‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা’ ঘোষণা দিবসের আলোচনা সভা
বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস রচনার দাবি
১৯৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি স্মরণে নিউইয়র্কে আয়োজিত এক সভায় বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে দিনটি ঐতিহাসিক। কেননা, এদিন ঢাকার ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে ছাত্র ইউনিয়নের জনসভায় ১১ দফা কর্মসূচি সংবলিত প্রচারপত্রে ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা’ ঘোষণা দেওয়া হয়। ছাত্র সমাজের যে ঘোষণা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ভূমিকা রাখে। দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন।
বক্তারা বলেন, মূলত ১৯৪৭ সালের পর থেকেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। আর দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেপথ্যের মূল রূপকার মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। তিনিই সর্বপ্রথম ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে স্বায়ত্তশাসনের কথা বলেন, স্বাধীনতার কথা বলেন। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস রচনা করতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে প্রকৃত বাংলাদেশকে তুলে ধরতে হবে।
বক্তারা বলেন, ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ আন্দোলন আর ৭০-এর ছাত্র-গণ আন্দোলনের ভিত্তিতেই ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ। যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে।
‘সচেতন প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজে’র ব্যানারে ১৯৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি স্মরণে গত ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে এই সভার আয়োজন করে। সাবেক ছাত্রনেতা, তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুর রহমান ইউসুফজাই সালুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক মঈনুদ্দীন নাসের, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন খান, মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ফরহাদ প্রমুখ। উল্লেখ্য, আতিকুর রহমান সালু পরবর্তী সময়ে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের পর্যায়ক্রমে সাধারণ সম্পাদক (১৯৭০-১৯৭১) ও সভাপতি (১৯৭২-১৯৭৩) ছিলেন।
অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন আতিকুর রহমান ইউসুফজাই, ডা. ওয়াজেদ এ খান ও লুবনা কাইজার। সভায় আতিকুর রহমান ইউসুফজাই সালু তাঁর দীর্ঘ স্মৃতিচারণ করে বলেন, আজ থেকে ৪৭ বছর আগে ১৯৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ থেকে স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠার ডাক দেওয়া হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) উদ্যোগে আয়োজিত ওই জনসভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ও ১১ দফা আন্দোলনের অন্যতম নেতা মোস্তফা জামাল হায়দার। বক্তব্য দেন ১৯৬২-এর আইয়ুবের সামরিক শাসন ও শরিফ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বিরোধী আন্দোলনের নেতা এবং তৎকালীন শ্রমিক নেতা কাজী জাফর আহমেদ (মরহুম সাবেক প্রধানমন্ত্রী), ডাকসুর সাবেক ভিপি ও তৎকালীন উদীয়মান কৃষক নেতা রাশেদ খান মেনন (সাবেক বিমান পরিবহন মন্ত্রী) এবং ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও ১১ দফা আন্দোলনের অন্যতম নেতা মাহবুবউল্লা (ড. মাহবুবউল্লা)।
ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ২২ ফেব্রুয়ারির জনসভার শুরুতে স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলার (কর্মসূচি) প্রস্তাবনা পাঠ করার সুযোগ হওয়ার কথা উল্লেখ করে আতিকুর রহমান সালু বলেন, ওই সভায় স্বাধীন বাংলার পক্ষে বক্তব্য রাখার জন্য সামরিক আদালতে কাজী জাফর আহমেদ ও রাশেদ খান মেননকে তাদের অনুপস্থিতিতে ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। এ ছাড়া মোস্তফা জামাল হায়দার ও মাহবুবউল্লাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আমাকে (সালু) পুলিশ হন্য হয়ে খোঁজে। তিনি বলেন, ২২ ফেব্রুয়ারি পল্টনের জনসভা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক।