হাসপাতাল ছেড়ে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাসপাতাল থেকে হোয়াইট হাউসে ফিরে গেছেন। তিনি দ্রুত নির্বাচনী প্রচারে নামছেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। ট্রাম্পের এমন কাজ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছে।
করোনায় সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ট্রাম্প। হাসপাতালে ভর্তির তিন দিন পর সোমবার সন্ধ্যায় তিনি হাসপাতাল থেকে হোয়াইট হাউসে ফিরলেন।
হাসপাতাল ত্যাগ করার কিছু আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় আমেরিকার জনগণকে করোনাভাইরাস নিয়ে ভীত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপসর্গ দেখা দেয়। তাঁর শরীরে অক্সিজেন নেমে যাওয়ার কথাও পরে জানানো হয়।
সোমবার বিকেলে টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেন, তিনি আসলেই ভালো বোধ করছেন। তিনি আমেরিকার লোকজনকে ভয় না পাওয়ার আহ্বান জানান। কোভিড-১৯ যেন জনজীবনকে প্রভাবিত না করতে পারে, সে কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে আসলেই ওষুধ ও জ্ঞানের উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি নিজে ২০ বছর আগের চেয়ে ভালো বোধ করছেন।
হোয়াইট হাউসের চিকিৎসক সেইন কনলি সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপসর্গের ক্রমাগত উন্নতি ঘটেছে। এবং তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার সব সূচক অতিক্রম করেছেন।
তবে ডা. কনলি বলেছেন, এখনো বিপদের আশঙ্কা থেকে ট্রাম্প সম্পূর্ণ মুক্ত নন। চিকিৎসক দল ও নিজে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করে একমত হয়েছেন যে তিনি হোয়াইট হাউসে ফিরতে পারেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার পর নানা নাটকীয়তা চলছে। রোববারই তিনি হাসপাতালের বাইরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ভিডিওতে দেখা যায়, ট্রাম্প মাস্ক পরে গাড়িতে বসে আছেন। হাত নাড়ছেন সমর্থকদের উদ্দেশে।
ট্রাম্পের এই কাজ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছে। ট্রাম্প টুইটে পোস্ট করা ভিডিওতে বলেন, সমর্থকদের তিনি ‘সারপ্রাইজ’ দিচ্ছেন।
ট্রাম্প আরও বলেন, আক্রান্ত হয়ে কোভিড-১৯ নিয়ে তিনি অনেক কিছু জেনেছেন। অনেকটা স্কুলে গিয়ে জানার মতো করে জেনেছেন। বিষয়টি সবাইকে জানাবেন বলেও উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার কিছু পরে হেলিকপ্টারে করে ট্রাম্প ওয়াল্টার রিড হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিনি হোয়াইট হাউসে পৌঁছে যান।
হোয়াইটে অবস্থানরত ফার্স্ট লেডি মেলেনিয়া ট্রাম্প নিজেও করোনায় সংক্রমিত। তিনিও ভালো বোধ করছেন বলে জানানো হয়েছে।
এ পর্যন্ত হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কেইলি ম্যাকেনানিসহ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছের অন্তত ১১ জনকে করোনায় সংক্রমিত বলে শনাক্ত করা হয়েছে।
হাসপাতাল ত্যাগের আগে ট্রাম্প আরেক দফা টুইট করেন। এই টুইটে ট্রাম্প বলেন, তিনি শিগগিরই প্রচারে ফিরবেন।
‘ফেইক নিউজ’ কেবলই ‘ফেইক জনমত জরিপ’ প্রচার করছে বলে ট্রাম্প টুইটে উল্লেখ করেন।
করোনায় সংক্রমিত হওয়া ও অসুস্থতা নিয়েও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চতুর প্রচারণা চালিয়েছেন বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে কথা উঠেছে। ট্রাম্পের শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিকিৎসক এক কথা বলেছেন, চিফ অব স্টাফ বলেছেন ভিন্ন কথা।
এমনকি সোমবার সন্ধ্যায় ট্রাম্পের হাসপাতাল ছাড়ার ঘটনাকেও তাঁর প্রচারণার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কর্মদিনের শেষে এই সময়টিতে আমেরিকার লোকজন টিভির সামনে হামলে পড়েন। এমন সময় হেলিকপ্টারে হাসপাতাল ত্যাগ করা ও নিজেকে শক্তিশালী দেখানোর মধ্যে প্রচারণা কাজ করছে বলে বলা হচ্ছে।
করোনায় সংক্রামিত লোকজনের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকার নিয়ম। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তা না মানায় স্বাস্থ্যসেবীদের মধ্যেও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
কোভিড-১৯ যে মারাত্মক কোনো ভাইরাস নয়, তা প্রমাণ করার জন্যই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন করছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
করোনায় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে ২ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়ে গেছে। ৭০ লাখের বেশি মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন।