ক্যাপিটল ভবনে হামলার প্রেক্ষাপট তৈরি ৬৫ দিন ধরে
৬ জানুয়ারির ঘটনার রেশ এখনো রয়েছে। অনলাইনে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বলা হচ্ছে, ২০ জানুয়ারি আবারও এমন ঘটনা ঘটতে পারে। হামলাকারীরা এখনো অনলাইনে সক্রিয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় অনেকেই বিস্মিত। গত বুধবারের ওই হামলায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারাও। কিন্তু যাঁরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে ভোট কারচুপির ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ও অনলাইনে কট্টরপন্থী গ্রুপগুলোর কার্যক্রমের ওপর নজর রেখেছিলেন, তাঁরা সম্ভবত বিস্মিত হননি। কারণ, সেখানে হামলার ইঙ্গিত সব সময়ই ছিল।
ষড়যন্ত্রতত্ত্বের বীজ বোনা হয়েছিল নির্বাচনের আগেই। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ষড়যন্ত্রতত্ত্বের একটি বড় যাত্রা শুরু হয় ৩ নভেম্বর নির্বাচনের রাতে। ওই দিন ভোট গণনা শুরুর পর রাত আড়াইটার দিকে হোয়াইট হাউসে ইস্ট রুমে যান এবং নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমরা বিজয়ী হতে চলেছি। স্পষ্টভাবে বললে, আমরা বিজয়ী হয়েছি।’ এর এক ঘণ্টা পরই ট্রাম্প টুইট করেন, তাঁরা (ডেমোক্রেটিক পার্টি) নির্বাচনের জয় চুরি করার চেষ্টা করছে।
আদতে ট্রাম্প নির্বাচনে জেতেননি। কিন্তু তাঁর গোড়া সমর্থকেরা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আমলে নিয়ে ৩ নভেম্বর নির্বাচনের ৬৫ দিন পর ক্যাপিটলে হামলা চালালেন। কিউঅ্যানন ষড়যন্ত্রতত্ত্বে বিশ্বাসী ‘স্টপ দ্য স্টিল’ গ্রুপের সদস্য এবং বিভিন্ন ডানপন্থী উগ্রবাদী সংগঠনের সদস্যরা এ হামলায় অংশ নেন। কিউঅ্যানন ষড়যন্ত্রতত্ত্ব অনুযায়ী, শয়তানের উপাসক ও শিশু নিপীড়ক একটি গোপন সংগঠন বিশ্বব্যাপী তৎপরতা চালাচ্ছে। ট্রাম্প এ গোপন সংগঠনের বিরুদ্ধে একাই লড়ে যাচ্ছেন।
ক্যাপিটল ভবনে হামলার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর টুইটার ট্রাম্পপন্থীদের অ্যাকাউন্ট সরাতে শুরু করেছে। সবশেষে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্টটিও স্থায়ীভাবে বন্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এর আগেই যা হওয়ার হয়ে গেছে।
এ নির্বাচনে কারচুপি হতে পারে, এমন ষড়যন্ত্রতত্ত্বের বীজ ট্রাম্প বুনেছিলেন নির্বাচনের আরও কয়েক মাস আগে। নির্বাচনের দিন এ ভোট কারচুপির অভিযোগ বড় আকার ধারণ করে। পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়া থেকে একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। এতে অভিযোগ করা হয়, এক রিপাবলিকান পর্যবেক্ষককে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। মুহূর্তে এ ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। কিন্তু অভিযোগটি ছিল মিথ্যা। এমন অনেক ভিডিও, ছবি, গ্রাফিকস ও অভিযোগ ইন্টারনেটনির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
এদিনের পর নতুন একটি হ্যাশট্যাগ চালু হয়। সেটি হলো, ‘স্টপ দ্য স্টিল’ (ভোট চুরি বন্ধ করো)। এ হ্যাশট্যাগ বার্তার পেছনে আরেকটি বার্তা ছিল। সেটি হলো ট্রাম্প আসলে বিশাল জয় পেয়েছেন। কিন্তু একটি অশুভ শক্তি তাঁর জয় চুরি করেছে।
৪ নভেম্বর ২০২০, বুধবার। তখনো ভোট গণনা চলছিল। তখনো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো গণমাধ্যম ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের জয় ঘোষণা করেনি। কিন্তু ট্রাম্প আবারও নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেন এবং দাবি করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে।’
