ঐতিহাসিক স্থান, প্রাচীন নিদর্শন কিংবা ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকে মানুষ দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করে। তবে ভোজনরসিক ভ্রমণপিপাসুদের কাছে ভ্রমণের সময় স্থানীয় বিশেষ কোনো খাবার পরখ করে দেখাটাও বিশেষ গুরুত্ব পায়। প্রতি পাঁচ ভ্রমণকারীর মধ্যে প্রায় একজন বিশেষ করে নতুন রেস্তোরাঁ এবং ভিন্ন রন্ধনপ্রণালির খাবারের স্বাদ নিতে ভ্রমণে যান বলে নানা জরিপে উঠে এসেছে।
নতুন বছরের ভ্রমণ পরিকল্পনার সময় ভ্রমণকারীরা সবার আগে দেখেন থাকার ব্যবস্থা। তারপরই তাঁদের কাছে গুরুত্ব পায় খাবার। সুপরিচিত ‘ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল গাইড’ টেস্ট অ্যাটলাস সম্প্রতি তাদের ওয়ার্ল্ড ফুড অ্যাওয়ার্ড ২০২৪/২৫ ঘোষণা করেছে। সেখানে খাবারের ভিত্তিতে বিশ্বের সেরা ১০০ শহর বেছে নেওয়া হয়। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য তালিকায় থাকা শীর্ষ ১০ শহর এবং সেখানকার জনপ্রিয় খাবারের খবর তুলে ধরা হলো:
টেস্ট অ্যাটলাসের তালিকায় সবার ওপরে আছে ইতালির শহর নাপোলি। পাঁচের মধ্যে নাপোলি পেয়েছে ৪ দশমিক ৮। তালিকায় নাপোলির যে খাবারটি অবশ্যই খাওয়া উচিত বলা হয়েছে, সেটি হলো পিৎজা মার্গারিটা। ১৮৮৯ সালে রানি মার্গারিটা নাপোলি ভ্রমণে এসেছিলেন। সেখানে একটি পিৎজা দিয়ে তাঁকে আপ্যায়ন করা হয়েছিল। রানির পিৎজাটি দারুণ পছন্দ হয়েছিল। তারপর রানির নামে এই পিৎজার নামকরণ করা হয়।
ইতালিরই আরেক শহর মিলান ৪ দশমিক ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেস্ট অ্যাটলাসের তালিকায় ২ নম্বরে আছে। মিলানে গিয়ে যে খাবারটির স্বাদ অবশ্যই গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সেটি হলো রিজত্তো আল্লা মিলানিজ। ইতালির উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবারের একটি রিজত্তো। এই রিজত্তো তৈরির আদি প্রণালি অনুসরণ করে তৈরি হয় রিজত্তো আল্লা মিলানিজ।
বিশ্বজুড়ে ইতালিয়ান খাবার যে খুবই জনপ্রিয়, তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ সম্ভবত টেস্ট অ্যাটলাসের এই তালিকা। কারণ, তালিকার শীর্ষ তিন স্থানই ইতালির শহরগুলো দখলে। ৪ দশমিক ৬ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় তৃতীয় স্থানে ইতালির শহর বোলোনিয়া। সেখানে গিয়ে অবশ্যই খেতে হবে বিখ্যাত তাল্লিয়াতেল্লে আর রাগু। দেখতে স্প্যাগেটির মতো হলেও তাল্লিয়াতেল্লে আসলে একধরনের পাস্তা।
বিসতেকাহ আল্লা ফিওরেনতিনা। এটি বাছুরের মাংস দিয়ে তৈরি একধরনের স্টেক। টেস্ট অ্যাটলাসের তালিকায় থাকা চতুর্থ শহর ফ্লোরেন্স ভ্রমণে গেলে অবশ্যই এই খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে বলেছে।
ইতালির বাইরের যে শহরটি প্রথম খাবারের জন্য সেরা শহরের তালিকায় স্থান পেয়েছে সেটি হলো ভারতের মুম্বাই। মুম্বাইয়ের পয়েন্ট ৪ দশমিক ৫। মুম্বাইয়ে গেলে অবশ্যই খেয়ে দেখবেন বড়া পাও। দামে খুবই সস্তা এই নিরামিষ খাবারটি মুম্বাইয়ে স্ট্রিট ফুড হিসেবে বিখ্যাত। এ ছাড়া সেখানে খেয়ে দেখতে পারেন ভেল পুরি, পাও ভাজি ও বোম্বে বিরিয়ানি।
আবারও টেস্ট অ্যাটলাসের তালিকায় ইতালির আরেক শহর রোম। আর রোমের বিখ্যাত খাবার স্প্যাগেতি আল্লা কারবোনা। ইতালির ঐতিহ্যবাহী, বিশেষ করে বললে রোমান ঐতিহ্যবাহী খাবারের একটি এটি।
শিল্প-সাহিত্য আর ঐতিহ্যের শহর হিসেবে খ্যাতি আছে প্যারিসের। তবে শুধু খাবারের স্বাদ নিতেও আপনি যেতে পারেন ফ্রান্সের রাজধানীতে। ৪ দশমিক ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেস্ট অ্যাটলাসের সেরা খাবারের শহরের তালিকায় প্যারিসের অবস্থান ৭ নম্বরে। সেখানে গিয়ে যে খাবারটি অবশ্যই খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সেটি হলো ক্রেম বুহলে।
৪ দশমিক ৪ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় অষ্টম স্থানে আছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা। টেস্ট অ্যাটলাস ভিয়েনা গিয়ে ভোজন রসিকদের যে খাবারটি অবশ্যই খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, সেটি হলো জিবেরসব্রাটেন। এ ছাড়া চেখে দেখতে পারেন ভিনা সিনিৎজো, ভিনা ভুর্স্টচেনসহ আরও বেশ কিছু খাবার।
ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় শহর তুরিন। তালিকায় ৯ নম্বরে থাকা তুরিনে গিয়ে যে খাবারটি অবশ্যই খেতে বলা হয়েছে, সেটি হলো আনিওলত্তি।
জাপানের বাণিজ্যিক শহর ওসাকা। জাপানের ঐতিহ্যবাহী এবং আঞ্চলিক সব খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে যেতে পারেন ওসাকায়। যেখানে জনপ্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে আছে, তাকো-ইয়াকি, ওকোনোমিয়াকি, রামেন, কুশি-কাতসু।