জরুরি অবস্থা জারির হুমকি দিলেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন বলে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য ফেডারেল সরকারের কাজকর্ম বন্ধেরও হুমকি দেন।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসব কথা বলেন। এর আগে হোয়াইট হাউসে ডেমোক্রেটিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। সেখানেও তিনি একই কথা বলেছেন। আলোচনায় ডেমোক্রেটিক নেতারা তাঁকে অনুরোধ করেন, দেয়ালের জন্য অর্থায়নের প্রশ্নটি তাঁরা আলাদাভাবে আলাপ-আলোচনায় প্রস্তুত আছেন, কিন্তু সেই অজুহাতে সরকার বন্ধ রাখা অযৌক্তিক।
সংবাদ সম্মেলনে ওই বৈঠককে ‘খুব কার্যকর’ উল্লেখ করে শুরুতে রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট ইতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। তবে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প প্রয়োজনে ফেডারেল সরকারের কাজকর্ম বছরের পর বছর ধরে বন্ধ রাখার হুমকি দেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তাই বলেছি, আমি একদম তাই-ই বলেছি। আমি মনে করি না, সেটা হবে। তবে এর জন্য আমি প্রস্তুত রয়েছি।’
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি যা করছি, এর জন্য আমি গর্বিত। আমি এটাকে কাজকর্ম বন্ধ বলি না, আমি এটাকে বলি, আমাদের দেশের স্বার্থ ও সুরক্ষার জন্য যা করা উচিত তা।’
অর্থ বরাদ্দের ব্যাপারে কংগ্রেসের অনুমোদন এড়াতে ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগের কথা ভাবছেন কি না—জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি তা করতে পারি। আমরা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারি এবং দ্রুত দেয়াল নির্মাণ করতে পারি। কাজটি করার জন্য এটা আলাদা একটি উপায়।’
প্রতিনিধি পরিষদের নবনির্বাচিত স্পিকার ডেমোক্রেটিক দলের ন্যান্সি পেলোসি শুক্রবারের বৈঠকে ‘বাদানুবাদ’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
সিনেটে ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্টকে বলেছি, ফেডারেল সরকারের কাজকর্ম চালু করা উচিত। তিনি (ট্রাম্প) এতে বাধা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি দীর্ঘ সময় ধরে সরকারের কাজকর্ম বন্ধ রাখবেন। সেটা মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর হতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে বাজেট বরাদ্দ ইস্যুতে মতবিরোধের জের ধরে গত ২২ ডিসেম্বর থেকে ফেডারেল সরকারের একাংশের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। আট লাখ ফেডারেল কর্মী কোনো বেতন পাচ্ছেন না। মেক্সিকোর সঙ্গে নিরাপত্তা ‘দেয়াল’ নির্মাণের জন্য ট্রাম্পের দাবি অনুসারে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার দিতে ডেমোক্র্যাটদের আপত্তি রয়েছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর দাবিমতো অর্থ না দেওয়া পর্যন্ত তিনি কোনো বাজেট প্রস্তাবে স্বাক্ষর করবেন না। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা জানিয়েছেন, ১৩০ কোটি ডলারের চেয়ে এক পয়সাও বেশি দিতে তাঁরা সম্মত হবেন না।
হোয়াইট হাউস সূত্রে বলা হয়েছে, গত মাসেই ট্রাম্প জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিষয়টি নিজের উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাঁরা মনে করেন, অবৈধ অভিবাসনের কারণে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি—এই যুক্তিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণার আইনি ভিত্তি রয়েছে। একবার তেমন ঘোষণা জারি হলে ট্রাম্প নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ থেকে দেয়াল নির্মাণ বাবদ অর্থ খরচ করার নির্দেশ দিতে পারেন। তবে এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তিনি মামলার মুখ পড়বেন, সে কথাও নিশ্চিত। রাজনৈতিকভাবেও এটি তাঁর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ দেশে প্রকৃত কোনো জরুরি অবস্থা বিরাজ করছে না।
ফেডারেল সরকারের একাংশ টানা দুই সপ্তাহ বন্ধের ফলে প্রায় আট লাখ সরকারি কর্মচারী বেকায়দায় পড়েছেন। নিম্ন আয়ের মানুষ বাড়ি ভাড়া ও নিয়মিত খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নিয়মিত বেতন পাওয়ার চেয়ে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নটি অনেক বেশি জরুরি। তিনি দাবি করেন, দেশের অধিকাংশ মানুষ তাঁর দাবির প্রতি সহমত পোষণ করে।
সবশেষ এক জনমত জরিপ অনুসারে, দেশের ৪৭ শতাংশ মানুষ ফেডারেল সরকার বন্ধ থাকার জন্য ট্রাম্পকে দায়ী করেছেন। ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করেছেন এমন আমেরিকানের সংখ্যা ৩৩ শতাংশ।
বেশির ভাগ বিশ্লেষক মনে করেন, নির্বাচনের আগে থেকেই দেয়ালের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ট্রাম্প নিজেই এক ফাঁদে পড়ে গেছেন। কংগ্রেসের একাংশ প্রতিনিধি পরিষদ এখন ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে। এই অবস্থায় তিনি নিজের সমর্থকদের সামনে কোনোভাবেই নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করতে চান না বলেই এমন অনমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছেন। নতুন কংগ্রেসের হাতে তাঁকে অভিশংসিত করার ক্ষমতা রয়েছে। ট্রাম্প সে ব্যাপারেও সচেতন।
শুক্রবার তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন, অভিশংসনের কোনো ইচ্ছা তাঁদের নেই।
কথাটা অংশত ঠিক। ডেমোক্রেটিক নেতারা এই মুহূর্তে অভিশংসনের প্রশ্নটি উত্থাপন করে ট্রাম্পের হাতে সমালোচনার কোনো অস্ত্র তুলে দিতে চান না।
ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাঁদের বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারের তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি অবশ্য এ কথাও বলেছেন, ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করা যাবে না, তিনি সে কথায় একমত নন।