ট্রাম্প এ দাবির পক্ষে কোনো তথ্য–প্রমাণ তখন তুলে ধরতে পারেননি। এমনকি এখন পর্যন্ত কোনো মামলাতেও তাঁর আইনজীবীরা এর কোনো গ্রহণযোগ্য প্রমাণ তুলে ধরতে পারেননি। কিন্তু ট্রাম্পের এ অভিযোগ চাউর হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। বুধবার বিকেলে স্টপ দ্য স্টিল নামে ফেসবুকে একটি গ্রুপ খোলা হয়।
গ্রুপটির সদস্যসংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। পরদিন সকালে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার এর সদস্যসংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়ে যায়। ফেসবুকে কোনো গ্রুপে সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ইতিহাস সৃষ্টি করে এ গ্রুপ।
স্টপ দ্য স্টিল গ্রুপে যেসব অভিযোগ এনে পোস্ট দেওয়া হয়েছিল, তার অধিকাংশই ছিল মিথ্যা। গ্রুপে অভিযোগ করা হয়, নির্বাচনী সহিংসতায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। ভোটিং মেশিন নাকি এমনভাবে প্রোগ্রাম করা ছিল, যাতে ট্রাম্পের ভোট বাইডেনের ঝুলিতে যায়। অভিযোগ শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ ছিল না। কিছু পোস্টে এ–ও বলা হয়, এখন দরকার ‘গৃহযুদ্ধ’ কিংবা ‘বিপ্লব’। ফলে বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রুপটি সরিয়ে দেয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এর আগেই প্রায় পাঁচ লাখ মন্তব্য, লাইক, শেয়ার ও প্রতিক্রিয়া জমা পড়ে। এ ছাড়া আরও কিছু গ্রুপ তৈরি হয় ফেসবুকে। ভোট চুরির ধারণা ব্যাপকভাবে ছড়াতে শুরু করে ইন্টারনেটে। পরে একটি ওয়েবসাইটও তৈরি হয়, ‘স্টপ দ্য স্টিল’ হ্যাশট্যাগকে কেন্দ্র করে।
৭ নভেম্বর, শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো জো বাইডেনের জয়ের খবর দেয়। আর এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন গোড়া ট্রাম্প-সমর্থকেরা। ওই দিনই পরিকল্পনা করা হয়, পরের শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভ হবে। এর নাম দেওয়া হয় ‘মিলিয়ন মাগা (মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন, ট্রাম্পের নির্বাচনী স্লোগান) মার্চ’।
শনিবারের বিক্ষোভে ট্রাম্পপন্থীরা ওয়াশিংটনে অনেক বড় সমাবেশ করতে না পারলেও হাজার হাজার সমর্থক ফ্রিডম প্লাজায় জড়ো হন। এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্পপন্থীদের অস্থিতিশীলতার সূচনা হয়। সেদিন ‘মাগা’ টুপি পরা ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নেড়ে উসকানি দেন। ওই দিন ট্রাম্প যে ক্যাপটি পরে তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নেড়েছিলেন, সেটিতেও লেখা ছিল, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন।’ কট্টর ডানপন্থী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও শনিবারের এ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
এরপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দুই আইনজীবী নির্বাচনে কারচুপির ষড়যন্ত্রতত্ত্বে যুক্ত হন। এ দুজন হলেন সিডনি পাওয়েল ও এল লিন উড। তাঁরা ঘোষণা দেন, ভোট চুরির পুরো বিষয়টি তাঁরা সামনে আনবেন। ফলে তাঁরা ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে রাতারাতি নায়ক বনে যান। এ ছাড়া ফক্স নিউজকে পাওয়েল বলেন, এ ভোট চুরিতে জড়িত ‘ক্রাকেন’কে প্রকাশ করবেন তিনি। ইউরোপের উপকথার চরিত্র ক্রাকেন। সাগরের দানবাকৃতির এক জীবকে ক্রাকেন বলা হয়। পাওয়েলের এ ঘোষণার পর ক্রাকেনকে নিয়ে মিম তৈরি শুরু হয়। আর এ ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ব্যাপকভাবে আকর্ষণ করে কিউঅ্যানন গ্রুপকে।
