ট্রাম্পকে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মার্কিন কংগ্রেস দ্বিতীয় দফা অভিশংসন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো প্রেসিডেন্টকে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসন করা হলো। ১৩ জানুয়ারি প্রতিনিধি পরিষদে ২৩২-১৯৭ ভোটে অভিশংসন প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিজের দলের ১০ জন আইনপ্রণেতা এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এর আগে ২০১৯ সালে ইউক্রেন কেলেঙ্কারির কারণে কংগ্রেসে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রথম দফা অভিশংসন করা হয়েছিল।
৬ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানে ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো হওয়া সমর্থকদের তাণ্ডবে ক্যাপিটল ভবন রক্তে রঞ্জিত হয়। ঝরে পড়ে পাঁচটি তাজা প্রাণ। কংগ্রেসের অধিবেশনে যখন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনকে প্রত্যয়িত করা হচ্ছিল, তখনই মার্কিন ইতিহাসের ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটে। লোকজন দরজা–জানালা ভেঙে ক্যাপিটল হিলে ঢোকে এবং অফিস তছনছ করে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আহ্বানে সারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমর্থকদের সমাবেশ ঘটেছিল ওয়াশিংটন ডিসিতে।
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির নেতৃত্বে দ্রুততার সঙ্গে অভিশংসন প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। নতুন প্রেসিডেন্ট ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন। ক্ষমতার শেষ সপ্তাহে এসে আবার অভিশংসনের মুখোমুখি হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
অভিশংসন প্রস্তাব কংগ্রেসে গৃহীত হওয়ার কিছুক্ষণ পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন। টুইটার, ফেসবুকসহ সব সামাজিক মাধ্যমে এর মধ্যে নিষিদ্ধ হওয়া ট্রাম্প তাঁর ভিডিও বার্তায় অভিশংসন নিয়ে কোনো কথা উচ্চারণ করেননি।
ট্রাম্প বলেছেন, ৬ জানুয়ারি সহিংসতার জন্য দায়ী লোকজনকে বিচারের সম্মুখীন করা হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। যারা এসব করবে, তারা ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ আন্দোলনের ক্ষতি করবে বলে ট্রাম্প তাঁর ভিডিও বার্তায় উল্লেখ করেন।
২০ জানুয়ারি শান্তিপূর্ণভাবে নতুন প্রশাসনের অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে তিনি তাঁর বার্তায় উল্লেখ করেন।
কংগ্রেসের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া অভিশংসন প্রস্তাবটি এখন সিনেটে যাওয়ার কথা। সিনেটে রিপাবলিকান পার্টির নেতা মিচ ম্যাককনেল এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, প্রস্তাবটি ট্রাম্পের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সিনেটে আলোচনায় আসবে না।
মিচ ম্যাককনেল বলেছেন, দেশের জন্য এখন নতুন প্রশাসনের ক্ষমতাগ্রহণ সাবলীল হওয়াটাই জরুরি। দেশের স্বার্থে প্রতিনিধি পরিষদে গৃহীত অভিশংসন প্রস্তাবটি নিয়ে সিনেটে আলোচনায় উঠবে ট্রাম্প ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পরই।
গতকাল কংগ্রেসে দিনভর টানা বিতর্কে ক্ষুব্ধ আইনপ্রণেতারা একের পর এক ডোনাল্ড ট্রাম্পের লজ্জাহীন আচরণ নিয়ে কথা বলেন। ট্রাম্প সংবিধানের নামে নেওয়া শপথ ভঙ্গ করেছেন উল্লেখ করে তাঁরা বলেছেন, ট্রাম্পের হাতে আমেরিকার গণতন্ত্র পদদলিত হয়েছে। খারাপ নজির সৃষ্টি হয়েছে। ১০ জন রিপাবলিকান সদস্যদের কণ্ঠেও ছিল একই বক্তব্য। তাঁরা বলেছেন, এখন দল করার সময় নয়। দেশের গণতন্ত্রের ওপর এমন আঘাতের সময় দলের অবস্থানের বাইরে দাঁড়িয়ে তাঁরা ইমপিচমেন্টের পক্ষে তাঁদের ভোট প্রদানের কথা জানান।
রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের মধ্যে যাঁরা অভিশংসনের বিপক্ষে বলেছেন, তাঁদের বক্তব্য ছিল শুধু রাজনৈতিক কারণেই এমন প্রস্তাব নেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বিভক্ত রাজনৈতিক সময়ে এমন অভিশংসন প্রস্তাব দেশের জন্য ভালো পরিণাম নিয়ে আসবে বলে তাঁরা মনে করেন না। আইনপ্রণেতারা সহিংসতা এবং নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের ভুয়া দাবির সমালোচনা করেন।
এদিকে ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে সহিংসতার জন্য ব্যাপক ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ট্রাম্পের অন্ধ ভক্ত, অর্ধশিক্ষিত শ্বেতাঙ্গ সমর্থকেরাই নয়, পাওয়া যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ লোকজনকেও। অলিম্পিক সাঁতারে গোল্ড মেডেল পাওয়া অ্যাথলেট থেকে শুরু করে সাবেক সেনাসদস্যদের উপস্থিতি ছিল ৬ জানুয়ারির সহিংসতায়। এফবিআই বোমা তৈরির সরঞ্জাম পাচ্ছে, টার্গেট করে কাদের ওপর হামলা করা হবে, তার তালিকা পাচ্ছে। ব্যাপক তদন্তের মাধ্যমে সহিংসতার জন্য এসব দায়ী লোকজনকে বিচারের সম্মুখীন করা হচ্ছে।
২০ জানুয়ারি জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠান ঘিরে শুধু ওয়াশিংটন ডিসিই নয়, পুরো ম্যাটরও ওয়াশিংটন এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই সড়ক–মহাসড়কে তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। ২০ হাজার ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য এবং অন্তত আটটি রাজ্য থেকে পুলিশের চৌকস দল ওয়াশিংটনে অবস্থান নিয়েছে। নিউইয়র্ক থেকেই যোগ দিচ্ছে ২০০ জনের পুলিশের দল।
ওয়াশিংটন ডিসি ছাড়াও আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ নগরীগুলোয় নিরাপত্তা টহল বাড়ানো হচ্ছে। ট্রাম্প–সমর্থক রক্ষণশীলরা ১৭ জানুয়ারি আমেরিকাজুড়ে সমাবেশ করার প্রচারপত্র বিলি করেছে। প্রতিটি রাজ্য এসব ডান রক্ষণশীলের ওপর করা নজর রাখা হচ্ছে। নগর ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোয় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস এক রিপোর্টে জানিয়েছে, এফবিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ক্রিস্টোফার ওরেই এবং ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের পরিচালক কেন কুসিনেলি আমেরিকার সব নগর পুলিশপ্রধানের সঙ্গে ৪৫ মিনিটের টেলিকনফারেন্স করেছেন। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করাসহ যেকোনো গোয়েন্দা তথ্য দ্রুততার সঙ্গে এফবিআইয়ের সঙ্গে বিনিময় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।