মার্কিন নির্বাচন ২০২০
ট্রাম্পের শেষ সুযোগ, বাইডেনের চ্যালেঞ্জ ভুল না করা
মুখোমুখি ট্রাম্প–বাইডেন
• কখন: বৃহস্পতিবার, নিউইয়র্ক সময় সন্ধ্যা ৯: ০০, ঢাকা সময় শুক্রবার, সকাল ৮: ০০
• স্থান: ন্যাশভিল, টেনেসি
• কোথায় দেখা যাবে: সিএনএন ও অন্যান্য মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক, ফেসবুক ও ইউটিউব
ট্রাম্পের জন্য পুরোনো অভ্যাস বদলানো কঠিন। দ্বিতীয় বিতর্কের আগে এর সঞ্চালক এনবিসি টিভির হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি ক্রিস্টেন ওয়েলকারকে আক্রমণ করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি। এই আফ্রিকান-আমেরিকান নারী সাংবাদিক তাঁর পেশাদারির জন্য সুপরিচিত। সে কথা অগ্রাহ্য করে টুইটারে একাধিক বার্তায় ট্রাম্প তাঁকে ‘ভয়ানক খারাপ ও পক্ষপাতদুষ্ট’ হিসেবে অভিযুক্ত করেন। ট্রাম্পের কথায়, ক্রিস্টেন ‘আরেক ফেইক নিউজ সাংবাদিক’। তাঁর সে কথার প্রতিবাদ করেছেন একাধিক নারী সাংবাদিক। সিবিএসের ক্যাথরিন ওয়াটসন বলেছেন, ক্রিস্টেন সাংবাদিক হিসেবে দৃঢ়চেতা ও অত্যন্ত পক্ষপাতহীন। এমনিতেই মুখ আলগা কথাবার্তার জন্য দেশের নারী ভোটাররা ট্রাম্পের প্রতি বিমুখ। এই ঘটনার ফলে তাঁর নারী সমর্থক বাড়ল—এ কথা কেউ বলবে না।
জাতীয় জনমতে বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় এই বিতর্ক ট্রাম্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোভিডের নীতিমালা উপেক্ষা করে তিনি একের পর এক নির্বাচনী সভা করে যাচ্ছেন বটে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই লাগামবিহীন কথাবার্তার কারণে অপ্রয়োজনীয় বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। যেমন এই সপ্তাহে নিজ সমর্থকদের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সংক্রামক বিশেষজ্ঞ ফাউচিকে ‘ইডিয়ট’ বলে মন্তব্য করেছেন। অ্যারিজোনার এক ভাষণে তিনি কোভিড-১৯-এর ব্যাপারে অতি আগ্রহ দেখানোর জন্য সিএনএনকে ‘বাস্টার্ড’ বলে গাল দিয়েছেন। এতে তিনি নিজের অনুগত সমর্থকদের বিস্তর হাততালি পেলেও অন্যদের সমালোচনার শিকার হয়েছেন। রিপাবলিকান নেতারাই বলেছেন, এসব অবান্তর কথাবার্তার ফলে ট্রাম্প নিজেই নিজের বিপদ টেনে আনছেন।
এই দ্বিতীয় বিতর্কে ট্রাম্পের প্রধান কাজ হবে মেজাজ ঠান্ডা রাখা ও যুক্তিপূর্ণভাবে নিজের সাফল্য তুলে ধরা। ইতিমধ্যে প্রায় সোয়া দুই লাখ আমেরিকান কোভিডের কারণে মারা গেছেন। স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্ন উঠবে। আয়কর ফাঁকি দেওয়ার ব্যাপারটি আগে থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। তিন দিন আগে এক নতুন প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, চীনের ব্যাংকে ট্রাম্পের বড় অঙ্কের হিসাব রয়েছে, সেখানে তিনি নিয়মিত কর পরিশোধ করেছেন। সে কথা উল্লেখ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা একদিন আগে ফিলাডেলফিয়ায় এক ভাষণে তাঁকে একহাত নিয়েছেন। ওবামার কথায়, এমন ঘটনা তাঁর বেলায় ঘটলে ট্রাম্পের সমর্থক ফক্স নিউজ নির্ঘাত তাঁকে ‘বেইজিং ব্যারি’ নামে অভিষিক্ত করত। উল্লেখ্য, ওবামার বন্ধুরা ছাত্রাবস্থায় বারাক না বলে তাঁকে ব্যারি নামে ডাকত। কোভিড প্রশ্নে ট্রাম্পের ব্যর্থতাও ওবামার পরিহাস এড়াতে পারেনি। তিনি বলেন, হোয়াইট হাউসে থেকেও যে লোক নিজেকে কোভিড থেকে রক্ষা করতে পারে না, সে কী করে দেশের মানুষকে এই দুর্যোগ থেকে রক্ষা করবে!
