শরীর সতেজ রাখতে কাজের বিকল্প নেই
ইউরোপ, আমেরিকা কিংবা উন্নত বিশ্বের অভিবাসীরা দৈনিক কাজকর্মের মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে অভ্যস্ত বা পছন্দ করে। এ কারণে কর্মজীবীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সতেজ ও নির্মল থাকেন দীর্ঘদিন। চিকিৎসক বা মনোবিজ্ঞানীরাও সুস্বাস্থ্য ও সতেজ মনের জন্য একই পরামর্শ দেন। উন্নত বিশ্বের সচেতন নাগরিকেরা কর্মব্যস্ততার মধ্যেই নিজেকে নিয়োজিত রাখতে অধিক পছন্দ করে।
সচেতন মানুষেরা সাধারণত কাজপাগল ধরনের হয়। অবসর অলস জীবনকে তারা অভিশাপ মনে করে। কর্মের মধ্যেই তাঁরা আনন্দ-উচ্ছ্বাস খুঁজে পান। সপ্তাহের ছুটির দিনের আনন্দ উচ্ছ্বাস আলাদা। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধুদের নিয়ে আড্ডায় যায়। বারে বা রেস্তোরাঁয় বা ক্লাবে ছুটির আমেজে দিনটি কাটিয়ে দেয়।
এ ধরনের কাজপাগল মানুষেরা অনেক সময় ভেবেও পান না যে, যখন কাজ থাকবে না, তখন তাঁরা কী করবেন। অবসরে যেতে হবে। পলকে সময় যাচ্ছে। আমেরিকায় অবসরের সময়সীমা ৬২ থেকে ৬৭ বছর পর্যন্ত। কেউ চাইলে ৬২ বছর বয়সেই অবসরে যেতে পারেন। তবে ৬৭ বছর বয়সে অবসর নিলে এখানে পূর্ণাঙ্গ সুবিধা ভোগ করা যায়। ৬২ বছর বয়সে পূর্ণাঙ্গ সুবিধা ভোগ করা যায় না। শারীরিক প্রয়োজনে অনেকে ৬২ বছর বয়সে অবসরে চলে যান। অন্যথায় ৬৭ বছর বয়সে অবসরে যান। তবে পূর্ণাঙ্গ অবসরে গেলেও ২০ ঘণ্টা কাজের অনুমতি রয়েছে এ দেশে। অনেক বয়স্ক ব্যক্তিকে তাই কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। এখানকার সিনিয়র সিটিজেনেরা অর্থের প্রয়োজনে নয়, মূলত সময় কাটানোর জন্য কাজে ব্যস্ত থাকতে চান।
বয়স্কদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রোগের আধিক্য দেখা যায়। এর মধ্যে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোলস্টেরল, হাড় ব্যথা ইত্যাদি রোগ সাধারণত দেখা যায়। কোনো বয়স্ক ব্যক্তি পুরোপুরি অবসর জীবনযাপন করলে এ ধরনের অনেক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষত অতীত রোমন্থনসহ নানা প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় উচ্চরক্তচাপের মতো রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ডায়াবেটিস আক্রান্তদের নানা ধরনের সমস্যা। একই সঙ্গে নিয়মিত ক্যালরি না পোড়ার কারণে বাড়ে হৃদ্যন্ত্রসহ সংশ্লিষ্ট নানা রোগের প্রকোপ। এতে একদিকে স্বাস্থ্যহানি হয়, বাড়ে মানসিক অশান্তি, অন্যদিকে বাড়ে স্বাস্থ্য ব্যয়ও।
এসবের হাত থেকে বাঁচতে আমেরিকার মতো দেশে বয়স্ক ব্যক্তিদের নানা ধরনের সামাজিক কাজে যুক্ত থাকতে দেখা যায়। তাঁদের অনেকেই নিজ এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার মতো কাজের মাধ্যমে নিজেকে সচল রাখার চেষ্টা করছেন। মোটা অঙ্কের অর্থ অবসরভাতা হিসেবে পেলেও তাঁরা রাস্তায় ফেলে দেওয়া বোতল সংগ্রহ করে হয়তো ২০ ডলার আয় করছেন। এ ক্ষেত্রে আয়টি মুখ্য নয়, মুখ্য হচ্ছে নিজেকে সচল রাখার চেষ্টা।
আমাদের সমাজেও এমন কিছু ব্যতিক্রম লোক পাওয়া যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ছোটখাটো কাজে নিয়োজিত দেখলে অনেকের মধ্যেই অহেতুক প্রশ্নে জর্জরিত করার প্রবণতা দেখা যায়। যেমন, ভাই বয়স কত? বাচ্চারা কী করে? বাচ্চারা যখন ভালো কাজ করে, তখন আপনি কেন কাজ করছেন? অথচ যে আপনাকে প্রশ্ন করছে, তার নিজের বয়সের খেয়াল নেই। কাজে ব্যস্ত থাকলে যে মন মানসিকতা ভালো থাকে, সে বিষয়ে তাঁর ধারণাই নেই। এসব ব্যক্তির প্রশ্নে অনেকে হয়তো আহত ও বিভ্রান্ত বোধ করেন। কিন্তু এসব প্রশ্নকে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
নিজের স্বাস্থ্যের খেয়াল যেহেতু নিজেকেই রাখতে হবে, সেহেতু এ ক্ষেত্রে কারও কথা কানে না তুলে নিজেকে সচল রাখতেই সচেষ্ট থাকা উচিত।