‘মৌসুমি রোগ’ হয়ে উঠতে পারে করোনা: জাতিসংঘ

করোনাভাইরাস

করোনাভাইরাস (কোভিড–১৯) মৌসুমি রোগ হয়ে উঠতে পারে। আজ বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে শুধু আবহাওয়া পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে এ মহামারি ছড়িয়ে পড়া রোধে নেওয়া পদক্ষেপ শিথিল করার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব সংস্থা। খবর এএফপির।

করোনাভাইরাসের প্রথম সূত্রপাত চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে। এরপর ক্রমেই তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে এ মহামারিতে মারা গেছে প্রায় ২৭ লাখ মানুষ। সংক্রমণ শুরুর পর এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এ ভাইরাসকে ঘিরে এখনো রয়ে আছে একগুচ্ছ রহস্য।

করোনার গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রথমবারের মতো একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘের একটি বিশেষজ্ঞ দল। কোভিড–১৯–এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ওপর আবহাওয়া ও বায়ুমানের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে ওই সব রহস্যের একটি উদ্‌ঘাটনের দায়িত্ব পায় বিশেষজ্ঞ দলটি। পরে দলটি এমন কিছু লক্ষণের সন্ধান পায় যাতে দেখা গেছে, করোনা একটি মৌসুমি রোগে রূপ নিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গবেষণাগারে পরীক্ষায় দেখা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে এই ভাইরাস ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়া এবং অতিবেগুনি রশ্মির কম বিকিরণে দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকে। তাঁরা আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে, বায়ুর খারাপ মান করোনায় মৃত্যুর হার বাড়ায়। তবে বায়ুর মান সার্স–কোভ–২–এর বায়ুবাহিত সংক্রমণের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে না।

জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার গঠিত ১৬ সদস্যের ওই বিশেষজ্ঞ দল এ অভিমত দিয়েছে যে শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাসজনিত সংক্রমণ প্রায়ই মৌসুম ভেদে ঘটে থাকে। বিশেষত, সাধারণ সর্দি–কাশি বা ইনফ্লুয়েঞ্জার পিক সময় শরৎ থেকে শীতকাল এবং ঠান্ডাজনিত করোনাভাইরাসের উপযোগী পরিবেশ হলো নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া।  

এক বিবৃতিতে বিশেষজ্ঞ দলটি বলেছে, ভাইরাসের এমন গতিপ্রকৃতিতে এটা খুব জোরালভাবেই বলা যায়, করোনাভাইরাস যদি অনেক বছর ধরে চলতে থাকে, তবে তা একটি জোরালো মৌসুমি রোগে রূপ নেবে। অর্থাৎ কালের পরিক্রমায় কোভিড-১৯–এর জন্য দায়ী সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণ মৌসুম ভিত্তিতে ঘটে থাকতে পারে।

করোনার প্রথম বছর কোনো কোনো দেশে এ রোগের সংক্রমণ গ্রীষ্ম মৌসুমে বাড়তে দেখা গেছে। এমনটা আবার আসছে বছরে ঘটবে না—তা বলার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
বেন জেইটচিক, বিশেষজ্ঞ দলটির কো–চেয়ার ও যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথিবী ও গ্রহবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক

তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোভিড–১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত আবহাওয়ার চেয়ে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ, যেমন: মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা, ভ্রমণের ওপর বিধিনিষেধ ইত্যাদির প্রভাবই বেশি দেখা যাচ্ছে।

তাই বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে গৃহীত বিধিনিষেধ শিথিল করার ক্ষেত্রে এখনই শুধু আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করা ঠিক হবে না।

করোনাভাইরাসের চরিত্র বোঝা কঠিন, সে বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বিশেষজ্ঞ দলটির কো–চেয়ার ও যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথিবী ও গ্রহবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক বেন জেইটচিক ইঙ্গিত দেন, করোনার প্রথম বছর কোনো কোনো দেশে এ রোগের সংক্রমণ গ্রীষ্ম মৌসুমে বাড়তে দেখা গেছে। এমনটা আবার আসছে বছরে ঘটবে না—তা বলার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।

বিশেষজ্ঞরা তাঁদের পরীক্ষা–নিরীক্ষায় বাড়ির বাইরের আবহাওয়া ও বায়ুমানের ওপর মনোযোগ দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, গবেষণাগারে পরীক্ষায় দেখা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে এই ভাইরাস ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়া এবং অতিবেগুনি রশ্মির কম বিকিরণে দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকে। তাঁরা আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে, বায়ুর খারাপ মান করোনায় মৃত্যুর হার বাড়ায়। তবে বায়ুর মান সার্স–কোভ–২–এর বায়ুবাহিত সংক্রমণের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে না।