ইঁদুরের মস্তিষ্কের মানচিত্রে ফুটে উঠল ‘গ্যালাক্সির’ দৃশ্য

ইঁদুরের মস্তিষ্কের একাংশের নিউরনের (স্নায়ুকোষ) ডিজিটাল মানচিত্র। ৮ এপ্রিল ২০২৫ ছবিটি সরবরাহ করেছে অ্যালেন ইনস্টিটিউটছবি: এপি

বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের মস্তিষ্কের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় এক মানচিত্র তৈরি করেছেন। এটির মস্তিষ্কের যে অংশের মানচিত্র তাঁরা তৈরি করেছেন, সেখানে বার্তা পাঠানোর সময় ৮৪ হাজার নিউরনকে (স্নায়ুকোষ) সংযুক্ত করে এমন তারের একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। এ চিত্র দেখতে মহাকাশে ছড়িয়ে থাকা গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের মতোই।

এ মানচিত্র তৈরিতে গবেষকেরা ইঁদুরের মস্তিষ্কের ছোট এক খণ্ডাংশ ব্যবহার করেছেন, যেটি আকারে একটি পপিবীজের সমান। গবেষণায় তাঁরা হাজার হাজার এসব নিউরন শনাক্ত ও এগুলো শাখা–প্রশাখার মতো ছড়িয়ে থাকা ফাইবারের মতো কীভাবে যুক্ত থেকে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করে, তা নিরূপণ করেছেন। যোগাযোগের এ প্রক্রিয়ায় সিন্যাপস নামে পরিচিত বিস্ময়কর ৫০ কোটি সংযোগস্থলের অস্তিত্ব লক্ষ করেছেন গবেষকেরা।

এ-সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত গতকাল বুধবার বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে, সে রহস্য উদ্‌ঘাটনে এ গবেষণাকে একধাপ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মানব মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালি নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীদের আরও গবেষণার পথ উন্মোচন করবে এটি।

এ–সংক্রান্ত তথ্য–উপাত্ত গতকাল বুধবার বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে, সে রহস্য উদ্‌ঘাটনে এ গবেষণাকে একধাপ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মানব মস্তিষ্কের কার্যপ্রণালি নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীদের আরও গবেষণার পথ উন্মোচন করবে এটি।

আরও পড়ুন

ইঁদুরের মস্তিষ্কের মানচিত্র তৈরিতে নেতৃত্ব দেওয়া গবেষক দলের প্রধান সিয়াটলের ‘অ্যালেন ইনস্টিটিউট ফর ব্রেইন সায়েন্স’–এর ফরেস্ট কোলম্যান বলেছেন, ‘এটি অবশ্যই একটি বিস্ময়ের অনুভূতি তৈরি করে, যেন আমরা ছায়াপথের ছবি দেখছি।’

এটি (ইঁদুরের মস্তিষ্কের মানচিত্র) অবশ্যই একটি বিস্ময়ের অনুভূতি তৈরি করে, যেন আমরা ছায়াপথের ছবি দেখছি।
ফরেস্ট কোলম্যান, গবেষক দলের প্রধান

এই গবেষক আরও বলেন, ‘এটি দেখে আপনি (আপনার মস্তিষ্ক) কতটা জটিল, তা বুঝতে পারবেন। আমরা একটি ক্ষুদ্র অংশ দেখছি...একটি ইঁদুরের মস্তিষ্কের। (এ মানচিত্রে) নিউরনসমূহ ও এসবের মধ্যকার লাখ লাখ সংযোগের সৌন্দর্য এবং জটিল নকশা আপনি দেখতে পাবেন।’

আমরা যেভাবে চিন্তা করি, কিছু অনুভব করি, দেখি, কথা বলি ও নড়াচড়া করি, তা মস্তিষ্কের নিউরন বা স্নায়ুকোষের কারণেই ঘটে। নিউরনগুলো সক্রিয় থেকে একে অপরের কাছে বার্তা পাঠায়।

আমরা যেভাবে চিন্তা করি, কিছু অনুভব করি, দেখি, কথা বলি ও নড়াচড়া করি, তা মস্তিষ্কের নিউরন বা স্নায়ুকোষের কারণেই ঘটে। নিউরনগুলো সক্রিয় থেকে একে অপরের কাছে বার্তা পাঠায়। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে জানেন যে সংকেতগুলো একটি নিউরন থেকে অন্যটিতে অ্যাক্সনস ও ডেনড্রাইটস নামক তন্তু হয়ে এগিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে এসব সংকেত সিন্যাপসেস ব্যবহার করে পরবর্তী নিউরনে লাফিয়ে চলে। কিন্তু নিউরনের নেটওয়ার্ক এবং এ তারের জালের ব্যাঘাত কীভাবে আলঝেইমার, অটিজম বা অন্যান্য রোগে ভূমিকা রাখতে পারে, সেসব সম্পর্কে খুব কম জানা যায়।

আরও পড়ুন

অ্যালেন ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ক্লে রিড বলেন, ‘মস্তিষ্কের কোষগুলো কীভাবে নিজেদের কাজ করে, সে সম্পর্কে আপনি হাজারো অনুমান করতে পারেন। কিন্তু আপনি সেই অনুমানগুলো পরীক্ষা করতে পারবেন না, যদি না আপনি সম্ভবত সবচেয়ে মৌলিক বিষয়টি জানেন। সেটি হলো, কীভাবে কোষগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকে।’

মস্তিষ্কের কোষগুলো কীভাবে নিজেদের কাজ করে সে সম্পর্কে আপনি হাজারো অনুমান করতে পারেন। কিন্তু আপনি সেই অনুমানগুলো পরীক্ষা করতে পারবেন না, যদি না আপনি সম্ভবত সবচেয়ে মৌলিক বিষয়টি জানেন। সেটি হলো, কীভাবে কোষগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
ক্লে রিড, অ্যালেন ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী

প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা ইঁদুরের মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের ডিজিটাল থ্রিডি কপি তৈরি করেছেন, যা অন্য বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন গবেষণায় কাজে লাগাতে পারবেন।

আরও পড়ুন