ব্রঙ্কসের 'নানা' বাছির খান অসুস্থ

নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রিয়মুখ, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহসভাপতি, প্রবীণ প্রবাসী আবদুল বাছির খান গুরুতর অসুস্থ। প্রায় এক মাস ধরে বার্ধক্যজনিত নানান জটিলতায় ভুগছেন ব্রঙ্কসের সবার কাছে ‘নানা’ হিসেবে পরিচিত বাছির খান। 

ব্রঙ্কসের জ্যাকবি ও মান্ট্রিফিউর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বর্তমানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে পার্কচেস্টারের বাসায় বিশ্রামে রয়েছেন বাছির খান। বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য তাঁকে নিয়মিত যেতে হচ্ছে হাসপাতালে। তিনি তাঁর আশু আরোগ্যের জন্য দেশ-প্রবাসের সবার দোয়া কামনা করেছেন।

বাছির খানের অসুস্থতার খবর জানতে পেরে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক প্রবাসী তাঁকে দেখার জন্য ছুটে যাচ্ছেন তাঁর বাসভবনে। ডাক্তারদের বারণ থাকায় কষ্ট করে বাসায় না গিয়ে তাঁর জন্য দোয়া করার জন্য সবাইকে তিনি বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন।

আবদুল বাছির খান জানান, মাত্র ১২ বছর বয়সে বাবার হাত ধরে পাড়ি জমান বিলেতে। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ব্রিটেনে বসবাসের পর ব্রিটিশ পাসপোর্ট নিয়ে বাছির খান যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। এখানে আসার পর নিউইয়র্কেই কেটেছে তাঁর প্রবাস জীবনের ৫৫ বছর। গ্রহণ করেছেন আমেরিকান পাসপোর্ট। তবে কখনো পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশের পাসপোর্ট ছিল না তাঁর। বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের বাসিন্দা আবদুল বাছির খানের স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে। সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। বাছির খান একাধারে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ জীবনে তিনি সব সময় বাংলাদেশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং এখনো রয়েছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে লন্ডনের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভেও অংশগ্রহণ করেন তিনি। ম্যানচেস্টার আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে রাজপথে মিছিল করেছেন, সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন সমাবেশে। যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর থেকে বাংলাদেশের স্বপক্ষে কিংবা কমিউনিটির বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে মিছিল-মিটিং-সামাজিক কর্মকাণ্ডে সোচ্চার রয়েছেন তিনি। প্রবাসী বাংলাদেশেদের কোনো অনুষ্ঠানের খবর পেলেই ছুটে যান সেখানে। প্রবাসের অনেক সংগঠনেরই প্রতিষ্ঠাতাদের একজন বাছির খান। কোনো কোনো সংগঠনের সঙ্গে রয়েছেন বহু বছর ধরে।

সংগঠন প্রিয় আবদুল বাছির খান যুক্তরাষ্ট্র হবিগঞ্জ সমিতির সঙ্গে যুক্ত সেই প্রতিষ্ঠা থেকেই। প্রবাসের অন্যতম বৃহত্তম আঞ্চলিক সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের তিনি ছিলেন সহসভাপতি। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নবীগঞ্জবাসীর একমাত্র সংগঠন নবীগঞ্জ উপজেলা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ইউএসএ’র কার্যকরী কমিটিতে রয়েছেন ১৯৯৬ সাল থেকে। তা ছাড়া বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্রঙ্কসের তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ব্রঙ্কস বাংলা স্কুলের শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন দীর্ঘদিন। ব্রঙ্কসের কলম্বাসখ্যাত বাছির খান ১৯৯৬ সালে অবসর গ্রহণের পর থেকে এখনো বসবাস করছেন পার্কচেস্টারে। তিনি পার্কচেস্টারে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের নিত্যদিনের সন্ধ্যার আড্ডায় মধ্যমণি। দলমত-নির্বিশেষে সবাই ভালোবাসেন অজাতশত্রু সদা হাস্যোজ্জ্বল আবদুল বাছির খানকে।