সিডনি পাওয়েল ও এল লিনউড অনলাইনে ব্যাপক সাড়া ফেললেও কার্যত আইনি লড়াইয়ে তাঁরা কিছুই করতে পারেননি। নভেম্বরের শেষ দিকে তাঁরা ২০০ পৃষ্ঠার নথি প্রকাশ করেন। এ নথিতে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়, নির্বাচনের ফল ঠেকাতে ষড়যন্ত্রতত্ত্বের ভিত্তিতে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মামলা করা হয়েছিল। যেসব মিম তৈরি করা হচ্ছিল, তা চলতেই থাকে। ক্যাপিটলে হামলার আগে ‘ক্রাকেন’ ও ‘রিলিজ দ্য ক্রাকেন’—এ শব্দগুলো ১০ লাখের বেশি বার ব্যবহৃত হয়েছে টুইটারে।
নভেম্বরের নির্বাচনে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ফলাফলের দিকে গভীর দৃষ্টি ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। এ অঙ্গরাজ্যের ভোট পুনর্গণনাও হয়েছে। কিন্তু তিনি জিততে পরেননি। জর্জিয়ায় হেরে যাওয়ার পর সেখানকার নির্বাচন কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গভর্নর ব্রায়ান কেম্পসহ বেশ কয়েকজনকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে আখ্যা দেন ট্রাম্প–সমর্থকেরা। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে অঙ্গরাজ্যটির শীর্ষ নির্বাচন কর্মকর্তা গ্যাব্রিয়েল স্টারলিং প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দেন। এক আবেগঘন বক্তব্যে তিনি বলেন, যে পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে, তাতে শিগগির কেউ আহত হতে পারেন, কাউকে গুলি করা হতে পারে, কাউকে হত্যা করা হতে পারে। এটা ঠিক নয়।
সেখানকার আরেক নির্বাচন কর্মকর্তার স্ত্রীকে যৌন নিপীড়নের হুমকিও দেওয়া হয়।
মিশিগানে সচিব জোসলিন বেনসন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের অপদস্থ করেন বিক্ষোভকারীরা। হুমকি দেওয়া হয় অ্যারিজোনার হোম সেক্রেটারি কেটি হবসকে।
এরপর ১২ ডিসেম্বর আবারও স্টপ দ্য স্টিল সমাবেশ হয়। এ সমাবেশে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের ‘খ্রিষ্টধর্মের সৈন্য’ হিসেবে আখ্যা দেন ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন। ১৪ ডিসেম্বর ইলেকটোরাল কলেজে জয় নিশ্চিত হয় জো বাইডেনের।
কিউঅ্যানন আন্দোলনকে যাঁরা বেগবান করেছেন, তাঁদের একজন রন ওয়াটকিনস। ১৭ ডিসেম্বর তিনি বেশ কয়েকটি টুইট করেন। সেখানে তিনি বলেন, ট্রাম্পের উচিত জুলিয়াস সিজারের পথে হেঁটে সেনাবাহিনীর আনুগত্য অর্জনের মাধ্যমে ‘প্রজাতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ করা। রনের টুইট উদ্বুদ্ধ হয়ে পাঁচ লাখের বেশি অনুসারী ‘ক্রস দ্য রুবিকন’ (সংকটসীমা অতিক্রম করুন) হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৯-এ সিজার যে গৃহযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন, তার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল এর মাধ্যমে। এ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেছিলেন অ্যারিজোনার রিপাবলিকান পার্টির কো-চেয়ার কেলি ওয়ার্ডও।
এ ছাড়া আরেকটি টুইটে রন ওয়াটকিনস উল্লেখ করেন, ট্রাম্পের উচিত ‘ইনসার্যাকশন অ্যাক্ট’ প্রয়োগ করা। এ আইন ব্যবহার করে প্রেসিডেন্ট সামরিক বাহিনী ও ফেডারেল ফোর্স মোতায়েন করতে পারেন।
প্রেসিডেন্ট সেই পথে হাঁটেননি। কিন্তু ১৮ ডিসেম্বর পাওয়েল, ফ্লিনসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন হোয়াইট হাউসে। মূলত করণীয় নির্ধারণের জন্য এ বৈঠক হয়। নিউইয়র্ক টাইমস–এর প্রতিবেদন অনুসারে, ফ্লিন এ বৈঠকে ট্রাম্পকে মার্শাল ল জারি করে আবার নির্বাচন দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এ বৈঠকের খবর আবারও ট্রাম্প-সমর্থকদের উৎসাহিত করে। ডানপন্থীরা ‘যুদ্ধ’ ও ‘বিপ্লবের’ কথা বলতে শুরু করেন অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোয়। এ কারণেই হামলাকারীদের অনেকে ৬ জানুয়ারি, বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে এসেছিলেন। এদিনের বিক্ষোভকে নির্বাচনের ফল বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে শেষ এবং ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন তাঁরা।
