৫৬ বছর পর কারামুক্তি
আমেরিকার মিশিগান অঙ্গরাজ্যে ৫৬ বছর কারাবাসের পর মুক্তি পেয়েছেন ৭৪ বছর বয়সী শেলড্রি ট্রপ। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি মুক্তি পান। ১৯৬২ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে খুনের দায়ে শেলড্রি ট্রপকে বিনা প্যারোলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন জন এফ কেনেডি। এর পর আমেরিকা পেয়েছে আরও দশজন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু শেলড্রি ট্রপের দেখা হয়নি মুক্ত আকাশ। অবশেষে দীর্ঘ এ কারাজীবনের শেষ হলো তাঁর। মুক্তির পরপরই দিনটি উদ্যাপনের জন্য ভাইকে নিয়ে শেলড্রন ট্রপ ঢুকে পড়েন রেস্তোরাঁয়।
আদালতের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬২ সালে ট্রপ ৫০ বছর বয়সী চার্লস ডেভিসকে তাঁর নিজ বাড়িতে রান্না করার ছুরি দিয়ে হত্যা করেন। ১৭ বছর বয়সী ট্রপ আদালতের সামনে অপরাধের কথা স্বীকার করেন। সে সময় তিনি আদালতকে বলেছিলেন, হত্যার দিন তিনি ডেভিসের বাড়িতে গিয়েছিলেন শুধু কিছু টাকার জন্য, হত্যার উদ্দেশ্যে নয়। ডেভিসের শোয়ার ঘরে ড্রেসারে কিছু ডলার পান তিনি। কিন্তু তা নেওয়ার সময় দেখে ফেলেন ডেভিস। এরপর দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ৫০ বছর বয়সী ডেভিস ১৭ বছর বয়সী ট্রপকে অনেক মারধর করেন। তখন ট্রপ রান্নাঘরের একটি ছুরি দিয়ে চারবার ডেভিসকে আঘাত করেন। এতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
ট্রপের মানসিক সমস্যা ছিল ছোটবেলা থেকেই। আদালতের তথ্যমতে, হত্যার দিন ট্রপ পন্টিয়াক মিশিগানের মানসিক হাসপাতাল থেকে পলায়ন করেন। মানসিক হাসপাতালে তাঁকে ইলেকট্রোসক ও হাইড্রোথেরাপি দেওয়া হতো। তাঁর মানসিক সমস্যার কারণ হিসেবে জানা যায় অনিরাপদ ছোটবেলার কথা। ট্রপকে তাঁর বাবা ছোটবেলা থেকেই অনেক শারীরিক অত্যাচার করতেন। তাঁর বোন আদালতকে জানান, তাঁদের বাবা ট্রপকে হাতের কাছে যা আছে তাই দিয়ে সব সময় শারীরিক নির্যাতন করতেন। এতে কিশোর ট্রপ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সবকিছু জেনেও তৎকালীন আদালত ১৭ বছর বয়সী শেলড্রি ট্রপকে বিনা প্যারোলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এর অর্থ হচ্ছে, আমৃত্যু কারাভোগ করতে হবে ট্রপকে।
২০১২ সালে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট কোন কিশোর-কিশোরীকে বিনা প্যারোলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া অসাংবিধানিক বলে আদেশ দেন। এ আদেশের ভিত্তিতেই ট্রপের মামলাটি আদালতে পুনর্বিবেচনার জন্য তোলা হয়।
মিশিগানের সংশোধনাগার বিভাগের মুখপাত্র ক্রিস গজ বলেন, আদালত সবকিছু বিবেচনা করে পুনরায় তাকে ৪০-৬০ বছর সাজা দেন। যেহেতু ট্রপ ৫৬ বছর জেল খেটেছিলেন এবং জেলখানায় ভালো ব্যবহারের জন্য ১০ বছরের ক্রেডিট পেয়েছিলেন, তাই আদালত ট্রপকে অবিলম্বে মুক্তির আদেশ দেন।