ভুয়া নোটিশে হাজারো অভিবাসী আদালতে
ইমিগ্রেশন বা অভিবাসন বিভাগের ভুয়া নোটিশে নাজেহাল হচ্ছেন অনেক অভিবাসী। গত ৩১ জানুয়ারি ছিল অভিবাসন বিভাগের ইস্যু করা আদালতের শুনানির তারিখ। নোটিশে উল্লেখ্য করা হয়, তারিখ মতো আদালতে হাজির না হলে অভিবাসীরা নিজেদের অবস্থান হারাতে পারেন। পরিণামে আমেরিকা থেকে বিতাড়িত হতে পারেন। কেউ কেউ শত মাইল অতিক্রম করে আদালতে হাজিরা দিতে যান। কেউবা কয়েক ঘণ্টা ভ্রমণ করে আদালতে যান। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে আদালতে পৌঁছে জানতে পারেন, হাজিরা ও বহিষ্কারের খবর ভুয়া।
ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নিদের সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ জানুয়ারি সকালে আদালতে বিভ্রান্তি, প্রচুর ভিড় ও দীর্ঘ লাইন ছিল। ইমিগ্রেশন এজেন্টরা আদালতে হাজির হতে প্রায় এক হাজার অভিবাসীর কাছে নোটিশ পাঠিয়েছিলেন। মূলত অভিবাসন সংক্রান্ত ব্যাপারে আদালতের সমঝোতাভিত্তিক একটি সমনে অভিবাসীদের আদালতে হাজিরা দিতে বলা হয়ে। না হলে আমেরিকা থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণের ঝুঁকি থাকবে বলে জানানো হয় সমনে। ৩১ জানুয়ারি সকালে অসংখ্য অভিবাসী আদালতে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত তারা জানতে পারেননি, আদালতে হাজিরার তারিখটি ছিল ভুয়া।
সিবিএস নিউজ-এর সঙ্গে টেলিফোনে এক সাক্ষাৎকারে হিউস্টনভিত্তিক ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি রুবি পাওয়ার্স বলেন, জনসাধারণের মধ্যে এটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ছাড়া আর কিছু নয়। এসব আদালত ইতিমধ্যেই সরকারের শাটডাউনের জগাখিচুড়ি পরিষ্কার করার চেষ্টায় আছেন। নতুন এই ঘটনাটি একটি নিখুঁত ঝড় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে চলার প্রয়াসে আইস এজেন্টরা গত বছর গণহারে শুনানির তারিখ প্রবর্তন শুরু করেন। ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নিদের দ্বিগুণ চেক করতে হয়েছিল, কিন্তু প্রতিনিধিত্ব ছাড়াই অভিবাসীরা বিপদে পড়ে যাচ্ছিল বলে মন্তব্য করেন ভার্জিনিয়াভিত্তিক ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি আইলিন ব্ল্যাসিংগার। সিবিএস নিউজের সঙ্গে টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নাগরিকেরা তাদের অভিবাসন সংক্রান্ত অবস্থার ওপর নজর রাখতে বিভাগের হটলাইনে ফোন করে নিতে পারে। কিন্তু বৈধ প্রতিনিধিত্ব ছাড়া ইমিগ্রেশন কোর্ট সিস্টেমের সব কার্যক্রম, সিদ্ধান্ত ও বিকল্প ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা বা সচেতন হওয়ার উপায় নেই।
ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি এরিকা তামারিজ জানান, ভুয়া তথ্যের জের ধরে ৩১ জানুয়ারি বেলা ১১টার মধ্যে কমপক্ষে ১০০ জন অভিবাসীকে জমা হতে দেখা যায় মেমফিস ইমিগ্রেশন কোর্টের লবিতে। ভুক্তভোগী অভিবাসীদের ফিরে যেতে না দিয়ে বরং আদালত প্রশাসকেরা তাদের নাম ও ঠিকানা সঠিক কিনা, তা যাচাই করেন। তাদের এই বলে আশ্বস্ত করেন, শিগগিরই তারা ডাকযোগে আদালতে শুনানির বিজ্ঞপ্তি পাবেন। দেখা যায়, ভুল শুনানির নির্দেশ পেয়ে অনেকেই দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা পথ ভ্রমণ করে আদালতে আসেন। তাদের কারওই ধারণা ছিল না, ৩১ জানুয়ারি সকালে তাদের আদালতের কোনো শুনানি নেই।
