কানাডার স্কুলে আরও কবরের সন্ধান
কানাডায় আবার সাবেক আবাসিক স্কুলে সন্ধান পাওয়া গেছে প্রায় ৫৪টি কবর। এর আগে এ বছরের গ্রীষ্মে দেশটির সাবেক আবাসিক স্কুলগুলোতে শত শত শিক্ষার্থীর কবর পাওয়ার পর সারা বিশ্বে সমালোচনার জন্ম দেয়। এরপর আবার শিক্ষার্থীদের কবর পাওয়া গেল। বিবিসির খবরে বলা হয়, কানাডার একটি আদিবাসী জাতি বলেছে, তারা সাসকাচোয়ানের দুটি প্রাক্তন আবাসিক স্কুলের সাইটে ৫৪ অচিহ্নিত কবরের প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে।
কিসিকুজ ফার্স্ট নেশন বলছে, ফোর্ট পেলি এবং সেন্ট ফিলিপের আবাসিক স্কুলের কাছে কবরগুলো পাওয়া গেছে। গত মে মাস থেকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য পরিচালিত সাবেক আবাসিক স্কুলগুলোতে ১ হাজার ১০০–এর বেশি বেনামী কবরের সন্ধান পাওয়া গেল। এ ঘটনার মাধ্যমে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের ওপর কানাডীয়দের নিপীড়নের ‘কালো অধ্যায়ের’ বিষয়টি সামনে এল। কয়েক সপ্তাহ আগেই কানাডার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের সংগঠন উইলিয়ামস লেক ফার্স্ট নেশন (ডব্লিউএলএফএন) কানাডার সাবেক আবাসিক স্কুলে প্রায় ১০০ কবরের সন্ধান পাওয়ার কথা জানায়।
ডব্লিউএলএফএন এক বিবৃতি বলেছে, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে সাবেক সেন্ট জোসেফ মিশনের একটি আবাসিক স্কুলে ৯৩টির মতো মানব কবরের সন্ধান পাওয়ার তথ্য প্রকাশ করেছেন ভূতাত্ত্বিক সার্ভের তদন্ত কর্মকর্তারা। স্কুলটির ৪৮০ হেক্টরের মধ্যে ১৪ হেক্টর এলাকায় অনুসন্ধান করে এসব কবরের সন্ধান পান তাঁরা। ওই এলাকা ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের কামলুপসের ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। গত মে মাসে ক্যামলুপসে ২১৫টি শিশুর দেহাবশেষের সন্ধান পান তদন্তকারীরা।
ডব্লিউএলএফএন বলেছে, ১৮৮৬ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সেন্ট জোসেফ মিশনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য শত শত আবাসিক স্কুল পরিচালনা করা হতো। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিশুদের ‘শিক্ষিত’ করার জন্য কানাডা সরকারের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসব স্কুল চালানো হতো। এতে পড়ত হাজার হাজার শিশু।
ডব্লিউএলএফএনের প্রধান উইলি সেলারস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সেন্ট জোফেসের এলাকাগুলোতে এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। এ কাজ চালিয়ে যাওয়ার পেছনে আমাদের উদ্দেশ্য রয়েছে।’
কানাডার কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, সাবেক আবাসিক স্কুলগুলোতে বেশ কিছু তদন্ত চলমান রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই সময় আবাসিক স্কুলগুলো থেকে ৪ থেকে ৬ হাজার শিশু নিখোঁজ হয়। ১৮০০-এর দশক থেকে ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত কানাডাজুড়ে ১৩৯টি আবাসিক স্কুলে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার দেড় লাখ শিশু ভর্তি হয়েছিল।
শিশু নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা খতিয়ে দেখতে ২০০৮ সালে ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন নামে একটি কমিশন গঠন করা হয়। ২০১৫ সালে প্রকাশিত কমিশনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, দেখা গেছে অনেক শিশু আর পরিবারের কাছে ফিরে যায়নি। এই নীতিটি ছিল ‘সাংস্কৃতিক গণহত্যা’।