'নীরব ঘাতকের' সঙ্গে বসবাস
আরও একটি জন্মদিন এসে গেল। অথচ জন্মদিনের আনন্দের পরিবর্তে একটি দুঃখবোধ যেন আমাকে গ্রাস করে নিয়েছে। আমার ভিতু, হতাশ মন আমাকে জানাল, ‘আজ তোমার জীবন থেকে আরও একটি বছর আয়ু কমে গেল’। আজ কেন যেন আমার মনে হচ্ছে, জন্মদিন আসলে একটি দুঃখের দিন হিসেবে পালিত হওয়া উচিত। কারণ এই দিনটি যেন মানুষের জন্য মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে আসে। জন্মের পর থেকেই আমাদের জীবনের বরাদ্দ সময় থেকে এভাবেই একটি একটি করে বছর খসে পড়ছে। আমরা যেন মোমবাতি জ্বালিয়ে, কেক কেটে হাসিমুখে সেই অতি বাস্তবকে, কঠিন সত্যকে গ্রহণ করছি। ফুঁ দিয়ে মোমবাতি নিভিয়ে নিজের অজান্তেই আরেকটি বছরকে নিজের জীবন থেকে মুছে দিচ্ছি।
লেখার শুরুতেই একটি নেতিবাচক ভাবধারা ছড়িয়ে দেওয়া মোটেও আমার ইচ্ছে নয়। আমি একজন আশাবাদী এবং ইতিবাচক চিন্তার মানুষ। তবুও প্রতিটি মানুষের জীবনে এমন কিছু ক্ষণ বা মুহূর্ত আসে, যখন সে তার মনের শক্তি বা ইতিবাচক মনোভাবটি ধরে রাখতে পারে না। ঠিক তখনই তার নিজের পাশে প্রয়োজন হয় আরও কিছু ইতিবাচক চিন্তার মানুষের, যারা ভেঙে পড়া মানুষটিকে নিরাশার গর্ত থেকে টেনে তুলতে পারে। এ কারণে আমি নিজেও আশাবাদী মানুষদের সঙ্গ পছন্দ করি। আমি একটি গ্লাসের পানি কতটুকু খালি সেটা লক্ষ্য না করে কতটুকু ভরা, সেটি হিসাব করি। কিন্তু কখনো কখনো নেতিবাচক চিন্তা এসে মনের অজান্তেই মাথায় ভর করে। যেমন গত কয়েক সপ্তাহজুড়েই মৃত্যুচিন্তা আমার মাথায় ভর করেছে।
গত মাসে ম্যানহাটনের বেলভিউ হাসপাতালে গিয়েছিলাম নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে। আমার চিকিৎসক জানালেন, আমার রক্তচাপ অনেক বেশি, আগের তুলনায় ওজন বেড়েছে ১০ পাউন্ড। এই উচ্চ রক্তচাপ ও বাড়তি ওজন ডায়েট আর ব্যায়াম করে কমাতে না পারলে আমাকে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ওষুধ খাওয়া শুরু করতে হবে। আমার নিরামিষভোজী ইন্ডিয়ান চিকিৎসক স্বপ্ন শাহ আমাকে আমিষ ছেড়ে নিরামিষ আহারের পরামর্শ দিলেন। গরুর মাংসের কালা ভুনা, চিকেন ফ্রাই, গলদা চিংড়ি আর রুই মাছের দোপিঁয়াজি খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে—চিকিৎসকের দেওয়া এই বিশেষ ব্যবস্থাপত্র চট করে মেনে নেওয়া খুব সহজ নয়। তবুও বেঁচে থাকার অন্তিম বাসনায়, ঘাসপাতা খাওয়ার নিরামিষ জীবনে একটু একটু করে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা শুরু করেছি। সঙ্গে সকালের প্রিয় আরামের ঘুম জলাঞ্জলি দিয়ে প্রাতর্ভ্রমণও শুরু করেছি। যদি তাতে আরও এমনি কিছু বাড়তি হাসিখুশি আনন্দময় দিন, আরও কিছু জন্মদিন পালন করার সুযোগ পাওয়া যায়। রবিঠাকুরের সেই বহুল বলা কবিতার দুটি চরণ আজ আবারও বলতে ইচ্ছে করছে—
‘মরিতে চাহি না আমি এই সুন্দর ভুবনে,
মানবের মাঝে বাঁচিবারে চাই!’
গতকাল থেকে আমার ফেসবুকের অসংখ্য ভার্চুয়াল বন্ধুদের কাছ থেকে এত্ত এত্ত জন্মদিনের বার্তা, শুভকামনা, ভালোবাসার বাণী আমার ফেসবুকের ওয়ালে, মেসেঞ্জারে এসে জমা হয়েছে—আমি তা দেখে অভিভূত। আমার মত সামান্য একজন মানুষকে এত মানুষ জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে, বিষয়টি আমার জন্য দারুণ আনন্দের। ভালোবাসা পেতে কে না ভালোবাসে? অবশ্য এর অনেকটা ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতার পাবে ‘ফেসবুক’। তা না হলে পৃথিবীর কোন প্রান্তে, কার কখন জন্মদিন হচ্ছে, বিয়ে বার্ষিকী হচ্ছে বা কে তার জীবনে একটি সাফল্যের মুখ দেখেছে এসব খবর কে রাখত? কারইবা গরজ পড়েছে একটি চিঠি লিখে, ই-মেইল করে, টেক্সট মেসেজ লিখে বা ফোন করে কোন এক ভার্চুয়াল বন্ধুকে শুভেচ্ছা বা অভিনন্দন জানানোর। আজকাল ঘরের মানুষ বা কাছের মানুষেরই সময় হয় না পাশে বসে দুটো কথা বলার। সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। তাই যারা এই ‘ফেসবুক’ কালচারের কুপ্রভাব নিয়ে এর নির্মাতা মার্ক জাকারবার্গকে যতই গালমন্দ করুক না কেন, আমি তাদের দলের নই। আমি জাকারবার্গ সাহেবকে বাহবা না দিয়ে পারি না। দূরকে আপন করতে একমাত্র ফেসবুকই পেরেছে। এখন কে, কীভাবে এটি থেকে কী এবং কতটা গ্রহণ করবে, তার পুরোটাই নির্ভর করে ব্যক্তি মানসিকতার ওপর। ফুল থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে; ভ্রমর সংগ্রহ করে বিষ। যার যেটা প্রয়োজন। এখানে ফুল বেচারি নিতান্তই নিরপেক্ষ, নির্দোষ।
যাই হোক, আবার জন্মদিনের সাতকাহনে ফিরে আসি। আমি সব সময় ব্যক্তিগতভাবে সব বন্ধুদের কথার উত্তর দিতে ভালোবাসি। কিন্তু অসুস্থ বোধ করায় বেশ কদিন ধরে লেখালেখি আর ফেসবুক থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছি। গত মাস থেকে নিজের চোখে দেখা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আর সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর স্মৃতি নিয়ে একটি লেখা শুরু করেছিলাম। সেই লেখাটি অসমাপ্ত পড়ে আছে। লিখতে শুরু করেছিলাম ‘ক্যানভাস গল্প সংকলন’–এ জমা দেওয়ার জন্য তিন হাজার শব্দের একটি বড় গল্প। ১৭ নভেম্বরের মধ্যে এটি জমা দিতে হবে। কিন্তু শুরুতেই গল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। তাকে আলোর মুখ দেখাতে পারব কিনা জানি না। পেনসিল প্রকাশনীর গল্প সংকলনে দেওয়ার জন্য একটি গল্প শেষ করেও ইউনিকোড থেকে বিজয়ের সুতন্বী এমজে’তে কম্পোজ করা গেল না বলে শেষ পর্যন্ত লেখাটি আর পেনসিলে পাঠানো হল না। পাঠাতে হবে প্রথম আলোর উত্তর আমেরিকা সংস্করণের জন্য সাপ্তাহিক লেখা। এই লেখাটির জন্য কেমন করে যেন নিজের মনে একটি দায়বদ্ধতা এসে গেছে। কেউই জোর করছে না; কিন্তু মনের গরজেই লিখতে ইচ্ছে করে। তবে লেখক ও সম্পাদক আহমাদ মাযহারের কাছে লেখা পাঠানোর বিড়ম্বনা আছে। ওনার ঝানু চোখে ভাষার গরমিল ও বানানের হেরফের ফাঁকি দেওয়া কঠিন। সুতরাং চোখ খোলা রেখে সতর্কতার সঙ্গে লিখতে হবে। প্রমিত বানান, ভাষারীতি নিয়ে এখনো খাবি খেতে হচ্ছে।
এবার আসি আমার পেছনে ছায়ার মত লেগে থাকা নিঃশব্দ এক আততায়ীর গল্পে, যে আমার মনের শান্তি, বেঁচে থাকার সম্ভাবনা সবকিছুতেই তার কালো ছায়া দিয়ে ঢেকে দিতে চাইছে। এর গাল ভরা নামটি হল ‘হাইপারটেনশন’। তবে আমরা সবাই তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলেই চিনি। এই হাইপারটেনশনের সঙ্গে আমার বসবাস দীর্ঘদিনের। প্রথম ধরা পড়ে ২০০৮ সালে। উচ্চ রক্তচাপ একটি অতি পরিচিত সমস্যা। আমাদের চারপাশের অনেকেই এই অসুখে ভুগছেন। এই উচ্চ রক্তচাপকে একটি নীরব ঘাতক হিসেবেই অভিহিত করা যায়।
