ট্রাম্পের সেই ধর্ষণের ঘটনা জানতেন দুই নারী
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কলাম লেখক ই জা ক্যারলের ধর্ষণের অভিযোগ বিষয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন দুই নারী। ক্যারল মার্টিন ও লিসা বার্নব্যাচ নামের দুই নারী দাবি করেছেন, ধর্ষণের কথা তাঁরা জানতেন। ২৩ বছর আগে ঘটনার পরপর ক্যারল তাঁদের বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তবে তাঁদের একজন পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে বললেও ট্রাম্প ক্ষমতাধর উল্লেখ করে অন্যজন ঘটনাটি পুলিশকে না জানাতে বলেছিলেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের পডকাস্ট দ্য ডেইলিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওই দুই নারীর বক্তব্য প্রচার করা হয়। ৩০ মিনিট ৭ সেকেন্ডের ওই অডিও সাক্ষাৎকারটি স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার প্রচারিত হয়। ক্যারল মার্টিন ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে ছিলেন। আর লিসা বার্নব্যাচ একজন লেখক।
মার্কিন কলাম লেখক ক্যারলকে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ক্যারল ‘ডাহা মিথ্যা’ বলছেন এবং ‘তিনি আমার ধাঁচের না’।
নিউইয়র্ক টাইমসের পডকাস্টে দুই নারীর প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলা প্রসঙ্গে আজ শুক্রবার বিবিসি অনলাইন সংবাদ প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, ৭৫ বছর বয়সী ক্যারল ১৬তম নারী, যিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ আনলেন। যদিও ৭৩ বছরের ট্রাম্প তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বিশ্বজুড়ে খ্যাতনামা ফরাসিভিত্তিক জীবনযাপনবিষয়ক ম্যাগাজিন ‘এল’–এর কলাম লেখক ক্যারল একই পডকাস্টে বলেছেন, ঘটনাটি ঘটার পর তিনি বার্নব্যাচকে ফোন করেছিলেন। তিনি তাঁকে (বার্নব্যাচ) বলেছিলেন যে ট্রাম্প তাঁকে জোর জবরদস্তি করেছেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বার্নব্যাচ তাঁকে বলেছিলেন, এটা ধর্ষণ এবং পুলিশকে তা জানানো উচিত।
বার্নব্যাচ বলেন, ঘটনাটি শুনে তিনি ক্যারলকে বলেছিলেন, ‘চলো পুলিশের কাছে যাই। আমি তোমার সঙ্গে যাব।’ কিন্তু তাঁর বন্ধু পুলিশের কাছে যেতে অস্বীকৃতি জানান।
ঘটনাটির বর্ণনা করতে গিয়ে ক্যারল বলেন, তাঁর ও ট্রাম্পের মধ্যে ওই সময় ‘লড়াই’ হয়েছিল, ‘অপরাধ’ নয়। তিনি বলেন, তাঁর এমন মনে হয়েছিল যে তাঁর উসকানিতে ট্রাম্প এমন আচরণ করেছেন। এ ঘটনায় নিজের কতটা দায় আছে বলে মনে করেন প্রশ্ন করলে ক্যারল জবাব দেন, ‘এক শ ভাগ’।
ক্যারল জানান, ঘটনার দুই-তিন দিন পর তিনি তা মার্টিনকে জানান। মার্টিন তাঁকে পুলিশের কাছে যেতে নিষেধ করে বলেন, ট্রাম্প ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তাঁর বহু আইনজীবী আছেন।
পডকাস্টে বিষয়টি তুলে ধরে মার্টিন বলেন, ‘আমি তাঁকে (ক্যারল) বলেছি, এটা কাউকে বলতে যেয়ো না। আমিও কাউকে বলব না।’
এল ম্যাগাজিনে ১৯৯৩ সাল থেকে ‘আসক ই জিন’ শিরোনামের উপদেশমূলক কলাম লেখেন ক্যারল।
গত শুক্রবার ই জা ক্যারল নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রথমবারের মতো ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তিনি জানান, ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৯৫ সালের শেষে বা ১৯৯৬ সালের শুরুতে। নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে বের্গডর্ফ গুডম্যান স্টোরে কেনাকাটা করতে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। ওই সময় তিনি ছিলেন উঠতি তারকা। আর ট্রাম্প আবাসন ব্যবসার কেউকেটা। ট্রাম্প অন্য এক নারীর জন্য পোশাক কিনতে গিয়ে তাঁর পরামর্শ চেয়েছিলেন এবং কৌতুকের সঙ্গে বলেছিলেন তিনি (ক্যারল) মডেল হিসেবে পোশাকটি পরে তাঁকে দেখাবেন কি না। ক্যারল জানান, ট্রাম্প আর তিনি পোশাক পরিবর্তনের কক্ষে যান। ওই সময় হঠাৎ ট্রাম্প তাঁকে ধাক্কা দিয়ে দেয়ালে চেপে ধরেন এবং জোর–জবরদস্তি করতে থাকেন। অনেক চেষ্টার পর তিনি ট্রাম্পকে সরাতে সক্ষম হন।
ক্যারল জানান, তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার কথা ভাবছেন।
নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনে ক্যারলের সাক্ষাৎকার প্রকাশের এক দিন পর শনিবার এক বিবৃতিতে ট্রাম্প তাঁর বিরুদ্ধে আনা ধর্ষণের অভিযোগকে ‘কল্পকাহিনি’ বলে উড়িয়ে দেন। ওই বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘ক্যারলের সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি। নতুন বই বেচার চেষ্টা করছে সে, তার কর্মকাণ্ড সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। এই বই কল্পকাহিনি শাখায় বিক্রি করা উচিত।’ ডেমোক্রেটিক পার্টি ক্যারল কিংবা নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনের সঙ্গে কাজ করছে, এমন কোনো তথ্য পেলে হোয়াইট হাউসকে জানাতে বলেছেন তিনি।
গত সোমবার মার্কিন সংবাদপত্র দ্য হিলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও এ অভিযোগের বিষয়টি উড়িয়ে দেন ট্রাম্প। ক্যারল তাঁর নতুন বই ‘হোয়াট ডু উই নিড মেন ফর? এ মোডেস্ট প্রপোজাল’–এর কাটতি বাড়াতে এমন অভিযোগ করেছেন বলে দাবি করেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে ক্যারলের ছবি নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনে প্রকাশ হলেও ট্রাম্প তাঁকে চেনেন না বলে জানান। তিনি বলেন, ‘তিনি (ক্যারল)...এটা ভয়ানক ব্যাপার যে মানুষ এ ধরনের কথা বলতে পারে।’ ক্যারলের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর এ নিয়ে তৃতীয়বারে মতো অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প।
এর আগে ২০১৬ সালে ট্রাম্প তাঁর বিরুদ্ধে জেসিকা লিডস নামে আরেক নারীর অভিযোগও এভাবে অস্বীকার করেছিলেন। ওই নারী অভিযোগ করেছিলেন, আশির দশকে উড়োজাহাজে তাঁকে বাজেভাবে স্পর্শ করেছিলেন ট্রাম্প।