যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জঙ্গি হামলায় দণ্ডিত বাংলাদেশি অভিবাসী আকায়েদ উল্লাহ তাঁর বক্তব্য পাল্টে সাজা কমানোর চেষ্টা করেছেন। তবে তাঁর পরিবর্তিত বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিচারক বলেছেন, জুরিবোর্ডের দেওয়া দণ্ড ঠিকই আছে।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বুকে পাইপবোমা বেঁধে নিউইয়র্ক নগরীর ব্যস্ততম বাস টার্মিনালে বিস্ফোরণ ঘটান আকায়েদ। বিস্ফোরণে তিনিসহ চারজন আহত হন। পরে তাঁকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৮ সালে ম্যানহাটনের আদালতে আকায়েদের বিচার হয়। বিচারে সংঘবদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর হয়ে তাঁর কাজ করার বিষয়টি উঠে আসে। এ ছাড়া পুলিশের কাছে তাঁর দেওয়া স্বীকারোক্তি ও ফেসবুকে বিদ্বেষমূলক নানা পোস্ট বিচারে উঠে আসে। জুরিবোর্ড আকায়েদকে ৩০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
কিন্তু এখন আকায়েদ ভিন্ন কথা বলছেন। দণ্ড চ্যালেঞ্জ করে আকায়েদ সম্প্রতি আদালতে দাবি করেন, তিনি ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হয়ে জঙ্গি কার্যক্রম চালাননি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য বোমা ফেলবেন—এমন কথায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। ট্রাম্পের ওপর বিরক্ত হয়ে তিনি বোমাবাজি করেছেন। গ্রেপ্তারের পর পুলিশকে দেওয়া স্বীকারোক্তি থেকেও সরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন আকায়েদ।
তবে আকায়েদের এই পরিবর্তিত বক্তব্য গত ৩১ ডিসেম্বর প্রত্যাখ্যান করেছেন বিচারক রিচার্ড সুলিভান। বিচারক বলেছেন, আইএসের একটি ভিডিও দেখে আকায়েদ অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। আর তাদের নির্দেশ পালন করেছেন নিজে বোমাবাজি করে। তা ছাড়া আকায়েদের ফেসবুক পোস্টসহ অন্যান্য গতিবিধি তাঁর দাবিকে সমর্থন করে না। ফলে, তাঁকে দেওয়া জুরিবোর্ডের দণ্ড ঠিকই আছে।
৪ জানুয়ারি প্রকাশিত নথিতে দেখা যায়, জুরিবোর্ড রায় ঘোষণার পরই আকায়েদ চিৎকার করে নিজে আইএসের অনুসারী নন বলে দাবি করেন।
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার সন্তান আকায়েদ। পারিবারিক অভিবাসনে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তিনি। পরিবারের সঙ্গে ব্রুকলিনে থাকতেন।
গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আকায়েদ স্বীকার করেন, তিনি আইএসের জন্য বোমা হামলা করেছেন।
আকায়েদের কম্পিউটার তল্লাশি করে আইএসের নানা ধরনের প্রচারণাসামগ্রী পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, আইএসে যোগ দিতে দূরে যেতে সক্ষম নয়—এমন ব্যক্তিরা যেন তাদের বসবাসের স্থানে একাকী হামলা চালান।
হামলা চালানোর আগে আকায়েদ ফেসবুকে বলেছিলেন, ‘ট্রাম্প, তুমি তোমার জাতিকে রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছ।’
ফেডারেল গোয়েন্দারা দাবি করেন, ২০১৪ সাল থেকে আকায়েদ আইএস দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে শুরু করেন। প্রচারণা ভিডিওর মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ইন্টারনেটে খুঁজতে শুরু করেন, কীভাবে বোমা তৈরি করা যায়। পরে ব্রুকলিনে নিজের বাসায় বসেই তিনি বোমা তৈরি করেন। তাঁর বাড়ি থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর আকায়েদ নিজেই পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তাঁর হামলার উদ্দেশ্য ছিল আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া। এ কারণে তিনি হামলার জন্য ব্যস্ত কর্মদিবস বেছে নেন।
২০১৭ সালে হামলার ঘটনার সয় আকায়েদের বয়স ২৭ বছর বলে জানানো হয়েছিল। বিচারে তাঁর ৩০ বছরের কারাদণ্ড হয়। বিভিন্ন ধারার অপরাধের পূর্ণ দণ্ড প্রকাশিত হলে তাঁকে বাকি জীবন কারাগারেই থাকতে হতে পারে।
আকায়েদের হামলার ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পারিবারিক অভিবাসন বন্ধ করার জন্য তাঁর উদাহরণ তুলে ধরেছিলেন। ওই হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসননীতির ফলাফল হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
মার্কিন অভিবাসন নীতিতে আত্মীয়স্বজনের বদৌলতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। ওই হামলাকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প কংগ্রেসকে সেই সুযোগ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছিলেন।