ম্যুলার তদন্ত শেষের পথে
যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর প্রচার শিবির রাশিয়ার সঙ্গে গোপন আঁতাত করেছিল—এই অভিযোগ নিয়ে বিচার বিভাগীয় বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারের তদন্ত দেড় বছর ধরে চলছে। তদন্ত কবে শেষ হবে, সে বিষয়ে ম্যুলার নিজে কিছু বলেননি। তবে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই তদন্ত খুব শিগগির শেষ হবে। এই জল্পনাকল্পনার প্রধান কারণ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রড রোজেনস্টাইনের চাকরি থেকে অবসরের ইচ্ছা। দিনক্ষণ ঠিক না হলেও খুব শিগগির তিনি অবসরে যেতে পারেন বলে জানানো হয়েছে। এত দিন এই তদন্তের তদারকির দায়িত্ব ছিল তাঁর।
ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি জুলিয়ানিও ইঙ্গিত করেছেন, ম্যুলারের কাজ শেষের দিকে। তদন্ত শেষে ম্যুলার তাঁর মূল্যায়নসহ একটি প্রতিবেদন বিচার বিভাগের কাছে প্রদান করবেন। জুলিয়ানি দাবি করেছেন, এই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগে তার ভুল শুধরানোর অধিকার হোয়াইট হাউসের রয়েছে। তাঁর সে কথায় কেউ গুরুত্ব দেয়নি। তবে তাঁর এই কথা থেকে অনেকের ধারণা জন্মেছে, এই তদন্ত শেষের পথে।
তদন্ত শেষ হোক বা না হোক, মার্কিন কংগ্রেসে এই প্রশ্নে ডেমোক্র্যাটদের তদন্ত মাত্র শুরু হতে চলেছে। প্রতিনিধি পরিষদ এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। এই পরিষদের একাধিক সংসদীয় কমিটি জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের রাশিয়া–আঁতাত ও অন্যান্য সম্ভাব্য অপরাধ নিয়ে শুনানির ব্যবস্থা করবে। প্রথমেই যাঁকে প্রকাশ্য শুনানিতে আসতে ডাকা হয়েছে, তিনি হলেন ট্রাম্পের এককালীন আইনজীবী ও নানা অপকর্মের সঙ্গী মাইকেল কোহেন। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি তাঁর এই শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। কোহেন ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের সহচর, নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করে একাধিক নারীর মুখ বন্ধ করতে ট্রাম্পের নির্দেশে তিনিই অর্থ চালাচালি করেছেন। মস্কোতে একটি ট্রাম্প টাওয়ার নির্মাণের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনাও তাঁর মাধ্যমে হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের জন্য ক্ষতিকর বিস্ফোরক তথ্য তাঁর হাতে রয়েছে। কংগ্রেসে তাঁর বিবৃতি ট্রাম্পের জন্য রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর হতে পারে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে এক বোমা ফাটানোর মতো খবর দিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ট্রাম্প এফবিআই প্রধান জেমস কোমিকে পদচ্যুত করেছিলেন। সে সময় তিনি হোয়াইট হাউস সফররত রুশ প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছিলেন, রাশিয়া তদন্তের চাপ কমাতেই তিনি কোমিকে পদচ্যুত করেন। নিউইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, এই ঘটনার পরপর এফবিআই ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার গোপন সম্পর্ক নিয়ে একটি স্বতন্ত্র বিভাগীয় তদন্ত শুরু করে। এই তদন্তের মূল বিষয় ছিল ট্রাম্প জেনেশুনে রাশিয়ার পক্ষে কাজ করছেন, নাকি কোনো না কোনোভাবে রাশিয়ার খপ্পরে পড়েছেন, তা তলিয়ে দেখা। হোয়াইট হাউস থেকে এই প্রতিবেদনকে ‘অবাস্তব’ বলে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য অবশ্য আশু শিরঃপীড়ার কারণ ফেডারেল সরকারের ‘বন্ধ’ থাকার ঘটনা। এই নিয়ে ২২ দিন ধরে চলছে এই ‘বন্ধ’, যা আমেরিকার ইতিহাসে দীর্ঘতম ফেডারেল সরকারের কাজকর্ম বন্ধ থাকার ঘটনা। এর আগে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, তাঁর প্রস্তাবিত দেয়ালের জন্য কংগ্রেস ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ না করলে তিনি জরুরি অবস্থা জারি করে সে অর্থ আদায় করে নেবেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টারা সাবধান করে দিয়েছেন, তেমন চেষ্টা হলে লম্বা আইনি ঝামেলায় পড়ে যাবেন তিনি। একদিকে ম্যুলার তদন্ত, অন্যদিকে সরকার বন্ধের মামলা, এই দুই বিপদ সামলানো কঠিন হবে। গতকাল শুক্রবার ট্রাম্প জানান, আপাতত জরুরি অবস্থা ঘোষণার পথ তিনি অনুসরণ করবেন না। তবে সে ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার তাঁর রয়েছে, প্রয়োজনে তিনি তা ব্যবহার করবেন।
ফেডারেল সরকার বন্ধের ঘটনাটি ক্রমে একটি প্রহসনে পরিণত হচ্ছে। সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের ৭৩ শতাংশ মানুষ মনে করে এত দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কাজকর্ম আটকে থাকা রীতিমতো ‘বিব্রতকর’। ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওর গৃহীত এই জরিপে ৭১ শতাংশ মানুষ অবিলম্বে সরকারি কাজকর্ম খুলে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।