শুধু আমেরিকায় আসতে প্রবাসী তরুণকে বিয়ে!
বাংলাদেশি তরুণকে বিয়ে করে আমেরিকায় আসেন এক তরুণী। এ দেশে আসার পর স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হয়রানির নানা অভিযোগ তোলেন। এমনকি পুলিশ কল করে স্বামীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ জানান। তরুণের অভিযোগ, কেবল মার্কিন মুল্লুকে আসতে বিয়ের মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন তাঁর স্ত্রী। এ দেশে এসে মাস দেড়েকের মাথায় তাঁকে ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন তিনি। ওই তরুণ-তরুণীর বিয়ে এবং পরবর্তী ঘটনা নিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটিতে চলছে গুঞ্জন ও আলোচনা-সমালোচনা।
জানা গেছে, গোপালগঞ্জের অধিবাসী লস অ্যাঞ্জেলেসপ্রবাসী বাংলাদেশি
বংশোদ্ভূত আমেরিকান রুমান শিকদার ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর দেশে একই জেলার মান্দারতলা এলাকার কে এম কবিরের মেয়েকে বিয়ে করেন। দুই পরিবারের সম্মতিতে তাঁদের বিয়ে হয়।
রুমান অভিযোগ করেন, বিয়ের পরপরই স্ত্রী তাঁকে আমেরিকায় ফিরে তাঁকে নেওয়ার জন্য দ্রুত আবেদন করতে চাপ দিতে থাকেন। বলেন, ‘আবেদন করে তুমি আবার দেশে চলে আসবে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করব, ইনজয় করব।’ স্ত্রীর চাপাচাপিতে রুমান বিয়ের মাত্র কয়েক দিন পর আমেরিকা ফিরে আবেদন করেন। এরপর আবার দেশে ফিরতে চাইলে স্ত্রী তাকে বাধা দিয়ে বলেন, এখন আসার দরকার নাই। তাঁর ভিসা হয়ে গেলে একবারে এসে তাঁকে নিয়ে যেতে। এভাবে কেটে যায় তিন বছর।
রুমান আরও অভিযোগ করেন, স্ত্রীর ভিসা হওয়ার পর তিনি দেশে ফিরতে চান। তখনো স্ত্রী তাঁকে বাধা দিয়ে বলেন, এখন আসর কী প্রয়োজন? তিনি তো চলেই আসবেন। এভাবে নানা ছলচাতুরী করে তাঁকে দেশে যেতে না দিয়ে আমেরিকায় আসেন তাঁর স্ত্রী। এসেই তাঁর সঙ্গে অদ্ভুত আচরণ শুরু করেন। তখন রুমানের পরিবার বুঝতে পারে, শুধু আমেরিকা আসার লোভে রুমানকে বিয়ে করেছে এই তরুণী। এসে এখন ভিন্ন পথে হাঁটছে।
রুমানের মামা লস অ্যাঞ্জেলেস কমিউনিটির পরিচিত মুখ কামাল খান অভিযোগ করেন, ‘সব প্রক্রিয়া শেষে গত ১৫ আগস্ট রুমানের স্ত্রী লস অ্যাঞ্জেলেসে আসেন। নববিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকতে বাসা ভাড়া করেন তাঁর ভাগনে। বাসায় নতুন আসবাবপত্র ও সাংসারিক জিনিসপত্র কেোকাটা করেন। আরও অনেক খরচ করে স্ত্রীর জন্য নানা আয়োজন করে। কিন্তু তাঁর স্ত্রী এখানে আসার পর বদলে যান। রুমানকে তিনি স্বামী হিসেবে কোনো পাত্তাই দিতে চাচ্ছেন না। দুজনের বোঝাপড়ার জন্য নানা চেষ্টা করে রুমান। এমনকি তাঁকে নিয়ে সম্প্রতি মেক্সিকো থেকে ঘুরে আসে। কিন্তু কিছুতেই কাজ হয়নি। এ নিয়ে আমরা আত্মীয়-স্বজনেরা উদ্বিগ্ন হয়ে হয়ে পড়ি। তাকে স্বাভাবিক করতে নানাভাবে চেষ্টা করি।’
কামাল খান বলেন, এরই মধ্যে একদিন বাসায় রুমান ও তাঁর স্ত্রীর মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এই সুযোগে মেয়েটি পুলিশে কল দেয়। পুলিশ বাসায় আসলে তিনি অভিযোগ করেন, রুমান তাঁকে মারধর করেছে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে পুলিশ তাঁর কাছে মারধরের প্রমাণ চায়। তাঁর গায়ে আঘাতের কোনো চিহ্ন আছে কিনা জানতে চায়। এ সময় তিনি পুলিশকে বলেন, মারধরের সময় তাঁর গায়ে ভারী জ্যাকেট ছিল। তাই গায়ে কোনো আঘাতের আঁচড় পড়েনি। এ সময় পুলিশ জানতে চায়, তোমরা দুজন কি একজন অন্যজনকে মেরেছো। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হবে। এ কথা শোনার পর রুমানের স্ত্রী মারধর করার কথা অস্বীকার করেন।
কামাল খান বলেন, রুমানের স্ত্রী পুলিশের কাছে আরও অভিযোগ করেছিল, তাঁর স্বামী তাঁকে বাসার ভেতরে আটকে রেখেছিল। অথচ এখানে বাইরে থেকে দরজা আটকানোর কোনো পদ্ধতি নেই। এই অভিযোগও আমলে নেয়নি পুলিশ। তখন পুলিশের কাছে তিনি আলাদা হওয়ার জন্য আবেদন করে। এ অবস্থায় পুলিশ তাঁকে স্বামীর কাছ থেকে আলাদা করে দেয়।
কামাল খান আরও বলেন, ‘আমরা অনেক আশা-ভরসা নিয়ে ভাগনেকে বিয়ে করিয়েছিলাম। এখন আমার ভাগনের জীবন কষ্টের মধ্যে পড়ল। আমরা এখন খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এই মেয়েটির পরিবারের অতীত ইতিহাসও নয়। তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এলাকায় জমি দখল ও প্রতারণাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে দেশের জাতীয় দৈনিকে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে।
কামাল খান অভিযোগ করেন, ‘আমরা জেনেছি, ওই মেয়ে তাঁর ছেলে বন্ধুর পরামর্শে এসব করছে। বিয়ে-শাদি এসব করেছে শুধু আমেরিকায় আসার জন্য। তাই এসেই তিনি এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন।’
কামাল খান দাবি করেন, ‘মেয়েটির বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশনে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আইনজীবী নিয়োগ করা হচ্ছে। দেশেও তার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এমন ঘটনায় নানা গুঞ্জন চলছে কমিউনিটিতে। অনেকে মেয়েটির পরিবার ও তাঁকে নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন। এমন ঘটনা শুধু এই পরিবারের নয়, এখানে বসবাসরত পুরো কমিউনিটির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করবে বলে তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
কামাল খান কমিউনিটির সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এ ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আর কোনো পরিবার যাতে এমন প্রতারণার শিকার না হয়—সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সম্পর্ক করতে গেলে ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে করা উচিত।