সবাইকে অন্ধকারে রেখে কী করলেন ট্রাম্প!
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়া থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন—এটা এখন পুরোনো খবর। নতুন খবর হলো, ট্রাম্প যে এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন, সেটা তাঁর প্রশাসনের কেউ টের পাননি। আইনপ্রণেতা, পেন্টাগন ও আন্তর্জাতিক মিত্রদের মোটামুটি অন্ধকারে রেখে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) পরাজিত করা হয়েছে—এ দাবি করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গতকাল বুধবার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
টুইটারে পোস্ট করা এক সংক্ষিপ্ত ভিডিওতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আইএসের বিরুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছি। আমরা তাদের পরাজিত করেছি। আমরা তাদের বাজেভাবে পরাজিত করেছি। আইএসের অধিকৃত ভূমি আমরা ফেরত নিয়েছি। এখন আমাদের সেনাদের বাড়ি ফেরার পালা।’
কবে বা কত দ্রুত তাদের ফেরত আনা হবে, ট্রাম্প সে কথা জানাননি। একাধিক সূত্র বলছে, অবিলম্বে সেনা প্রত্যাহার শুরু হবে। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যেই সব সেনা ফিরিয়ে আনা হবে। পরে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানায়, সিরিয়া থেকে সেনা ফেরত আনা শুরু হয়েছে।
সিরিয়ায় এই মুহূর্তে প্রায় দুই হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। তাদের বেশির ভাগই আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইরত স্থানীয় যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও কৌশলগত পরামর্শ প্রদানের কাজে যুক্ত। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ একমত, গত দুই বছরের অব্যাহত সামরিক তৎপরতার ফলে সিরিয়ায় একসময় আসন গেড়ে বসা আইএস পিছু হটেছে। তবে তাদের পুরোপুরি নির্মূল করা গেছে, সে কথা বলা যাবে না।
টুইটে ট্রাম্পের এমন ঘোষণা শুনে হতভম্ব মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন। তাদের হিসাব অনুযায়ী, সিরিয়ায় এখনো প্রায় ১৭ হাজার আইএস যোদ্ধা তৎপর আছে। সাম্প্রতিক সময়ে আইএস নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করছে। তাদের নেতা আবু বকর বাগদাদিও সেখানেই অবস্থান করছেন বলে সবার ধারণা।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত অস্বাভাবিক রকমের ভূরাজনৈতিক বিভক্তি সৃষ্টি করবে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করা মার্কিন বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট কুর্দি যোদ্ধাদের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তবে এসবের কিছুই বিবেচনায় নেননি ট্রাম্প। মার্কিন এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প গত মঙ্গলবার সিরিয়া বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন। পুরো সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উপস্থিত কর্মকর্তাদের তখন বলেন, ‘পুরোপুরি প্রত্যাহার। সবাই মানে সবাই।’
কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে কোনো আগাম সালা-পরামর্শ ছাড়াই শুধু টুইটারে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায় তাঁর নিজের দলের প্রবল সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাঁর মিত্র হিসেবে পরিচিত সিনেটর লিন্ডসি গ্রাহাম বলেছেন, ট্রাম্প একটি মস্ত ভুল করছেন। সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হলে লাভ হবে আইএস, সিরিয়া, ইরান ও রাশিয়ার। একই রকম কঠোর ভাষায় এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন সিনেটর মার্কো রুবিও ও সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির প্রধান সিনেটর বব কর্কার।
সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের ইচ্ছা ট্রাম্প একাধিকবার প্রকাশ করেছেন। তবে এই মুহূর্তে এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে পেন্টাগন ও ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টারা। মাত্র দুই দিন আগে সিরিয়াবিষয়ক বিশেষ রাষ্ট্রদূত জেমস জেফ্রি জানান, আইএসকে পুরোপুরি পরাস্ত না করা পর্যন্ত মার্কিন সেনারা সে দেশেই অবস্থান করবে।
সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে সবচেয়ে খুশি হওয়ার কথা তুরস্কের। জানা গেছে, গত শুক্রবার ট্রাম্প ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান টেলিফোনে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এরদোয়ান পরে বলেন, তাঁদের মধ্যে অর্থপূর্ণ কথাবার্তা হয়েছে। উল্লেখ্য, তুরস্কে বসবাসরত কুর্দিরা দীর্ঘদিন ধরে সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তুরস্কের চোখে কুর্দিরা সবাই ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ ও ‘সন্ত্রাসী’। এরদোয়ান তুরস্ক ও সিরিয়া সীমান্তে বসবাসরত কুর্দিদের বিচ্ছিন্ন রাখার লক্ষ্যে একটি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গড়ে তুলতে চান। তিনি প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, এই লক্ষ্যে তুরস্ক সিরিয়ার কুর্দিদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান শুরু করবে। এ কথা উল্লেখ করে সিনেটর মার্কো রুবিও বলেছেন, তুরস্ক যদি সিরিয়ার বিরুদ্ধে হামলা চালায়, তাহলে এই যুদ্ধ ব্যাপকতর আকার নিতে পারে।