কী হবে ফ্লোরিডায়, কেউ জানে না

ফ্লোরিডার আকাশে উড়োজাহাজের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার চলছে। ক্ষুদ্র বিমান থেকে আগাম ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে নাগরিকদের
ছবি: প্রথম আলো।

যুক্তরাষ্ট্রের সূর্যালোকের রাজ্য হিসেবে পরিচিত ফ্লোরিডা এখন নির্বাচনী উত্তাপে ভরপুর। ট্রাম্প–বাইডেনই নয় শুধু, ফ্লোরিডার জনপদ মুখরিত মার্কিন রাজনীতির রথী–মহারথীদের পদভারে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে শুরু করে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য আর সিনেটররা চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনগুলো।

নির্বাচনে জয়ের জন্য মরিয়া বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে থাকতে হলে ফ্লোরিডায় জয় পেতেই হবে। কিন্তু প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাট শিবির এই রাজ্যে তাঁকে থামাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। ২০১৬ সালের নির্বাচনের মতো ট্রাম্পের আরেকবার বাজিমাত শেষ হয়ে যেতে পারে এই ফ্লোরিডায়।

অবশ্য মাঠ ঘুরে দেখা গেল, ফ্লোরিডায় বসবাসরত কিউবান বংশোদ্ভূত মার্কিনদের কাছে ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ জনপ্রিয়। এই রাজ্যে এই জনগোষ্ঠী বেশ শক্তশালী।

২০২০ সালের নির্বাচনে মোট আটটি রাজ্যকে ব্যাটলগ্রাউন্ড বা সুইং স্টেট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যার মধ্যে ফ্লোরিডা অন্যতম। অন্য অঙ্গরাজ্যগুলো হচ্ছে পেনসিলভানিয়া, ওহাইও, মিশিগান, উইসকনসিন ও আইওয়া, অ্যারিজোনা ও নর্থ ক্যারোলাইনা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই রাজ্যগুলোই আসছে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়–পরাজয় নির্ধারণ করে দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ রাজ্য প্রধানত দুই রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান অথবা ডেমোক্র্যাটদের রাজ্য হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সুইং স্টেটগুলোতে দুই দলের সমর্থন দফায় দফায় ওঠা–নামা করে। দুই প্রার্থীর সমর্থনের পাল্লায় খুব অল্প ব্যবধান থাকে। তাই সুইং রাজ্যগুলোর প্রতি সবার দৃষ্টি থাকে সবচেয়ে বেশি। আর ফ্লোরিডার মতো একটি সুইং স্টেটে যদি ২৯টি ইলেকটোরাল কলেজ থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। তাই সুইং স্টেটের মধ্যে এই রাজ্য নিয়ে দুই শিবিরে এত মাতামাতি।

আমি গতবার ভোট দিইনি, কিন্তু এবার আমি ভোট দেব। গতবারের নির্বাচন একটি দুর্ঘটনা ছিল। কিন্তু এবার সেটার পুনরাবৃত্তি আর হবে না।
নিকোল ওয়াকার, ফ্লোরিডার ভোটার

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ডেমোক্র্যাটের প্রার্থী জো বাইডেনের পক্ষে ফ্লোরিডার উত্তর মায়ামিতে শনিবার ড্রাইভ-ইন গাড়ি সমাবেশ করেছেন। নির্বাচনী প্রচারে ওবামা ফ্লোরিডার ভোটারদের আগাম ভোটদানের আহ্বান জানিয়েছেন। ফ্লোরিডার কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক ভোটাররা ব্যাপকভাবে ভোট দিলে ডেমোক্র্যাটদের জয় পাওয়া অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।

বিশ্লেষকদের ধারণা, এবার যদি বাইডেন ফ্লোরিডা জিতে যান, তাহলে তাঁর নির্বাচনে জেতা প্রায় নিশ্চিত।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৪ অক্টোবর সকালেই ফ্লোরিডার পাম বিচ কাউন্টিতে আগাম ভোট দিয়েছেন। গত বছর ট্রাম্প তাঁর বাড়ির ঠিকানা নিউইয়র্ক থেকে ফ্লোরিডায় পরিবর্তন করেছেন। তাই তিনি এখন নিউইয়র্ক নয়, ফ্লোরিডার বাসিন্দা।

এবার ফ্লোরিডা রাজ্যে কার জয়ের সম্ভাবনা বেশি, এ নিয়ে কথা ৩৫ বয়সী নিকোল ওয়াকারের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে বলেন, নিশ্চিত, এবার জো বাইডেন জিতবেন। কারণ, ফ্লোরিডাবাসী ট্রাম্পের ওপর বিরক্ত। ট্রাম্প ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি গতবার ভোট দিইনি, কিন্তু এবার আমি ভোট দেব। গতবারের নির্বাচন একটি দুর্ঘটনা ছিল। কিন্তু এবার সেটার পুনরাবৃত্তি আর হবে না।’

কথা হয় ৪৯ বছর বয়সী লিডি জামোরার সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গত সপ্তাহে ডাকযোগে ভোট দিয়েছি। আমাদের পরিবারের সবাই এরই মধ্যে ভোট দিয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল কী হবে, তা বলা মুশকিল।’ তিনি বলেন, ‘আমি গতবার ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছি। এবার কিন্তু জো বাইডেনকে ভোট দিলাম।’

২৭ বছর বয়সী শন মায়ানার্ডি বলেন, ‘ভোট দিয়েছি। ট্রাম্পই এবারও জিতবেন। কোনো সন্দেহ নেই।’ শনের দাবি, ট্রাম্প সবার সেরা। যুক্তরাষ্ট্রের ভালোর জন্য তাঁর বিকল্প নেই। ট্রাম্পই এ দেশের প্রকৃত প্রতিনিধি।

ফ্লোরিডায় এমন বহু মানুষের বাস, যাঁরা একসময় নিউইয়র্কে ছিলেন। এসব মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের উদারনৈতিকতা পোষণ করেন। তেমনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও তাঁদের একটা সংযোগ খুঁজে পান।

সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা গেছে, ফ্লোরিডার মাঠে দুই প্রার্থীর অবস্থান প্রায় সমানে সমান। কী হতে পারে, কেউ জানে না। সব অনুমানের বাইরে চলে গেছে ফ্লোরিডার রাজনৈতিক মাঠ।