গুয়ানতানামো বে কারাগার
মানসিক ভারসাম্য হারানো বন্দীকে সৌদি আরবে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত কারাগার গুয়ানতানামো বে থেকে এক বন্দীকে নিজ দেশ সৌদি আরবে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সোমবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়েছে। ওই বন্দী গুয়ানতানামো বে কারাগারে টানা ২০ বছর বন্দী রয়েছেন। বন্দী থাকা ও নির্যাতনের কারণে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন।
ওই বন্দীর নাম মোহাম্মদ আল-কাহতানি। বাড়ি সৌদি আরবে। তাঁর বিরুদ্ধে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে আল-কায়েদার বিমান হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছিল। এ অভিযোগে আটক হয়ে তাঁকে কিউবায় অবস্থিত গুয়ানতানামো বে কারাগারে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়।
২০০৮ সালেই মোহাম্মদ আল-কাহতানির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রশাসন মোহাম্মদ আল-কাহতানির মুক্তি ও সৌদি আরবে ফেরত পাঠানোর কাজ শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন গত ৪ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ আল-কাহতানিকে সৌদি আরবে পাঠানোর উদ্যোগের বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসকে অবহিত করেন।
গুয়ানতানামো বে কারাগারের প্রথম দিককার বন্দীদের একজন কাহতানি। ২০০২ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে আটক করে এ কারাগারে আনা হয়েছিল। তার আগে ২০০১ সালের ৪ আগস্ট তিনি সৌদি আরব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় প্রবেশের চেষ্টা করেন। ওই সময় তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশ করতে না দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ফেরত পাঠানো হয়। একই বছরের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর হাতে আটক হন কাহতানি।
কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগারে কাহতানির ওপর চালানো অত্যাচার-নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ্যে এলে বিশ্বজুড়ে তুমুল সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে। এ কারাগার বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জোরালো হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, গুয়ানতানামো বে কারাগারে কাহতানিকে দিনের পর দিন তাঁকে একাকী আটকে রাখা হয়েছে। তাঁর ওপর শারীরিক, মানসিক ও যৌন হয়রানি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা। মূলত এ জন্যই মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন তিনি।
গত দুই দশকে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ধরে এনে প্রায় ৮০০ জনকে গুয়ানতানামো বে কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে আটকে রাখে যুক্তরাষ্ট্র। ২০০২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এ কারাগারে ৯ বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৭ জন আত্মহত্যা করেছেন। মার্কিন নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা গুয়ানতানামো বে কারাগারে এখনো ৩৯ জন বন্দী রয়েছেন। গত জানুয়ারিতে তাঁদের মধ্য থেকে পাঁচজনের মুক্তির অনুমোদন দিয়েছে ওয়াশিংটন। ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী খালিদ শেখ মোহাম্মদসহ আরও ১০ জন সামরিক কমিশনে বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন।