আমেরিকার কর্মহীনদের জন্য বর্ধিত বেকার ভাতার মেয়াদ বাড়িয়ে নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবারে সপ্তাহে আর ৬০০ ডলার নয়, বরং সপ্তাহে কর্মহীনদের ৪০০ ডলার করে বেতার ভাতা দেওয়া হবে; যদিও এ নিয়ে আইনপ্রণেতাদের মধ্যে এখনো কোনো সমঝোতা হয়নি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জুলাই মাসে মেয়াদ চলে যাওয়ায় সপ্তাহে ৬০০ ডলারের পরিবর্তে কর্মহীন মানুষ এখন সপ্তাহে ৪০০ ডলার করে পাবেন। তবে কত দিনের জন্য এই মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে, তা বলা হয়নি। এ ৪০০ ডলারের মধ্যে ৭৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩০০ ডলার আসবে ফেডারেল তহবিল থেকে। রাজ্য সরকারগুলোকে ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ ১০০ ডলার যোগ করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প।
নির্বাহী আদেশে ফেডারেল সরকারের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের ৭০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল থেকে এ অর্থ দেওয়া হবে বলে বলা হয়েছে। নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, এ ৭০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল ২৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসা পর্যন্ত কর্মজীবীরা বর্ধিত বেকার ভাতা পাবেন। আমেরিকায় এখন তিন কোটির বেশি কর্মহীন মানুষ।
ফোর্বস ডটকম এ–সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলেছে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এ ৭০ বিলিয়ন থেকে তহবিল ২৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৮ আগস্ট নিউজার্সির গলফ ক্লাবে সময় কাটিয়েছেন। নিউজার্সি থেকেই তিনি তাঁর নির্বাহী আদেশের কথা জানান। নির্বাহী আদেশে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পে রোল ট্যাক্স (মজুরি থেকে কাটা কর) স্থগিত রেখেছেন। এ সুবিধায় কর্মজীবীরা ফেডারেল কর ছাড়াই মজুরি ঘরে নিয়ে আসতে পারবেন। এ সুবিধা যাঁদের কাজ আছে, তাঁদের সাময়িক সুবিধা দেবে। অধিকাংশ লোকেরই এখন কাজ নেই। এ ছাড়া এই পে রোল স্থগিত করের বিরূপ প্রভাব পড়বে কর্মজীবীদের অবসর ভাতা পাওয়ার সময়। তখন তা কেটে নেওয়া হবে। কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া কর মাফ করার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নেই।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভাড়াটেদের বাসাভাড়া না দেওয়ার কারণে আইনগতভাবে ভাড়াটে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছেন। এখানে ভাড়াটেদের সরাসরি কোনো আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়নি। বাড়ির মালিকদের জন্যও কোনো আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়নি। এতে ভাড়াটেদের ভাড়া জমতে থাকবে। বাড়ির মালিকের সঙ্গে ভাড়াটের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটবে।
কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক পার্টি আমেরিকার বিপর্যস্ত লোকজনকে সরাসরি নাগরিক প্রণোদনা দেওয়ার জন্য আরেক দফা আইন প্রস্তাবের উদ্যোগ নেয়। প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটরা সপ্তাহে ৬০০ ডলার করে কর্মহীনদের অতিরিক্ত বেকার ভাতার মেয়াদ কাজে না ফেরা পর্যন্ত বর্ধিত করার প্রস্তাব করে। এ ছাড়া ভাড়াটেদের, বাড়ির মালিকদের সরাসরি সহযোগিতাসহ নাগরিকদের আরেক দফা সরাসরি নগদ সহযোগিতা করার আইন প্রস্তাব উপস্থাপন করে। সিনেটেও রিপাবলিকান পার্টি এমন একটা প্রস্তাব উপস্থাপন করে। রিপাবলিকান পার্টির প্রস্তাবে কর্মহীনদের ভাতা ২০০ থেকে ৪০০ ডলারের মধ্যে বর্ধিত করাসহ অন্যান্য নাগরিক সহযোগিতার কথা বলা আছে। ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টি এবং হোয়াইট হাউসের মধ্যে নতুন প্রণোদনা নিয়ে মাসব্যাপী সমঝোতাচেষ্টা ৭ আগস্ট ভেস্তে যায়। আইনপ্রণেতারা যে যাঁর এলাকায় ফিরে গেছেন এ মাসের জন্য।
আমেরিকার কোটি মানুষ চরম অর্থনৈতিক বাস্তবতায় তাকিয়ে আছে সরকার ও আইনপ্রণেতাদের দিকে। ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি এবং সিনেটর চার্লস শুমার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জনগণের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রভাবশালী আইনপ্রণেতারা রিপাবলিকান পার্টিকে আবারও আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
ডেমোক্র্যাটদের প্রস্তাবে ভাড়াটেদের সরাসরি সহযোগিতা দেওয়া, ফুড স্ট্যাম্প বৃদ্ধি, নগর ও রাজ্য সরকারকে ফেডারেল সহযোগিতা করার দাবি ছিল। এসবকে পাশ কাটিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। তিনি আসলে ডেমোক্র্যাটদের রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় ফেলার জন্যই এমন করেছেন। এমন নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা আগেই বলা হয়েছে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে। কংগ্রেসে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয়ে আইনগত অনুমোদন দেওয়ার কথা কংগ্রেসের। এ ছাড়া পে রোল কর ক্ষমা করার ক্ষমতাও কংগ্রেসের। এসবকে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশের জন্য ডেমোক্র্যাটরা আদালতে গেলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলবেন, আমি নাগরিকদের সহযোগিতা করতে চাই। ডেমোক্র্যাটরা আদালতে গিয়ে এমন সাহায্যের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সংবাদ সম্মেলনেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন কথা বলেছেন। ডেমোক্র্যাটদের কারণেই ফেডারেল নাগরিক সহযোগিতার আইন নিয়ে সমঝোতা ব্যর্থ হয়েছে বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাবেক সৈনিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ভুয়া তথ্য প্রদান করলে সাংবাদিকেরা কথাটি ধরে ফেলেন। প্রশ্নবাণের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রেস কনফারেন্স দ্রুত শেষ করে ক্যামেরার সামনে থেকে বিদায় নেন।
গত ছয় মাসে কোভিড-১৯–এর কারণে আমেরিকার ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনাভাইরাসে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর দেশ আমেরিকা। ৮ আগস্ট আমেরিকায় ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন মৃত্যুর তালিকায় নাম যোগ হচ্ছে।
আগামী ৩ নভেম্বর আমেরিকার সাধারণ নির্বাচন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লড়ছেন পুনর্নির্বাচনের জন্য। করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থতার কারণে ট্রাম্পের জনমত জরিপে ধস নেমেছে। দেশের অর্থনীতি কার্যত অচল এখনো। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্রুত জনপ্রিয়তা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছেন। নাগরিক সহযোগিতা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনেও তিনি আসছে নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা ভোট কারচুপির ষড়যন্ত্র করছে বলে বলেছেন। এবারে ডাকযোগে ভোট গ্রহণের কারণে ইতিহাসের সবচেয়ে কারচুপির নির্বাচন হবে বলে ট্রাম্পের আশঙ্কা। আমেরিকার লোকজন একদিকে চরম অর্থনৈতিক সমস্যায়, অন্যদিকে শিগগির পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে বলেও মনে করা হচ্ছে না। নাগরিকদের সহযোগিতা নিয়ে ওয়াশিংটনের এমন দড়ি–টানাটানিতে বিরক্ত হয়ে উঠেছে আমেরিকার নাগরিকেরা।