স্কুলে বাস্কেটবল খেলাই হোক বা সহকর্মীদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা, খেলাধুলা জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পৃথিবীর যেখানেই থাকুন না কেন, এমন কিছু খেলা অবশ্যই থাকবে, যা আপনি বা আপনার আশপাশের মানুষদের কাছে খুব আগ্রহের বিষয়।
ভক্তদের সংখ্যার ভিত্তিতে জনপ্রিয় খেলাগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেছে ওয়ার্ল্ড এটলাস। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তালিকাটি করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের জনপ্রিয় ১০ খেলা হলো ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, টেনিস, ভলিবল, টেবিল টেনিস, বাস্কেটবল, বেসবল, রাগবি এবং গলফ।
ফুটবল (যুক্তরাষ্ট্রে সকার নামে পরিচিত) বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে এ খেলাটির ভক্তসংখ্যা ৩৫০ কোটি। ফুটবল দলীয় খেলা। মাঠে প্রতি দলে ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকেন। প্রতিপক্ষের জালে কে কতবার বল ঢোকাতে পারল, তা দিয়েই এই খেলার ফলাফল নির্ধারিত হয়। ফুটবল খেলতে হয় পা দিয়ে। ৯০ মিনিটের খেলা ফুটবলে ৪৫ মিনিট পর সংক্ষিপ্ত বিরতি, তারপর আবার ৪৫ মিনিট খেলা হয়।
বিশ্বের প্রাচীনতম খেলাগুলোর একটি ফুটবল। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৩০০০ সাল থেকে এ খেলা চলে আসছে। মধ্যযুগে ইংল্যান্ডে ফুটবল খেলার বেশ কিছু নিয়মকানুন ঠিক করা হয়, আধুনিক ফুটবল সেসব নিয়ম মেনেই চলছে। মধ্যযুগ থেকে খেলাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে। ফুটবলের সবচেয়ে বড় আয়োজন ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ। ১৯৩০ সাল থেকে প্রতি চার বছর পরপর এ আয়োজন হচ্ছে। বিশ্বকাপ ছাড়াও বিশ্বজুড়ে ফুটবলের আরও বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।
ফুটবল থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি খেলা ক্রিকেট। সারা বিশ্বে এই খেলার ভক্তসংখ্যা প্রায় ২৫০ কোটি। ব্যাট ও বলের খেলা ক্রিকেট। এই খেলাতেও দুই দলে ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকেন। টসের মাধ্যমে কোনো দল ব্যাট করবে আর কোন দল বল করবে, তা নির্ধারিত হয়। তিন ফরম্যাটে ক্রিকেট খেলা হয়: টেস্ট (পাঁচ অথবা তিন দিনে), ওয়ান ডে (প্রতি দল ৫০ ওভার করে খেলে) এবং সর্বশেষ সংযোজন টি২০ (প্রতি দল ২০ ওভার করে খেলে)।
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। আইসিসি ওয়ার্ল্ডকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। এ ছাড়া ক্রিকেটে শক্তিশালী দেশের মধ্যে আছে নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড।
মধ্যযুগে ইংল্যান্ডে বাচ্চাদের খেলা হিসেবে ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়েছিল। পরে এটা ধনিক শ্রেণির জুয়ার খেলা হয়ে ওঠে। বর্তমানে ক্রিকেটের বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়। ২০২৩ সালে আইসিসি ওয়ার্ল্ডকাপের অস্ট্রেলিয়া বনাম ভারত ফাইনাল ম্যাচটি ৮ হাজার ৭৬০ কোটি মিনিট দেখা হয়েছিল।
বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং দারুণ প্রতিযোগিতামূলক খেলা হকি। বিশ্বে এই খেলার প্রায় ২০০ কোটি ভক্ত আছেন। এই খেলাতেও দুই দলে ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকেন। ১০ জন করে মাঠে খেলেন এবং দুই প্রান্তে দুই দলের দুজন গোলরক্ষী থাকেন। খেলোয়াড়েরা হকি স্টিক দিয়ে বল মেরে এই খেলা খেলেন। ঘাসে ঢাকা মাঠ ছাড়াও জমাট বরফের মাঠে হকি খেলা হয়, একে আইস হকি বলা হয়।
হকির সমৃদ্ধ অতীত রয়েছে। ৪ হাজার বছরের বেশি সময় ধরে এই খেলা চলছে। জন্ম প্রাচীন মিসরে বলে ধারণা করা হয়। প্রাচীন গ্রিস এবং মঙ্গোলিয়াতেও এ ধরনের খেলা হতো। ওয়ার্ল্ড কাপ, অলিম্পিক গেমস, প্রো–লিগসহ বিশ্বজুড়ে হকি খেলার বেশ কয়েকটি বড় বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন হয়।
র্যাকেট দিয়ে খেলা হয় এমন খেলাধুলার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় টেনিস। বিশ্বজুড়ে এই খেলার ১০০ কোটি ভক্ত রয়েছে। সব বয়সী মানুষের কাছে এই খেলা জনপ্রিয়। ফুটবল বা ক্রিকেটের মতো বড় স্টেডিয়ামে নয় বরং আকারে ছোট কোর্টে টেনিস খেলা হয়।
টেনিস খেলা হয় ‘সিঙ্গেল’ এবং ‘ডাবল’ এই দুই ফরম্যাটে। সিঙ্গেলে দুজন খেলোয়াড় মুখোমুখি খেলেন, ডাবলে দুজন করে মোট চারজন খেলেন। টেনিসের সবচেয়ে জনপ্রিয় চারটি টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফ্রেঞ্চ ওপেন, উইম্বলডন এবং ইউএস ওপেন।
টেনিসের সবচেয়ে পুরোনো টুর্নামেন্ট উইম্বলডন, ১৮৭৭ সাল থেকে এটি আয়োজিত হচ্ছে। প্রতিবছর একবার করে এসব টুর্নামেন্টের আয়োজন হয়। এ ছাড়া অলিম্পিকেও টেনিস খেলা হয়।
টেনিসের মতো ভলিবলও কোর্টে খেলা হয়। একটি কোর্টের মাঝবরাবর জাল টানানো থাকে। জালের দুই পাশে দুই দলের খেলোয়াড়েরা বল প্রতিপক্ষের কোর্টের ভেতর ফেলার চেষ্টা করেন। ভলিবল হাত দিয়ে খেলা হয়। প্রত্যেক দলে ছয়জন করে খেলোয়াড় থাকেন। এই খেলার নিয়ম খানিকটা জটিল। খেলোয়াড়দের শারীরিক সক্ষমতা এবং ক্ষিপ্রতা এই খেলায় খুবই জরুরি।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, সারা বিশ্বে এই খেলার ভক্তসংখ্যা ৯০ কোটির বেশি। কোর্টের পাশাপাশি সৈকতেও ভলিবল খেলা হয়, একে বিচ ভলিবল বলে। তবে বিচ ভলিবলে চারজন করে খেলোয়াড় থাকেন। সৈকতে ঘুরতে যাওয়া মানুষের কাছে বিচ ভলিবল দারুণ পছন্দের এক খেলা।
ঘরের ভেতর (ইনডোর গেম) খুব সহজে যেসব খেলাধুলা করা যায়, তার একটি টেবিল টেনিস। খেলাটি অনেকটা টেনিসের মতোই। তবে কোর্টে নয়, বরং টেবিলের ওপর খেলা হয় বলে এই খেলার নাম টেবিল টেনিস। একটি টেবিল, কাঠের তৈরি ছোট দুটি র্যাকেট আর ছোট্ট একটি প্লাস্টিকের বল। টেনিসের মতোই ‘সিঙ্গেল’ এবং ‘ডাবল’ খেলা হয়।
মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ক্লাব, কমিউনিটি সেন্টার বা বিভিন্ন অফিসে এই খেলা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। সহজে যেকোনো জায়গায় খেলা যায় বলে জনপ্রিয়তায় ছয় নম্বরে থাকা এই খেলাটির ভক্তসংখ্যা ৮৫ কোটির বেশি।
টেবিল টেনিসের সবচেয়ে জনপ্রিয় টুর্নামেন্টগুলো হলো: ওয়ার্ল্ড টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ, অলিম্পিক ও টেবিল টেনিস ওয়ার্ল্ড কাপ।
