পুনর্নির্বাচনের জন্য চীনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ট্রাম্প

আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের সহায়তা চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ছবি: রয়টার্স
আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের সহায়তা চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ছবি: রয়টার্স

নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বৈতরণি পার হতে চীনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে বসতে মরিয়া ট্রাম্প চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সহায়তা চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন।

আমেরিকার সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন সাহসী কাজটা করেছেন আগেই। হোয়াইট হাউসে দায়িত্বে থাকার সময়েই তিনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে একটি বই লিখেছেন। এতে তিনি ট্রাম্পকে নিয়ে অবিশ্বাস্য এক তথ্য দিয়েছেন। ২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি তাঁর জয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের সহযোগিতা চেয়েছেন ট্রাম্প।

বোল্টন লিখেছেন, ‘সে সময় বিস্ময়করভাবে ট্রাম্প আলোচনা ঘুরিয়ে উত্থাপন করলেন আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা। চীনের অর্থনৈতিক সক্ষমতার কথা পরোক্ষে উল্লেখ করে তিনি (প্রেসিডেন্ট) সির কাছে সহায়তা চাইলেন, যেন তিনি (ট্রাম্প) নির্বাচিত হতে পারেন।’

আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে চীনের বক্তব্য জানতে চাইলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন বা তার অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে নাক গলানোর কোনো ইচ্ছা চীনের নেই।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে মতবিরোধের জেরে গত সেপ্টেম্বরে জন বোল্টনকে বরখাস্ত করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি তাঁর প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা একটি বই নিয়ে ব্যাপক হইচই শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে।

বোল্টনের প্রকাশিতব্য বইয়ে আরও বলা হয়েছে, গত বছর জি-২০ বৈঠক চলাকালে এক সাক্ষাতে সি চিন পিং মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ট্রাম্পকে বলেছিলেন, চীন গণগ্রেপ্তার করা উইঘুর মুসলিমদের আটক রাখতে কনসান্ট্রেশন ক্যাম্প তৈরি করছে। ট্রাম্প জবাবে বলেছিলেন, তিনি মনে করেন, চীন ঠিক কাজই করছে। সুতরাং এগিয়ে যাওয়া উচিত।

‘দ্য রুম হয়্যার ইট হ্যাপেনড’ শিরোনামে জন বোল্টনের বইটি ২৩ জুন প্রকাশিত হওয়ার কথা। এর আগেই নিউইয়র্ক টাইমসে বইটির কিছু অংশ প্রকাশ করা হয়। আর এরপরই শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। এরই মধ্যে বইটির প্রকাশনা আটকে দিতে মামলা করে ট্রাম্প প্রশাসন।

বইটিতে বেশ কিছু বিস্ফোরক তথ্য রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে। এতে বোল্টন বলেছেন, ‘পছন্দের একনায়ককে’ কিছু সুবিধা পাইয়ে দিতে ট্রাম্প এমনকি অপরাধ তদন্তও স্থগিত রাখার ইচ্ছা পোষণ করেছেন।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জন বোল্টনকে ‘মিথ্যাবাদী’ আখ্যা দিয়ে পাল্টা আক্রমণ করতেও ট্রাম্প বিলম্ব করেননি। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বোল্টনকে এ আখ্যা দেন। এ সম্পর্কিত আরেকটি সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প ফক্স নিউজকে ট্রাম্প বলেন, বইটিতে উচ্চ পর্যায়ের গোপনীয় তথ্য সংযুক্ত করার মধ্য দিয়ে বোল্টন আইন ভেঙেছেন।

গত বছর প্রতিনিধি পরিষদে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসিত করতে যে অভিযোগগুলো তোলা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর অভিযোগ এবার তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপন করলেন তাঁরই সাবেক উপদেষ্টা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ট্রাম্পকে দায়মুক্তি দিলেও অভিযোগটি কিন্তু রয়ে গেছে। সেখানে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগটি ছিল, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে চাপ প্রয়োগের জন্য তিনি দেশটিকে দেওয়া মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিত করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, সামনের নির্বাচনে নিজের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন সম্পর্কে ক্ষতিকর তথ্য পাওয়া।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত বইটির সংক্ষিপ্তসারে এই অভিশংসন প্রক্রিয়া নিয়ে বোল্টনের দৃষ্টিভঙ্গিটি পাওয়া যা। সেখানে বোল্টন লিখেছেন, ২০১৯ সালে ডেমোক্র্যাটরা যদি ইউক্রেন নিয়ে এত বেশি মনোযোগী না হয়ে, পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সামগ্রিক প্রবণতাকে বিবেচনায় নিত, তবে অভিশংসনের ফলটি অন্যরকম হতে পারত।

তবে এই বক্তব্য বোল্টনকে সমালোচনা থেকে মুক্ত করতে পারছে না। সমালোচকেরা বলছেন, প্রতিনিধি পরিষদে যখন তাঁকে সাক্ষ্য দিতে ডাকা হয়েছিল, তখন তিনি আসেননি। ওই ডাকে সাড়া দিলে অভিশংসন প্রক্রিয়ার ফলটি অন্যরকম হতে পারত। অভিশংসন তদন্তের নেতৃত্ব দেওয়া অ্যাডাম শিফ তো বলেছেনই, ‘বোল্টন নিজের বইয়ের জন্য চমক রেখে দিতে চেয়েছেন। তিনি একজন লেখক হতে পারেন, কিন্তু দেশপ্রেমিক নন।’

এ সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে আসন্ন নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেন বলেন, ‘এটি যদি সত্য হয়, তাহলে তা শুধু নৈতিক স্খলনই নয়, এটি মার্কিন জনগণের প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের পবিত্র দায়িত্বের লঙ্ঘন।’