থিংকিং দ্য হিউম্যানিটি: এইচ বি রিতার অনন্য প্রয়াস
প্রবাসে থেকেও দেশের আর্ত মানবতার সেবায় যাদের মন কাঁদে, তাঁদের একজন নিউইয়র্কের এইচ বি রিতা। বিত্তবৈভবের দেশে শিক্ষকতার পেশায় জড়িত থেকে উদ্যমী এ নারী ভুলে যাননি তাঁর উৎসের কথা, ফেলে আসা পশ্চাৎপদ জনপদের কথা। সম্পূর্ণ নিজের চিন্তাধারা ও উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান, থিংকিং দ্য হিউম্যানিটি। সংক্ষেপে টিটিএইচ।
প্রচার বিমুখ এ কর্মোদ্যমী প্রবাসী জানালেন, ২০১৩ সালে সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয়। ২০১৪ সাল থেকে দুস্থ মানুষের সেবায় কাজ করতে ফেসবুক থেকে স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ করতে শুরু করেন তিনি। শুরুতে তিনি একাই এই সংগঠনের সদস্য ছিলেন। এখন পাঁচজন উপদেষ্টা ও প্রায় ত্রিশজন স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনে কাজ করছেন। উপদেষ্টারা হলেন, আনোয়ারা বেগম (নিউইয়র্ক), নীরা কাদরী (নিউইয়র্ক), আতিকা ওসমান (নিউইয়র্ক), মিলন খান (সৌদি আরব) ও অভি রহমান(বাংলাদেশ)।
থিংকিং দ্য হিউম্যানিটি—সংগঠনটি অসহায় অনগ্রসরদের মধ্যে মাসিক খাদ্য বিতরণের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। এখন সংগঠনটি প্রতি বছর পথশিশুদের মাঝে ঈদ বস্ত্র বিতরণ ও শীতবস্ত্র বিতরণ করে থাকে। চিকিৎসা সেবা, ব্যক্তিবিশেষে অনুদান, অসহায়দের মাঝে ইফতার বিতরণ ও আন্তর্জাতিক সংকটের ওপর কাজ করে যাচ্ছে থিংকিং দ্য হিউম্যানিটি। ২০১৪ সালে সংগঠনটি ফিলিস্তিনিদের সাহায্যে মুসলিম এইডের মাধ্যমে আর্থিক অনুদান পাঠিয়েছে। ২০১৫ সালে সংগঠনের প্রধান এইচ বি রিতা ব্যক্তিগত অনুদানে কমলগঞ্জের মুন্সিবাজার এবং সিলেটের বীরাঙ্গনা প্রভা রানী মালাকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন।
থিংকিং দ্য হিউম্যানিটি সংগঠনটি বিশ্বাস করে, সাম্প্রদায়িকতা ও পশ্চাৎপদতা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করতে হবে। জাতি, বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ, জাতীয়তা বা জাতিগত উৎসের ভিত্তিতে বৈষম্য না করে আর্ত-মানবতার সেবায় নিষ্ঠার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার নামই মানব ধর্ম। সংগঠনটি সবার প্রতি সমান সেবা দানের প্রতিশ্রুতি রাখে।
এইচ বি রিতা জানান, সংগঠনটি কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বা সংস্থা থেকে কোনো প্রকার আর্থিক অনুদান পায় না। সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে তিনি সংগঠনটি পরিচালনা করেন। যে কোনো সংকটে, ঈদের সময়, শীতকালে বা কারও চিকিৎসায় বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হলে এইচ বি রিতা ফেসবুকের মাধ্যমে ইভেন্ট ঘোষণা করেন। কীভাবে ইভেন্ট পরিচালিত হবে, কত টাকা অনুদান জোগাড় করতে হবে, কত সময় ধরে ইভেন্ট চলবে এবং নিয়মকানুন সম্পর্কে সকল দিক নির্দেশনা তিনি কনফারেন্স কলে মিটিং ডেকে জানিয়ে দেন। ইভেন্টের মাধ্যমে যদি কেউ নিজ ইচ্ছায় আর্থিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসেন, তবে তা গ্রহণ করা হয়। আর্থিক সাহায্য জোগাড়ে সংগঠনে হোস্ট (কর্মী) নিয়োগ করা থাকে