হেলিকপ্টারের শব্দে অতিষ্ঠ নিউইয়র্কবাসী

করোনা মহামারির কারণে ঘরবন্দী জীবনে একধরনের আতঙ্কের পাশাপাশি কিছুটা স্বস্তিও ছিল নিউইয়র্কবাসীর। কারণ, মাথার ওপর ছিল না হেলিকপ্টারের ঘূর্ণির শব্দ। করোনা মহামারি কাটিয়ে মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতেই আবারও সেই পুরোনা সমস্যা ফিরে এসেছে তাঁদের জীবনে।

অত্যাবশ্যকীয় নয়, এমন চপার ফ্লাইট বন্ধের দাবিতে সোচ্চার মেলিসা এলস্টেইন বলেন, ‘বড় হেলিকপ্টার উড়ে গেলেই আমার অ্যাপার্টমেন্ট কেঁপে ওঠে।’
 
৫৬ বছর বয়সী এই ব্যক্তি এএফপিকে বলেন, এসব হেলিকপ্টার বায়ু দূষণ করে। শব্দ দূষণ করে, যা আমাদের স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
নিউইয়র্কের আকাশে নিয়মিতই হেলিকপ্টার ঘুরে বেড়ায়। কারণ, অনেক পর্যটক অল্প সময়ের মধ্যে শহরের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে ব্যয়বহুল আকাশভ্রমণকে বেছে নেন।
এ ছাড়া নিউইয়র্কের অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি রাস্তার যানজট এড়াতে অনেক সময় এই হেলিকপ্টারে চড়ে বসেন।

গত বছর এই নগরের কর্তৃপক্ষ তাদের হটলাইনে হেলিকপ্টারের কারণসৃষ্ট শব্দদূষণ নিয়ে ২৫ হাজার ৮২১টি অভিযোগ পেয়েছে। এসবের বেশির ভাগই এসেছে ম্যানহাটান থেকে ২১ হাজার ৬২০। অথচ ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৩৫৯।

এই মাসের শুরুর দিকে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের আইনসভা এই দূষণরোধে একটি বিল অনুমোদন করে। সেখানে বলা হয়েছে, হেলিকপ্টার ‘অযথা’ শব্দদূষণ করলে প্রতিষ্ঠানকে দিনে ১০ হাজার ডলার জরিমানা করা যাবে।

নিউইয়র্ক সিটির গভর্নর ক্যাথি হচুল এটিতে স্বাক্ষর করলে এটি হবে হেলিকপ্টারের সৃষ্ট শব্দদূষণ মোকাবিলায় প্রথম রাষ্ট্রীয় আইন।

বিলটির পৃষ্ঠপোষকতাকারী সিনেটর ব্র্যাড হোয়েলম্যান বলেন, হেলিকপ্টারের অবিরাম শব্দ এবং কম্পনের কারণে অনেক বাসিন্দা ঘরে বসে স্বস্তিতে কাজ করতে পারেন না, জলাধারের পাশে হাঁটাটা পর্যন্ত উপভোগ করতে পারেন না, এমনকি শিশুরা ঘুমাতেও পারে না।

গাড়ির সঙ্গে তুলনা করে ব্র্যাড হোয়েলম্যান বলেন, একটি গাড়ির তুলনায় একটি হেলিকপ্টার প্রতি ঘণ্টায় ৪৩ গুণ কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গমন করে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘হেলিকপ্টারের শব্দ শুধু বিরক্তিকরই নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর।’

অত্যাবশ্যকীয় নয়, এমন হেলিকপ্টারের ফ্লাইট নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো স্বেচ্ছাসেবকদের সংগঠন স্টপ দ্য চপের প্রেসিডেন্ট অ্যান্ডি রোজেনথাল আইন প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রথম ধাপ হিসেবে ভালো উদ্যোগ। কিন্তু আমরা যা চাচ্ছি, এটি তা নয়। এর জন্য আরও লড়তে হবে।’

নিউইয়র্কে তিনটি ব্যস্ত হেলিপোর্ট রয়েছে। এর মধ্যে দুটি হাডসনের মিডটাউনে ও ইস্ট রিভারে। এই দুটি করপোরেট ও চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনা করে। আর অন্যটি ওয়াল স্ট্রিটের কাছে, যেটি পর্যটকদের ফ্লাইট পরিচালনা করে।

কোনো পর্যটক যদি নিউইয়র্ক সিটিকে আকাশ থেকে দেখতে চান, তাহলে প্রতি ১৫-২০ মিনিটের জন্য তাকে গুনতে হবে ২০০ ডলার।

অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৭ সালে তৎকালীন মেয়র বিল ডি ব্লাসিওর প্রতিবছর পর্যটক ফ্লাইটের সংখ্যা ৬০ হাজার থেকে কমিয়ে ৩০ হাজার করতে এই পরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একমত হয়েছিল। তারা ম্যানহাটানের চারপাশের নদীগুলোর ওপর দিয়ে নিউইয়র্ক সিটি ছেড়ে যাওয়া রাইডগুলোর উড্ডয়ন সীমিত করে।

তবে নিউ জার্সি থেকে ছেড়ে আসা হেলিকপ্টারগুলোর সেন্ট্রাল পার্কসহ ম্যানহাটানের ওপর দিয়ে সাইটসিইংয়ের অনুমোদন ছিল। নিউইয়র্ক সিটি থেকে ছেড়ে যাওয়া কমিউটার ফ্লাইটগুলোকে ভবনের ওপর দিয়ে সরাসরি উড়ে যাওয়ারও অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এলস্টেইন বলেন, ‘এটি এমন একটি শিল্প, যার অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়। গুটি কয়েক মানুষের সুবিধার জন্য এই শিল্প।’

যদিও নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের কেউ কেউ এই শব্দের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। তারা আমেরিকার ব্যস্ত বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক এবং পর্যটন রাজধানীতে বসবাসের জন্য এটিকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে।

ম্যানহাটানের দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দা মার্ক রোবার্জ হেলিপোর্টের পাশেই থাকেন। তাঁর কাছে হেলিকপ্টারের এই শব্দ একটি ব্যাকগ্রাউন্ড শব্দের মতো। এটিকে একধরনের অভিজ্ঞতার অংশ বলে মনে হয় তাঁর কাছে।