ওবামার হুল ফোটানো কথায় ট্রাম্পের গায়ে ফোসকা পড়ার কথা। ওবামাকে তিনি মোটেও সহ্য করতে পারেন না। কেউ কেউ বলছেন ট্রাম্পকে ক্ষিপ্ত করতেই ঠিক বিতর্কের আগের দিন ওবামা এই ভাষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
ট্রাম্প যত অস্বস্তি বোধ করুন না, কোভিড ও আয়করের প্রশ্নের মুখোমুখি তাঁকে হতেই হবে। এর আগে তিনি শ্বেত শ্রেষ্ঠত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোর নিন্দা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, নির্বাচনে পরাজিত হলে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে সম্মত হবেন কি না, সে প্রশ্নেরও স্পষ্ট কোনো জবাব দেননি। অনুমান করা যায়, এই প্রশ্ন আবারও উঠবে।
বিতর্ক যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সে জন্য নিরপেক্ষ বিতর্ক কমিশন এবারে প্রতিটি বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতে তাঁদের দুজনকে দুই মিনিট করে সময় দিয়েছে। এই সময় যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়, সে জন্য অপর বক্তার মাইক্রোফোন মিউট বা নীরব রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিতর্ক কমিশনের এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের ভালো লাগেনি। তিনি যথারীতি তাঁদেরও পক্ষপাতিত্বের দোষে অভিযুক্ত করেছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, মাইক্রোফোন নীরব থাকলেও তিনি নীরব থাকবেন না। প্রথম বিতর্কে তাঁর ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে বাইডেন একপর্যায়ে তাঁকে ক্লাউন বলে ভর্ৎসনা করেছিলেন।
একাধিক রিপাবলিকান নির্বাচনী রণকৌশলবিদ অবশ্য মনে করেন, মাইক্রোফোন নীরব রাখা ট্রাম্পের জন্য লাভজনক প্রমাণিত হতে পারে। এঁদের একজন সারাহ লংওয়েল, তিনি বিতর্ক কমিশনের সিদ্ধান্তকে রাত তিনটার সময় শুঁড়িখানার বাইরে ঝগড়ার জন্য অস্থির এক মাতালকে থামাতে তাঁর বন্ধুদের চেষ্টার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
অন্যদিকে, জো বাইডেনের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আক্রমণ এড়িয়ে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের পরিকল্পনা গুছিয়ে তুলে ধরা। ট্রাম্প তাঁর পুত্র হান্টার বাইডেন ও ইউক্রেনকে জড়িয়ে আক্রমণ করবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রশ্নটি বাইডেনের জন্য অস্বস্তিকর। প্রথম বিতর্কে হান্টারের মাদকাসক্তির কথা উল্লেখ করে সে প্রশ্ন তিনি ভালোভাবে উতরে গিয়েছিলেন। ট্রাম্প যে এবারও সে প্রসঙ্গ তুলবেন, তাতে সন্দেহ নেই। ছেলেকে নিয়ে কোনো বিতর্কে না জড়াতে বাইডেনের উপদেষ্টারা তাঁকে পরামর্শ দিয়েছেন। অকারণ দীর্ঘ উত্তর দেওয়া বাইডেনের পুরোনো অভ্যাস, সে ভুল না করতেও তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।