যাঁরা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকদের কাজ পরিচালনায় সহযোগিতা করেন। সাধারণত প্রতি স্বেচ্ছাসেবককে সময় ও লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সংগঠনের দুজন প্রধান হোস্ট জিনাত আরা জিতু ও জেনিফার। তারাই মূলত এইচ বি রিতার দিক নির্দেশনায় বাংলাদেশে প্রত্যক্ষভাবে ও অনলাইনে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতিটি ইভেন্ট পরিচালনা করেন। জিনাত আরা জিতু সৈয়দপুর রেলওয়ে কোম্পানিতে কর্মরত আছেন। জেনিফার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সমাজ কর্মী।
নিউইয়র্কে বিগত বারো বছর শিক্ষকতা পেশায় জড়িত এইচ বি রিতা কী করে বাংলাদেশের অসহায় দুস্থদের পাশে কাজ করতে আগ্রহী হলেন, এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি স্পেশাল এডুকেশনে কাজ করি। সে সুবাদে প্রায়ই মনে হতো বাংলাদেশে অসংখ্য শিশু, বৃদ্ধ, প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ রয়েছে যারা সঠিক যত্ন, শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত এবং তাদের জন্য কিছু করা দরকার। কিন্তু সশরীরে দেশে উপস্থিত না থাকার কারণে একার পক্ষে এত বড় দায়িত্ব নেওয়া অসম্ভব ছিল। এ বিষয়টা আমাকে প্রায়ই পীড়া দিত। তখন ভাবলাম, মানুষের জন্য কিছু করি। সেই পীড়া থেকেই সামান্য কিছু করার প্রয়াসে ‘থিংকিং দ্য হিউম্যানিটি’ নিয়ে যাত্রা শুরু করি। ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে কল্যাণকর আরও বড় কিছু করার।’ তিনি আরও জানান, সংগঠনের হোস্ট এবং স্বেচ্ছাসেবকেরা খুবই নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করেন। নিরাপত্তার স্বার্থে সকল স্বেচ্ছাসেবকের জন্য এ বছর থেকে পরিচয়পত্র (আইডি) করা হয়েছে এবং রিসিট বুকের মাধ্যমে অনুদান সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁদের জন্য টি-শার্ট রয়েছে। সংগঠন পরিচিতির জন্য নিজস্ব অফিশিয়াল ওয়েবসাইট রয়েছে। ওয়েবসাইটটি হলো: http://thinkingthehumanity.com ,
ইমেইল: [email protected]
এবারও বাংলাদেশে শীতার্ত গরিব মানুষের সাহায্যের জন্য কম্বল বিতরণ করার প্রত্যয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে ইভেন্ট পরিচালনা করছেন এইচ বি রিতা। অতীতে সংগঠনটি সিলেট, রংপুর, সৈয়দপুর, চিটাগং, ঢাকা ও নরসিংদীতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করলেও এবার তাদের গন্তব্য উত্তরবঙ্গ। সব স্বেচ্ছাসেবক নিজ পরিবার, বন্ধু, ফেসবুকের মাধ্যমে অনুদান সংগ্রহ অব্যাহত রেখেছেন। তারা ‘থিংকিং দ্য হিউম্যানিটি’ লেখা বাক্স বানিয়ে ও আইডি গলায় ঝুলিয়ে রিসিট বুকসহ বিভিন্ন মার্কেটে অনুদান জোগাড় করতে যাচ্ছেন। কী পরিমাণ অনুদান সংগ্রহ হবে বা সাধারণত হয় জানতে চাওয়া হলে এইচ বি রিতা বলেন, ‘বিতরণের পুরো খরচ কখনো জোগাড় হয় আবার কখনো হয় না। সে ক্ষেত্রে আমি ব্যক্তিগতভাবে কন্ট্রিবিউট করে ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করি।’
শিক্ষকতার পাশাপাশি এইচ বি রিতা পত্রিকায় লেখেন। কবিতা প্রবন্ধের পাশাপাশি মনোজটিলতার নানা বিষয়ে বেশ কিছুদিন থেকে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা সংস্করণে নিয়মিত লিখছেন।