তালেবানদের ক্যাম্প ডেভিডে আমন্ত্রণ জানিয়ে সমালোচিত ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

আফগানিস্তানে একটি স্থায়ী সমাধানের উদ্দেশ্যে তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসন আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছিল। একটি চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার পথে ছিল। এসব কথা মোটামুটি সবাই জানে। তবে ট্রাম্প যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবকাশনিবাস হিসেবে পরিচিত ক্যাম্প ডেভিডে বৈঠক করতে তালেবান নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তাও আবার ৯/১১-এর প্রাক্কালে—এই তথ্য তাঁর প্রশাসনের বাইরে কারও জানা ছিল না।

গত শনিবার এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, ৮ সেপ্টেম্বর ক্যাম্প ডেভিডে তালেবান নেতাদের সঙ্গে এক গোপন বৈঠকের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে গত বৃহস্পতিবার কাবুলে তালেবানের হামলায় এক মার্কিন সেনাসহ ১৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর তালেবানের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না। আলোচনায় নিজেদের অবস্থান শক্ত করার জন্য তালেবান এই হামলা চালিয়েছে। এরা কেমন মানুষ, যারা নিজের দর-কষাকষির ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মানুষ খুন করতে প্রস্তুত?

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তালেবানের মদদপুষ্ট হয়ে আল–কায়েদা নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা চালায়। সেই হামলার বার্ষিকী সামনে রেখে তালেবান নেতাদের ক্যাম্প ডেভিডে আমন্ত্রণ জানানোর যে সিদ্ধান্ত ট্রাম্প নিয়েছিলেন, তা নিয়ে সব মহলেই তীব্র সমালোচনা হচ্ছে।

ট্রাম্পের সমর্থক হিসেবে পরিচিত রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির মেয়ে লিজ চেনি বলেছেন, ক্যাম্প ডেভিড হলো সেই স্থান, যেখানে মার্কিন নেতারা গুরুত্বপূর্ণ জাতীয়-আন্তর্জাতিক বিষয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য ব্যবহার করেন। সেখানে তালেবানদের ডেকে আনার প্রশ্নই ওঠে না।

রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য অ্যাডাম কিনজিঙ্গার বলেছেন, যারা আল–কায়েদার মতো সন্ত্রাসী দলকে আশ্রয় ও মদদ দিয়েছে, সেই তালেবানদের যুক্তরাষ্ট্রে পা ফেলার অনুমতি দেওয়া কখনোই উচিত নয়।

সম্প্রতি রিপাবলিকান পার্টি থেকে পদত্যাগ করেছেন জাস্টিন আমাশ। তিনি পরিহাস করে বলেছেন, ৯/১১-এর বার্ষিকীর প্রাক্কালে ট্রাম্প তালেবানদের ক্যাম্প ডেভিডে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

১০ মাস ধরে একটি শান্তিচুক্তির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র তালেবানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল। এই আলোচনায় নেতৃত্ব দেন ট্রাম্পের বিশেষ প্রতিনিধি জালমে খালিলজাদ। তালেবানের আপত্তির কারণে আফগান সরকার এই আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

একাধিক মার্কিন সূত্রে বলা হয়, চুক্তির ব্যাপারে সব পক্ষের সম্মতির আগে তালেবান নেতাদের ওয়াশিংটনে আমন্ত্রণ জানানোর ব্যাপারে ট্রাম্পের উপদেষ্টাদের মধ্যে কোনো মতৈক্য ছিল না। তবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন তালেবানের সঙ্গে যেকোনো রকম চুক্তির বিরোধিতা করছিলেন।

ট্রাম্প নিজেও খসড়া চুক্তিটির পূর্ণ অনুমোদন দেননি। তা সত্ত্বেও তিনি ওই বৈঠক আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টাদের মধ্যে এক বৈঠকে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ও শীর্ষ তালেবান নেতাদের ওয়াশিংটনে আমন্ত্রণের বিষয়টি আলোচিত হয়। ট্রাম্প সে সময় এই প্রস্তাবে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে তালেবান নেতাদের ক্যাম্প ডেভিডে আমন্ত্রণের প্রস্তাবটি ট্রাম্পের নিজের। এটি একটি দারুণ নাটকীয় ব্যাপার হবে। বিশ্বের প্রতিটি পত্রপত্রিকা ও টিভি অনুষ্ঠানে এই বৈঠকের খবর শিরোনাম হবে—এই সম্ভাবনায় ট্রাম্প অতি উৎসাহী হয়ে পড়েন।

ট্রাম্পের উৎসাহের অন্য কারণ—তাঁর বিশ্বাস ছিল, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন, তা এই বৈঠকের মাধ্যমে অর্জিত হবে। ১৮ বছরের পুরোনো এক সমস্যা, যা সমাধানে বারাক ওবামাও ব্যর্থ হয়েছেন, তা শেষ করতে পারলে নিজের সাফল্যের ঝুড়িতে আরও একটি পালক জুটবে। ফলে, আগামী বছর তাঁর পুনর্নির্বাচন ঠেকানো কঠিন হবে, এ ব্যাপারে ট্রাম্পের নিজের কোনো সন্দেহ ছিল না। ট্রাম্প নিজেকে একজন সেরা ‘ডিল মেকার’ বলে মনে করেন।

ওয়াশিংটন পোস্ট কূটনৈতিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে মন্তব্য করেছে, ট্রাম্প নিশ্চিত ছিলেন যে একবার মুখোমুখি বৈঠক হলে তালেবান ও আফগান নেতাদের চুক্তি স্বাক্ষরে তিনি রাজি করাতে পারবেন। একই ধারণার ভিত্তিতে তিনি কোনো কূটনৈতিক প্রস্তুতি ছাড়াই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জিং-উনের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন; যদিও এখন পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি। ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও মুখোমুখি আলোচনার প্রস্তাব ট্রাম্প দিয়েছেন, যা ইরান প্রত্যাখ্যান করেছে।

একের পর এক ‘ব্যক্তিগত কূটনীতি’ ব্যর্থ হওয়ায় সেরা ‘ডিল মেকার’ হিসেবে ট্রাম্পের দাবি নিয়ে বিভিন্ন মহলে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

তালেবানের সঙ্গে যে কায়দায় ট্রাম্প কূটনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন, তাকে খেলা খেলা বলে উপহাস করেছেন ডেমোক্রেটিক অ্যামি ক্লবুশার। তিনি অভিযোগ করেন, কাবুলে তালেবানের হামলা হয় চার দিন আগে। অথচ শনিবার পর্যন্ত তাদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি নিয়ে কথাবার্তা চলছিল। যে যুক্তিতে ট্রাম্প বৈঠক বাতিল করলেন, তারও কোনো অর্থ হয় না বলে তিনি মন্তব্য করেন।