লম্বা সময় ধরে এই নীরব ঘাতকের সঙ্গে বসবাস করলেও সে আমাকে কখনো কাবু করতে পারেনি। কারণ, আমার সুনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার কারণে সে আমাকে ঘায়েল করার তেমন সুযোগ কখনো পায়নি। ইয়োগা, নিয়মিত হাঁটা, পরিমিত খাবার—এই সুশৃঙ্খল জীবনযাত্রা আমাকে সব সময় একটি রেললাইনের ট্রাকের মতোই জীবনের ট্রাকে সচল রেখেছে। কিন্তু যখনই এই ট্র্যাকচ্যুত হয়ে আমি এলোমেলো হই, বেহিসেবি বা লাগামছাড়া হই, তখনই এই নীরব আততায়ী তার মারণাস্ত্র হাতে আমার পিছু ধাওয়া করে।
আজকের দিনে আমার মত অনেক মানুষই কম বেশি উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন। এটি হল এমন একটি রোগ, যখন কোন ব্যক্তির রক্তের চাপ সব সময়েই স্বাভাবিকের চেয়ে ঊর্ধ্বে থাকে। এই উচ্চ রক্তচাপ বর্তমানে একটি আলোচিত বিষয়। সাধারণত ব্লাড প্রেশার ৯০ থেকে ১৪০–এর ওপরে গেলে উচ্চ রক্তচাপ বলে। উচ্চ রক্তচাপ আলাদাভাবে কোন অসুস্থতা না হলেও এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ওপর স্বল্প থেকে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। এর ফলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, চোখের ক্ষতি, ব্রেন এবং কিডনির ক্ষতি হতে পারে। কাজেই কেবল ওষুধের মাধ্যমেই যে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, এমনটি নয়। বরং এমন কিছু কাজ আছে, যা করলে ওষুধ ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
একজন ভুক্তভোগী হিসেবে এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে ওষুধ ছাড়া বা ওষুধের পাশাপাশি কী করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তার কিছু নমুনা এখানে সবার জন্য তুলে ধরছি—
লবণ কম: উচ্চ রক্তচাপের জন্য ভীষণ বিপজ্জনক হলো লবণ। তাই দৈনন্দিন খাবারে লবণের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে। লবণাক্ত খাবার যতটা সম্ভব কম খাওয়া যায়, ততই ভালো। উচ্চ সোডিয়ামযুক্ত ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন। এভাবে নিয়মিত করলে দেখবেন উচ্চ রক্তচাপ একেবারেই কমে গেছে।
হালকা ব্যায়াম: ব্যায়াম, ইয়োগা, হাঁটাহাঁটি হতে পারে আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের আরেকটি চমৎকার কৌশল। সঠিক খাদ্যাভ্যাস আর নিয়মিত ব্যায়াম একসঙ্গে শুধু শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেই সাহায্য করে না, একই সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনাও কমিয়ে আনে। আধা ঘণ্টা ব্যায়াম উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে দেয় ৬ থেকে ৮ ইউনিট। এ ক্ষেত্রে মেডিটেশনও রক্তচাপ কমায়। উন্মুক্ত বাতাসে অন্তত পাঁচ মিনিট ধীরে ধীরে ও দীর্ঘ দম নিলে রক্তচাপ কমে।
চিনি বা মিষ্টি: মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খান। এ ছাড়া ডিম, দুধ, মাংস খাওয়ার পরিবর্তে বেশি করে শাকসবজি খান। এতে করেও উচ্চ রক্তচাপ কমবে।
ক্যাফেইন: উচ্চ রক্তচাপ থেকে বাঁচতে ক্যাফেইন জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। কেননা ক্যাফেইন নার্ভাস সিস্টেমকে উত্তেজিত করে। ফলে হার্টবিটের পাশাপাশি রক্তচাপও বেড়ে যায়। কাজেই কফি পান একেবারেই এড়িয়ে চলুন। তবে চা খাওয়া যেতে পারে দৈনিক তিন কাপ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক তিন কাপ চা ৬ সপ্তাহের মাথায় ৭ পয়েন্ট রক্তচাপ কমায়।
ফলমূল: বেশি করে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল খান। কেননা এতে ফাইবার থাকায় তা পরিপাক অন্ত্রকে পরিষ্কার রাখে। ফলে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ভেষজ: কিছু কিছু ভেষজ বিশেষ করে রসুন, হলুদ, আদা, গোলমরিচ, অলিভ অয়েল, বাদাম প্রভৃতি উপাদানগুলো রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
ধূমপান, মদপান: প্রতিদিনের কিছু বাজে অভ্যাস যেমন ধূমপান, মদপান ছেড়ে দিন। কেননা এগুলো উচ্চ রক্তচাপ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
উষ্ণ স্নান: রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ১৫ মিনিট ধরে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। দেখা গেছে, এতে শুধু কয়েক ঘণ্টাই নয়, বরং সারা রাতেও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ সাধারণত ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাস, বাড়তি ওজন এবং জীবনযাপন পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে। তাই এসব বিষয়ের যথাযথ ও নিয়মিত সঠিক পরিচর্যা আর অভ্যাস গড়ে তুলে উচ্চ রক্তচাপকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এভাবে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করলে এই নীরব ঘাতককে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব নয়।
চিকিৎসকেরা বলেন, হাই ব্লাড প্রেশার থাকা শরীরের পক্ষে বেশি ক্ষতিকারক। এতে হার্ট অ্যাটাক, সেরেব্রাল অ্যাটাক বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যাঁদের হাই ব্লাড প্রেশার আছে নিয়ম করে ওষুধ খেলে ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করলে তা নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে। আমরা অনেকেই অনেক কিছু জানি। কিন্তু পালন করি না। তবে এটি আমার পরিচিত, বন্ধু-বান্ধবের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
আবার কিছু খাবার আছে যেগুলো নিয়মিত খেলে কমে যেতে পারে উচ্চ রক্তচাপ। চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেই খাবারগুলো—
আঙুর: পটাশিয়াম প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক উপাদান, যা কিডনি থেকে সোডিয়াম নিঃসরণ করে ও রক্তনালি শিথিল করে দেয়। পটাশিয়াম ও ফসফরাসে পরিপূর্ণ আঙুর উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে।
কলা: আগেই বলা হয়েছে, কলা উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে। একটি কলায় ৪৫০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে। তাই প্রতিদিন কলা খেলে এই সমস্যা ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে।
পেঁয়াজ: পেঁয়াজে রয়েছে অ্যাডেনোসিন। এটি পেশি শিথিল করে। হাইপারটেনশনের রোগীদের চিকিৎসায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখে পেঁয়াজ। কাঁচা পেঁয়াজ রস বানিয়েও খেতে পারেন। রসের স্বাদ ভালো না লাগলে তাতে সামান্য মধু মেশাতে পারেন।
রসুন: ধমনি ও শিরায় জমে থাকা কোলেস্টেরল গলিয়ে দিতে সাহায্য করে রসুন। এটি রক্তের প্রবাহ বাড়ানো ও রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। তাই প্রতিদিন এক কোয়া রসুন চিবিয়ে খেলে ভালোই কাজ হয়।
ডাবের পানি: ডাবের জলে রয়েছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি ও অন্যান্য নিউট্রিয়েন্টস্। এই উপাদানগুলি উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে।
তরমুজ: তরমুজে আছে আরজিনাইন। এটি একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে ফেলতে পারে।
ধনেপাতা: প্রচুর পরিমাণে বায়োঅ্যাকটিভ রয়েছে ধনে পাতায়। যেমন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট, অ্যান্টিইনফ্লেমেটারি ও হতাশা কমানোর উপাদান। তাই ধনেপাতা খেলে কমে যেতে পারে ডায়বেটিস, কোলেস্টেরলের সমস্যাও।
পাতিলেবু: ভিটামিন সি’তে ভরপুর পাতিলেবু হৃদ্যন্ত্রের সূক্ষ্ম নলগুলির শক্তি বাড়ায়। এতে হাইপারটেনশনও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
স্বাভাবিক রক্তচাপ হল সেই বল, যার সাহায্যে রক্ত শরীরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছায়। রক্তচাপের কোনো একক নির্দিষ্ট মাত্রা নেই। বিভিন্ন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে একেকজন মানুষের শরীরে রক্তচাপের মাত্রা ভিন্ন ও একই মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে স্বাভাবিক এ রক্তচাপও বিভিন্ন রকম হতে পারে। উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, অধিক পরিশ্রম ও ব্যায়ামের ফলে রক্তচাপ বাড়তে পারে। ঘুমের সময় বিশ্রাম নিলে রক্তচাপ কমে যায়। সাধারণত বয়স যত কম, রক্তচাপও তত কম হয়। যদি কারও রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি হয় এবং অধিকাংশ সময় এমনকি বিশ্রামকালীনও বেশি থাকে, তবে ধরে নিতে হবে, তিনি উচ্চ রক্তচাপের রোগী।
চিকিৎসকদের মতে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ চারটি অঙ্গে মারাত্মক ধরনের জটিলতা হতে পারে। যেমন- হৃৎপিণ্ড, কিডনি, মস্তিষ্ক ও চোখ।
কী কী কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয় তা আমরা সঠিকভাবে হয়তো জানি না। বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের তেমন কোনো লক্ষণ থাকে না। আমাদের আশপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন কিন্তু তারা নিজেরা সেটা জানেন না। বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, অন্য কোনো রোগের জন্য চিকিৎসা নিতে গিয়ে অথবা দীর্ঘদিনের উচ্চ রক্তচাপ থেকে কোন একটা জটিল বা খারাপ কিছু হওয়ার পরেই ধরা পড়ে এই উচ্চ রক্তচাপের ব্যাপারটা। এ জন্য একে ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়ে থাকে।
অনেকের ক্ষেত্রে অবশ্য মাথা ব্যথা বা ভার লাগা, শরীর খারাপ লাগা ইত্যাদি দেখা যায়। এক অর্থে তাদের ভাগ্য ভালো, কারণ তাদের ক্ষেত্রে প্রথম দিকেই রোগটা ধরা পড়ে। রক্তচাপ অনেক বেশি বেড়ে গেলে আরও কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে। যেমন—মাথা ব্যথার পাশাপাশি চোখে ব্যথা বা ঝাপসা দেখা, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া অথবা নাক দিয়ে রক্ত পড়া। ডাক্তারি ভাষায় একে ম্যালিগন্যান্ট হাইপারটেনশন বলে। সে ক্ষেত্রে দেরি না করে হাসপাতালে ছোটা উচিত।
বংশানুক্রমিক বলে একটি প্রচলিত কথা আছে। আমরা অনেকেই জানি এমন অনেক রোগ আছে যেগুলো আমরা বংশপরম্পরায় পেয়ে থাকি। অনেক ভালো গুণাবলি, মেধা, ভালো অভ্যাসও আমরা আমাদের পূর্বপুরুষের জিন থেকে বহন করি। এই উচ্চ রক্তচাপেরও একটি বংশগত ধারাবাহিকতা আছে। যদি বাবা-মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে সন্তানেরও উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই আমাদের বাবা-মায়ের ভালো গুণাবলির পাশাপাশি তাদের এই সমস্যাগুলো আমরা বহন করছি কিনা, সে ব্যাপারে আমাদের সবারই সজাগ হওয়া প্রয়োজন।
আসুন যে কদিন বাঁচি, আনন্দে বাঁচি। সুস্থভাবে বাঁচি। নীরব বা সরব ঘাতককে বুড়ো আঙুল দেখাই!