গত গ্রীষ্ম থেকে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে ভুয়া নোটিশ জারির বিষয়টি চলছে বলে সিবিএস নিউজকে জানান ভার্জিনিয়াভিত্তিক ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি ব্রায়ান ক্যাসন। তিনি বলেন, অভিবাসন বিভাগের সিদ্ধান্তের আগে আইস কর্মকর্তারা তারিখ উল্লেখ করে এনটিএ (নোটিশ টু অ্যাপিয়ার) পাঠাত। পরে আদালত অভিবাসীদের সরকারি শুনানির নোটিশ দিত। এই সুস্পষ্টতার কারণ হলো, এনটিএ চাইলে একজন অভিবাসীর যোগ্যতা যাচাই করতে পারে, প্রত্যাহার বা বাতিল করতে পারে। আমেরিকায় ১০ বছর নির্বিঘ্নে বসবাস করা অবৈধ অভিবাসীদের জন্য স্থিতিশীল আইনি বৈধতা ও এনটিএ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আদালতের রায় ছাড়াও এনটিএ চাইলে ১০ বছর নির্বিঘ্নে বসবাস করা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে।
ভার্জিনিয়ার ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নি হাসান আহমদ সিবিএস নিউজকে বলেন, তাঁর এক মক্কেল যিনি ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে গ্রিনকার্ড নিয়ে উত্তর ভার্জিনিয়ায় বসবাস করছেন, তাঁকেও ৩১ জানুয়ারি বাফেলো আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য এনটিএ নোটিশ পাঠিয়েছিল। মক্কেলের কাছ থেকে এমন তথ্য পেয়ে তিনি আগের দিন ৩০ জানুয়ারি শুনানির তারিখ সম্পর্কে বাফেলো আদালতে খোঁজখবর নেন। পরে তিনি শুনানির বিষয়টি ভুয়া বলে নিশ্চিত হন। মক্কেলকেও তিনি বিষয়টি জানিয়ে দেন। কিন্তু ইতিমধ্যে তাঁর মক্কেল ৭ ঘণ্টার রাস্তা অতিক্রম করেছে। হাসান আহমেদ দুঃখ করে সিবিএস নিউজকে বলেন, যারা বহিষ্কারের ভয়ে রয়েছেন, তাদের সঙ্গে আদালতের শুনানির তারিখ নিয়ে খেলা করার অর্থ তাদের জীবন নিয়ে খেলা করা।
কেউ যদি এনটিএর নোটিশ পান, তার অর্থ হলো তিনি নির্দিষ্ট তারিখে বা ভবিষ্যতে নির্ধারিত তারিখে অভিবাসন আদালতে উপস্থিত হবেন। কোর্টে উপস্থিত হওয়ার পর অভিবাসীদের অভিবাসন বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে, তা নির্ভর করছে অভিবাসীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, প্রমাণাদি, তথ্যপত্র এবং এনটিএর রিভিউ সিদ্ধান্তের ওপর। এমতাবস্থায় প্রত্যেক অভিবাসী, যাদের বৈধতা নেই কিংবা যারা বিভিন্ন মাধ্যমে আমেরিকায় নিজেদের স্থায়ী বৈধতা গড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য এনটিএ নোটিশ পাওয়া আতঙ্কের বিষয়। গত ৩১ জানুয়ারি এনটিএর নোটিশে হাজারো অভিবাসীর দূর-দূরান্ত থেকে আদালতে এসে ভুয়া শুনানির তারিখের তথ্য পাওয়া বিভ্রান্তিকর ও অনুচিত ঘটনা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।