আরেকটি দলীয় খেলা বাস্কেটবল। প্রতি দলে একবারে পাঁচজন করে খেলোয়াড় থাকেন। আয়তাকার কোর্টের দুই প্রান্তে দুটো হুপ ঝোলানো থাকে। খেলোয়াড়দের লক্ষ্য খুবই সাধারণ, প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের এড়িয়ে বল প্রতিপক্ষের হুপে ফেলা। এ জন্য খেলোয়াড়েরা নানা কৌশল ব্যবহার করেন।
এই খেলার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে খেলাটির ভক্তসংখ্যা প্রায় ৮০ কোটি। সামাজিকভাবেও এই খেলার প্রচলন আছে। অল্প জায়গায় এই খেলা খেলতে অনেক সময় একটি মাত্র হুপ ব্যবহার করা হয়।
বাস্কেটবল অপেক্ষাকৃত নতুন খেলা। ১৬ শতকের দিকে বাস্কেটবল খেলার মতো কিছু একটা খেলা হতো বলে ধারণা করা হয়। তবে আজ যে ধরনের বাস্কেটবল খেলা হয়, সেটির যাত্রা ১৮ শতকের শেষ দিকে শুরু হয়েছে। একজন কানাডীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন অধ্যাপক তাঁর জিম ক্লাসে অ্যাক্টিভিটি বাড়াতে এই খেলা শুরু করেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা বাস্কেটবল।
ক্রিকেটের বাইরে আর একটি মাত্র খেলা ব্যাট ও বল দিয়ে খেলা হয়। সেটি হলো বেসবল। স্কোরের অনন্য ধরনের কারণে বহু বছর ধরে খেলাটি জনপ্রিয়তায় ওপরের দিকে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় বেসবল খুবই জনপ্রিয়। অনেক শহরের নিজস্ব ও স্কুলভিত্তিক বেসবল দল থাকে। বিশ্বজুড়ে এই খেলার ৫০ কোটির বেশি ভক্ত রয়েছে। ওয়ার্ল্ড বেসবল ক্ল্যাসিক, মেজর লিগ বেসবল এই খেলার জনপ্রিয় দুটি টুর্নামেন্ট।
রাগবি একটি দলীয় খেলা। এ খেলার জন্য পরিকল্পিত কৌশল এবং প্রচণ্ড শারীরিক শক্তির প্রয়োজন হয়। এই খেলার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফরম্যাট রয়েছে। সবচেয়ে স্বীকৃত দুটি ভার্সন রাগবি ইউনিয়ন ও রাগবি লিগ। এই খেলায় খেলোয়াড়েরা বল হাতে দৌড়ে বা লাথি মেরে প্রতিপক্ষের গোল লাইনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। নিয়ম নির্ধারিত হয় দলের আকার এবং যেখানে খেলা হচ্ছে তার আকৃতির ওপর। রাগবি ইউনিয়নে প্রতি দলে ১৫ জন খেলোয়াড় এবং রাগবি লিগে প্রতি দলে ১৩ জন খেলোয়াড় থাকেন।
অলিম্পিকে রাগবি খেলা হয়। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়েও রাগবি টুর্নামেন্ট হয়। বিশ্বে রাগবি খেলার সাড়ে ৪৭ কোটির বেশি ভক্ত রয়েছেন।
ক্লাব ও বলের খেলা গলফ। একটি গলফ কোর্সে বেশ কয়েকটি ছোট গর্ত থাকে। একজন খেলোয়াড় নানা ধরনের ক্লাব দিয়ে একটি বল সম্ভাব্য সবচেয়ে কমবার মেরে ওই গর্তগুলোতে ফেলেন।
যদিও নিয়ম খুবই সাধারণ। কিন্তু এই খেলায় নির্ভুলতা, দক্ষতা ও কৌশলের প্রয়োজন পড়ে। একবারে একজন খেলোয়াড় একাই এ খেলা খেলেন। বাংকার, পানি, রুক্ষ ভূমি ইত্যাদি দিয়ে গলফ কোর্সে বল চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র, স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় এই খেলা বেশ জনপ্রিয়। এই খেলার ভক্ত সংখ্যা ৪৫ কোটির বেশি। পেশাদার পর্যায়ে এক বছরে গলফের চারটি বড় টুর্নামেন্ট হয়। সেগুলো মেজরস নামে পরিচিত।