মার্কিন হেফাজতে অভিবাসনপ্রত্যাশী শিশুর মৃত্যু
উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় বাবার সঙ্গে এই শিশু বয়সেই দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল শিশুটি। বেশি দূর এগোতে পারেনি, সীমান্তেই বাবার সঙ্গে ধরা পড়েছে। তবে অবৈধ প্রবেশের অভিযোগ নিয়ে শিশুটিকে আর দেশে ফিরতে হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে অভিবাসনপ্রত্যাশী ওই শিশুর। গুয়াতেমালা থেকে বাবার সঙ্গে আসা সাত বছরের কন্যাশিশুটি আজ শনিবার মারা যায়।
আজ বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, মারা যাওয়া শিশুটির নাম জেকেলিন কাল ম্যাকুইন। এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। পানিশূন্যতায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে। তবে মার্কিন সীমান্তরক্ষী বাহিনী ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন (সিবিপি) দাবি করেছে, তাদের হেফাজতে থাকা অবস্থায় বাবা ও মেয়ের জন্য খাবার ও পানির ব্যবস্থা ছিল।
‘ওয়াশিংটন পোস্ট’–এর খবরে বলা হয়েছে, কয়েক দিন শিশুটি খাবার খায়নি, পানিও পায়নি।
৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রমের সময় ১৬৩ জনের একটি দলের সঙ্গে শিশু ও তার বাবাকে আটক করা হয়। অভিবাসনপ্রত্যাশী ওই দলে অভিভাবক ছাড়া ৫০ জন শিশু ছিল।
শিশুটির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অভিবাসননীতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর মনোভাব প্রদর্শনের বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে।
অভিবাসনপ্রত্যাশীরা জানিয়েছেন, নিজ দেশে নিপীড়ন, দারিদ্র্য ও সংঘাত থেকে বাঁচতে তাঁরা পালিয়ে এসেছেন। অবৈধভাবে প্রবেশ করলে ফেরত পাঠানো হবে, এমন হুমকির মধ্যেও তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হওয়ার জন্য যাত্রা করেছেন।
সিবিপি জানিয়েছে, অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অভিযোগে শিশুটিকে তার বাবার সঙ্গে ৬ ডিসেম্বর আটক করা হয়। সেই সময় পরীক্ষা–নিরীক্ষায় শিশুটির কোনো শারীরিক সমস্যা পাওয়া যায়নি। শিশুটিকে যেখানে আটক রাখা হয়, সেখানে খাবার, পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা ছিল। সেখান থেকে ১৫১ কিলোমিটার দূরত্বে সীমান্ত স্টেশনে নেওয়ার জন্য বাবার সঙ্গে শিশুটিকে বাসে তোলা হয়। বাসে মেয়েটির বাবা নিরাপত্তাকর্মীদের জানান, তাঁর মেয়ে বমি করছে। একপর্যায়ে তিনি জানান, তাঁর মেয়ে শ্বাস নিচ্ছে না।
এর এক ঘণ্টা পর স্টেশনে পৌঁছে শিশুটিকে জরুরি চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয় এবং টেক্সাসে এল পাসো শিশু হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে শিশুটিকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে রাখা হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। হাসপাতালে শিশুটি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তার লিভার অকার্যকর হয়ে পড়েছিল।
হেফাজতে এভাবে অভিবাসনপ্রত্যাশী শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ডেমোক্র্যাটরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এটাকে সীমান্তে ‘মানবিক সংকটের’ অংশ বলে মন্তব্য করেছেন।