয়েছিল জরিপে অংশগ্রহণকারীদের। যে ৭৭টি দেশের মানুষের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে, সেসব দেশে বিশ্বের প্রায় ৮৭ শতাংশ মানুষের বসবাস।
জরিপে মূল যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা হলো, উত্তরদাতাদের ৮০ শতাংশ মানুষ চান, তাঁদের সরকারগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবিলায় আরও বেশি পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। তবে দরিদ্র দেশগুলো থেকে জরিপে অংশ নেওয়া মানুষের মধ্যে এই ধরনের চাওয়া ৮৯ শতাংশের। আর জি-২০ জোটভুক্ত দেশগুলোয় তা ৭৬ শতাংশ।
গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী বিশ্বের শীর্ষ দুই দেশ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষও জলবায়ু মোকাবিলায় নিজ নিজ সরকারের আরও বেশি পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। দেশ দুটির উত্তরদাতাদের যথাক্রমে ৭৩ ও ৬৬ শতাংশ মানুষ এই ধরনের পদক্ষেপ চান।
ইউএনডিপির বিশ্ব জলবায়ুবিষয়ক পরিচালক ক্যাসি ফ্লিন বলেন, প্যারিস চুক্তির আলোকে বিশ্বনেতারা (জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়) পরবর্তী ধাপের পদক্ষেপের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। এ অবস্থায় বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষ যে (জলবায়ু নিয়ে) আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ চান, এই জরিপ তার একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭৭টির মধ্যে ৬২টি দেশের মানুষ জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দ্রুত পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। এসব দেশের মধ্যে চীনের ৮০ শতাংশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ৫৪ শতাংশ মানুষ এমন পদক্ষেপের পক্ষে মত দেন। এমন মত দিয়েছেন রাশিয়ার মাত্র ১৬ শতাংশ মানুষ।
জরিপে দেখা গেছে, মানুষের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগও আগের চেয়ে বেড়েছে। উত্তরদাতাদের ৫৬ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সপ্তাহে অন্তত একবার চিন্তা করেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকের বেশি (৫৩ শতাংশ) মানুষ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আগের বছরের চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন। ১৫ শতাংশ আগের বছরের চেয়ে কম উদ্বিগ্ন বলে জানান।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ ফিজিতে। এক বছর আগের তুলনায় দেশটির ৮০ শতাংশ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। আফগানিস্তান ও তুরস্কে এই ধরনের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন যথাক্রমে ৭৮ ও ৭৭ শতাংশ মানুষ।
জলবায়ু পরিবর্তনের উদ্বেগ আগের বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম বেড়েছে সৌদি আরবের মানুষের। দেশটির উত্তরদাতাদের ২৫ শতাংশ এই ধরনের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। এরপরই রয়েছে রাশিয়া (৩৪%), চেক প্রজাতন্ত্র (৩৬%) ও চীন (২৯%)।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬৯ শতাংশ বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন তাদের জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাব ফেলছে। তাঁরা কোথায় কাজ করবেন বা কোথায় থাকবেন কিংবা কী কিনবেন, এমন সব সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন।
জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত উদ্বেগ মানুষের ভোট দেওয়া কিংবা পণ্য কেনার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে—এমন মনে করার কারণ নেই বলে মন্তব্য করেন ইউএনডিপির প্রধান আচিম স্টেইনার। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ধারণা হলো, ‘আমি বেশি করছি। কিন্তু অন্যরা এতটা করছে না। সুতরাং আমি কিছুই করব না।’ তিনি একে মানুষের ‘উপলব্ধিগত ব্যবধান’ বলে মন্তব্য করেন।