এর আগে ট্রাম্প-সমর্থকদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গল্প ছড়িয়ে দেন কিউঅ্যানন ও মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইনের সমর্থকেরা। তাঁরা আশা দেখান, ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের ফলাফল অগ্রাহ্য করবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তাঁরা এ–ও বলেন, ট্রাম্প সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে পারেন এবং যাঁরা নির্বাচনে কারচুপির সঙ্গে জড়িত, তাঁদের গুয়ানতানামো বে কারাগারে পাঠাবেন।
৬ জানুয়ারি বিভিন্ন স্থান থেকে বিক্ষোভকারীরা ওয়াশিংটন ডিসিতে আসেন। ওই দিন সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প প্রথমে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আওয়াজ তুলুন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তিনি বলেন, ‘আমরা ভয়ংকর লড়াই করব।’ ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা শিগগিরই পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউতে যাচ্ছি। আমরা পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে যাচ্ছি।’
এরপর ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনা ঘটে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের হোমল্যান্ড সেক্রেটারি মাইকেল চের্টফ এ ঘটনার জন্য ক্যাপিটল পুলিশকে দায়ী করেছেন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল গার্ড প্রথম থেকেই ক্যাপিটল পুলিশকে সাহায্য করতে চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশ এতে কর্ণপাত করেনি। চের্টফ বলেন, ‘আপনি যদি সংবাদপত্র পড়ে থাকেন, তবে বুঝবেন, অনেকেই আছেন যাঁরা বিশ্বাস করেন, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। এমন মানুষদের মধ্যে অনেকেই কট্টরপন্থী এবং সহিংস। অনেক গ্রুপই এমন আহ্বান জানিয়েছে, “আপনারা বন্দুক নিয়ে আসুন।”’
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ হয়তো এটা বিশ্বাসই করতে পারেনি যে পরিস্থিতি এতটা গুরুতর হবে। কিংবা এমনটাও হতে পারে, তারা বিক্ষোভের খোঁজখবর আগে থেকে রাখেনি। ফলে প্রশ্নের মুখে পড়ছে তারা।
মাইকেল চের্টফ আশা করছেন, ৬ জানুয়ারি যে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল, ২০ জানুয়ারি (নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ নেওয়ার দিন) তার চেয়ে বেশি নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ৬ জানুয়ারির ঘটনার রেশ এখনো রয়েছে। অনলাইনে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বলা হচ্ছে, ২০ জানুয়ারি আবারও এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে লাখো মানুষের কাছে এ ষড়যন্ত্রতত্ত্ব পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যদিও টুইটার ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ছাড়া ক্যাপিটলে হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। কিন্তু এই হামলাকারীরা এখনো অনলাইনে সক্রিয়। ট্রাম্প ইতিমধ্যে বলেছেন, ২০ জানুয়ারি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু এরপরও অনেকেরই বিশ্বাস, ট্রাম্প জয়ী হবেন। ট্রাম্পের ক্ষেত্রে যা-ই হোক, যে হামলাকারীরা ক্যাপিটলে হামলা চালিয়েছিলেন, তাঁরা তাঁদের অবস্থান থেকে সরে যাননি।