সব বেচে দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাঁরা
দুনিয়াটা ঘুরে দেখার প্রচণ্ড ইচ্ছা যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের মাইকেল-ডেবি দম্পতির। ইচ্ছাপূরণে মাঠে নেমে গেলেন তাঁরা। প্রথমে চাকরি ছাড়লেন। এরপর ঘরবাড়ি সব বেচলেন। পাঁচ বছরে তাঁরা বিশ্বের ৮০টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। সেসব দেশের আড়াই শর বেশি শহরে ঘুরেছেন। মাইকেল ক্যাম্পবেলের বয়স এখন ৭২ আর ডেবির ৬২। তাঁরা ‘সিনিয়র নোম্যাড’ বা ‘প্রবীণ যাযাবর’ নামে ব্লগ লেখেন। ছবি আর গল্পে তুলে ধরেন নতুন নতুন জায়গার কথা।
যত সহজে বলা হলো, শুরুটা তত সহজ ছিল না। বিশেষ করে সব ছেড়ে বাকি জীবন পথে পথে ঘুরে বেড়ানোর মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তটা মাইকেল-ডেবি দম্পতি নিয়েই নিলেন। সেটা ২০১৩ সালের কথা। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তিনি পরিবার নিয়ে ফ্রান্সে থাকেন। এই বৃদ্ধ দম্পতি অনেকটাই নিঃসঙ্গ। বিশ্বভ্রমণের জন্য এটাই উপযুক্ত বলে মনে হলো তাঁদের।
যেই ভাবনা, সেই কাজ। প্রথমে এই দম্পতি চাকরি ছাড়লেন। সেখান থেকে কিছু টাকা পেলেন। কিন্তু এমন বিশাল আকারের ভ্রমণের জন্য এই অর্থ পর্যাপ্ত নয়। এরপর তাঁরা নিজেদের সহায়-সম্পত্তি সব বেচে দিলেন। মাইকেল-ডেবি দম্পতির ভাষায়, ‘সব বেচে দিলাম। কিছু জিনিস গুদামে রেখে দিলাম। আর দুজনে মিলে ভ্রমণে বের হয়ে গেলাম।’
ডেবি বলেন, ‘প্রথমবারের ভ্রমণে ছয় মাস পেরিয়ে গেল। বড় দিন আর নতুন বছরের কিছুদিন সিয়াটলে কাটিয়ে আবার বেরিয়ে গেলাম।’ এই যে সব ছেড়ে পথ পথে ঘুরে বেড়ানো, কীভাবে করেন এটা?
উত্তরে মাইকেল বলেন, ‘প্রথমে ভাবি কোথায় কোথায় যাব। সে–সংক্রান্ত খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করি। যাত্রাপথটা ঠিক করি। প্রয়োজনীয় অন্য জিনিসগুলোও চূড়ান্ত করে নিই।’ এই দম্পতি জানালেন, থাকার জন্য এক রাতে ৯০ ডলারের বেশি খরচ করেন না তিনি। অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকেন, সেখানেই কেনাকাটা করে রান্নাবান্না করেন। বাকি সময়টা ঘুরে বেড়ান দুজনে মিলে।
নিজের বাড়ি বেচে অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকতে কষ্ট হয়?—জানতে চাইলে মাইকেল-ডেবি একসঙ্গে বলেন, ‘বাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া সত্যিই কঠিন। তবে আমরা মনে করি, যেখানে আমরা আছি, বালিশ আছে; সেটাই আমাদের বাড়ি। ৪০ বছরের দাম্পত্য আমাদের। একসঙ্গে ভ্রমণ আমাদের আনন্দ দেয়। আমরা একই পথের যাত্রী। আমাদের ভাবনা একই ধরনের। এ জন্যই হয়তো আমরা এমন পথ বেছে নিতে পেরেছি। বিষয়টা একটা দলগত খেলার মতো।’
ভ্রমণের জন্য বৃদ্ধ বয়সটাই ভালো বলে মনে করেন মাইকেল ক্যাম্পবেল। তাঁর ভাষায়, ‘ওই বয়সে অনেক দায়িত্ব পালনের বিষয় থাকে না। কম বয়সে ছুটিতে বেড়াতে গেলে একটা তাড়া থাকত, তাড়াতাড়ি সব দেখে বাড়ি ফিরতে হবে। এখন আর সেটা নেই। আমাদের ভালো লাগলে আমরা ঘুরতে বের হই। ভালো না লাগলে যেখানে উঠি, সেখানেই সারাটা দিন কাটিয়ে দিই। গেম খেলি। বই পড়ি। আমরা আমাদের ভ্রমণের কথা ব্লগে লিখি। প্রচুর মানুষ আমাদের এখানে কমেন্ট করেন। আমাদের কাছে ই-মেইল পাঠান। তাঁরা আমাদের উৎসাহ দেন। আবার অনেকে আমাদের কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে ভ্রমণের পথে যাত্রা করেন। পুরো বিষয়টাই আনন্দের।’
চাইলেই কেউ তাদের মতো এমন ভ্রমণে নেমে যেতে পারেন? এই প্রশ্নের জবাবে এই দম্পতি বলেন, ইচ্ছাশক্তির কোনো বিকল্প নেই। এ ছাড়া পরিকল্পনা লাগবে। ভালো অর্থকড়ি লাগবে। তবেই নিশ্চিতে মনের সুখে ঘুরে বেড়ানো যাবে। তাঁদের এই ভ্রমণবিলাস দেখে ভাড়ায় বসতবাড়িতে থাকতে দেওয়াসংক্রান্ত অ্যাপ এয়ারবিএনবি তাদের খণ্ডকালীন কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। ঘুরতে ঘুরতে যখন আর ভালো লাগে না, তখন এখানে কাজ করেন। কিছুদিন পর হাঁপিয়ে ওঠেন। এরপর আবার নতুন কোনো জায়গার উদ্দেশে রওনা হন। তাঁদের ভাষায়, ভ্রমণের নেশা অন্য রকম। এর মাদকতা সরানো বড় কঠিন। তবে এই কঠিন কাজটা বড় ভালোবেসে করেন তাঁরা।