ব্রঙ্কসের ভয় কাটাল বাংলাদেশিরা
আশির দশকে নিউইয়র্কের যে এলাকায় মানুষের ছিল ভয়ার্ত যাত্রা, সেখানে এখন বাংলাদেশিদের স্বচ্ছন্দ যাতায়াত। নর্থ ব্রঙ্কস নামের নগর প্রান্তের এই জনপদ এমনই ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল যে, দিনের বেলায়ও লোক চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছিল। পুরোনো সব ভবনের প্রবেশপথ দিয়ে চলাচলের সময় দেখে নিতে হতো আশপাশ। ছিল হামলার ভয়; ছিল মাদকাসক্ত আর চোর ডাকাতদের আখড়া। নগরীর পুলিশও সেখানে যেতে ভয় পেত।
বাংলাদেশিরা বসত শুরু করায় গত তিন দশকে এলাকাটির চেহারা পালটে গেছে। প্রধানত স্বল্প মূল্যের ভাড়া নিয়ে বা স্বল্পমূল্যে বাড়ি ক্রয় করে এখন বাংলাদেশিদের দখলে নর্থ ব্রঙ্কস এলাকাটি। ৩০ বছর থেকে এ এলাকায় বসবাস করছেন প্রবাসী মঞ্জুর চৌধুরী। জানালেন, বাংলাদেশিদের উপস্থিতিতে জনপদটি হয়ে উঠেছে প্রাণচঞ্চল। প্রতি বছর প্রবাসীরা পথ মেলা করেন। বাংলা গানে, পণ্যের বেচাবিক্রি বিনোদনে এলাকায় অন্য অভিবাসীদের আকৃষ্ট করা সম্ভব হয়েছে। এলাকাটিতে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশি গ্রোসারি সহ নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। লিরয় বিশাল ফার্মেসি ঘুরে দেখালেন। জানালেন, বাংলাদেশি নয়—সব অভিবাসীসহ শ্বেতাঙ্গদের প্রিয় ফার্মেসি হয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি। আলাপ হয় স্কয়ার মেডিকেল কেয়ারের বাংলাদেশি কর্মীদের সঙ্গে। উপস্থিত প্রবাসী প্রবীণরা জানালেন, মন খুলে নিজের ভাষায় সমস্যা খুলে বলা যাচ্ছে। দেশের মতো যত্নের সঙ্গে স্বদেশি চিকিৎসকদের সেবা নিচ্ছেন এসব প্রবাসীরা। কোনো এক সময়ের মান্নান সুপার মার্কেট এখন ঢাকা সুপার মার্কেট। এর অন্যতম স্বত্বাধিকারী সোহাগ আহমেদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। হাস্যোজ্জ্বল এই প্রবাসী ব্যবসা নিয়ে তাঁর সন্তুষ্টির কথা জানালেন। প্রচুর কেনাকাটার ভিড়ে, ক্রেতা সামাল দিয়ে কথা বললেন এ উদ্যোক্তা প্রবাসী।
ব্যস্ততা পাশে রেখে মঞ্জুর চৌধুরী নিয়ে গেলেন বাংলাদেশ স্টার ফার্নিচারে। স্টার ফার্নিচার সুসজ্জিত। কানায় কানায় ভরা সুদৃশ্য সব গৃহ পণ্য। ব্যবসার মালিক জানালেন, প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়াও অন্যদের আকৃষ্ট করতে পারছেন তারা। ব্যবসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। নর্থ ব্রঙ্কসের এলাকা ছাড়িয়ে বাংলাদেশি অধ্যুষিত পার্কচেস্টারের খলিল বিরিয়ানিতে গেলে দেখা যায় আরেক কাণ্ড। নানা দেশজ আইটেমে সাজানো ইফতারির আয়োজন ক্রেতা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন খলিল বিরিয়ানির মালিক শেফ খলিল। তিনি জানালেন, মান ও গুণের কারণে ব্যবসার দ্রুত প্রসার ঘটছে। সুনাম আজ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। ক্রেতারাও জানালেন, মান ও স্বাদে অনন্য হয়ে উঠেছে খলিল বিরিয়ানি। তাদের সেবারও প্রশংসা করলেন ক্রেতারা। এ ছাড়া দাদা হোম কেয়ারের কয়েকটি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সৌজন্য আলাপে পরিচালক রিসবাহ জানান, দাদা হোম কেয়ার অন্যতম অপর পরিচালক সৈয়দ হায়াত জানান, স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে তাঁরা গৌরবান্বিত। নিজেদের কমিউনিটির সেবা দিতে পারছেন বলে তারা তৃপ্ত। নিষ্ঠা ও আন্তরিকতায় তাদের সেবা কার্যক্রমের প্রশংসা করলেন সেবা গ্রহীতারা।
প্রচেষ্টার এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, প্রবাসীদের চাঞ্চল্য। বাংলাদেশি ব্যবসা এখানে প্রতিষ্ঠিত। ব্যবসার চাঞ্চল্যে সদা ব্যস্ত কমিউনিটি। খেটে খাওয়া প্রবাসীরা নিউইয়র্কসহ আমেরিকার নানা রাজ্যে এভাবেই গড়ে তুলছেন নিজেদের এলাকা। বাংলাদেশের দূত হিসেবে কর্মে ও উদ্যোগে আমাদের আত্মপরিচয়কে মহান করে তুলছেন।