শরণার্থীদের আশ্রয়দাতা হিসেবে আমেরিকার সুনাম ছিল। কিন্তু এখন সেই সুনামে ছেদ পড়েছে। গত অর্থবছরে আমেরিকা মাত্র ২২ হাজার ৪৯১ জন শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, যা ৪০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ১ অক্টোবর ২০১৮ অর্থবছরে গ্রহণ করা শরণার্থীর সংখ্যা সম্পর্কিত এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া ২০১৮ অর্থবছরে আমেরিকা ২২ হাজার ৪৯১ জন শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। এ সংখ্যা গত অর্থবছরের (২০১৭) অর্ধেকেরও কম। ওই অর্থবছরে আমেরিকা ৫৩ হাজার ৭১৬ জন শরণার্থীকে গ্রহণ করেছিল। আর ২০১৬ অর্থবছরে গ্রহণ করেছিল ৮৪ হাজার ৯৯৪ জন শরণার্থীকে। এ সংখ্যা ১৯৭৭ সালের পর সর্বনিম্ন।
এত কমসংখ্যক শরণার্থী গ্রহণের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘বিদেশি সন্ত্রাসীদের প্রবেশ থেকে আমেরিকাকে রক্ষা’ শীর্ষক নির্বাহী আদেশ ১৩৭৮০ অনুযায়ী ব্যাপক বাছাই প্রক্রিয়ার সক্ষমতার কারণেই শরণার্থী গ্রহণের সংখ্যা কমেছে।’
এই নির্বাহী আদেশটি গত বছরের মার্চে জারি করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা ২০১৭ সালের জুন থেকে আংশিকভাবে কার্যকরের আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট। এই আদেশে ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেন থেকে ৯০ দিনের জন্য যেকোনো ধরনের শরণার্থী গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়। তবে এসব দেশের নাগরিক, যাদের সঙ্গে আমেরিকার কোনো নাগরিক বা প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কের প্রমাণ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। এই নির্বাহী আদেশের পরিপ্রেক্ষিতেই সীমান্তে অভিবাসনপ্রত্যাশী ও শরণার্থীদের আরও কঠোরভাবে যাচাই-
বাছাইয়ের নীতি নেওয়া হয়। জাতীয় ও জননিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে এ কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়। এই নিরাপত্তা প্রক্রিয়ার কারণেই আগের চেয়ে এখন বেশি সময় লাগে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ছয়টি দেশ থেকে ৫০০ জনেরও কম শরণার্থী গ্রহণ করেছে আমেরিকা। সবচেয়ে বেশি শরণার্থী গ্রহণ করা হয়েছে কঙ্গো থেকে। দেশটি থেকে আসা ৭ হাজার ৮৭৮ জন শরণার্থীকে গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে ৩ হাজার ৫৫৫, ইউক্রেন থেকে ২ হাজার ৬৩৫ ও ভুটান থেকে ২ হাজার ২২৮ জন শরণার্থীকে গ্রহণ করা হয়েছে।
মজার বিষয় হচ্ছে শরণার্থী গ্রহণ সীমিতকরণের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন খোদ প্রেসিডেন্ট ঘোষিত লক্ষ্যকেও ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৮ অর্থবছরে ডোনাল্ড ট্রাম্প শরণার্থী গ্রহণের সংখ্যা ৪৫ হাজারে নামিয়ে আনার কথা বলেছিলেন। আর ২০১৯ অর্থবছরে এটি কমিয়ে ৩০ হাজারে সীমিত করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এ ক্ষেত্রে বিরাট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। তারা এ বছরের জন্য ঘোষিত লক্ষ্যের অর্ধেক অর্জন করেছে।
অবশ্য এই সংখ্যাকে মানবিকতায় আমেরিকার অবদান পরিমাপের একমাত্র মানদণ্ড ভাবা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তিনি বলেন, ‘শরণার্থী গ্রহণের পরিমাণ কমে যাওয়া দিয়ে বিচার করে আমেরিকার মানবিক কার্যাবলিকে পরিমাপ করা উচিত হবে না। এটিই একমাত্র মানদণ্ড নয়। সারা বিশ্বে মানবতার কল্যাণে আমরা নানা ধরনের কাজ করছি। সংকটে থাকা অনেক দেশে আমরা বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’