করোনায় আক্রান্ত রিপাবলিকান নির্বাচনী প্রচারশিবির
দ্রুত পরিবর্তন চলে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনের প্রচারে।
নির্বাচনের আর মাত্র ৩০ দিন বাকি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারশিবিরকে নিজেদের করোনা সংক্রমণ সামাল দিতে হচ্ছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রচারশিবির সতর্কভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন বলে দিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অসুস্থ থাকা অবস্থায় কোনো নেতিবাচক প্রচার করা যাবে না। বেশ কিছু রাজ্যে নেতিবাচক টিভি প্রচার চালু ছিল। সেগুলো দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ডেমোক্র্যাটদের এ উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের প্রশংসা পাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হাসপাতাল থেকে গতকাল শনিবার বিকেলে জানিয়েছেন, তিনি ভালো বোধ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রকে মহান করার কাজে তিনি শিগগিরই ফিরে আসছেন বলে আশাবাদের কথা জানিয়েছেন। রিপাবলিকান প্রচারশিবিরের গুরুত্বপূর্ণ লোকজনও করোনা সংক্রমিত হয়ে পড়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ছাড়াও ফার্স্ট লেডি মেলেনিয়া ট্রাম্প, প্রচারণা প্রধান বিল স্টিফেন, প্রেসিডেন্টের বিতর্ক বিষয়ে উপদেশ দেওয়া নিউ জার্সির সাবেক গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি, হোয়াইট হাউসের অন্যতম উপদেষ্টা হোপ হিক্স, রিপাবলিকান দলের চেয়ারওম্যান রনা রমনি ম্যাকড্যানিয়েল, দলের প্রভাবশালী সিনেটর টম টিলিস ও মাইক লি এর মধ্যেই সংক্রমণ নিয়ে নিজেদের শারীরিক লড়াই শুরু করেছেন।
রিপাবলিকান পার্টির পূর্বনির্ধারিত সব প্রচার কর্মসূচি ঢেলে সাজাতে হচ্ছে। পাশাপাশি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রচার চলছে পুরোদমে। শুক্রবার জো বাইডেন সভা করেছেন মিশিগানে। কাল সোমবার বাইডেন বক্তৃতা করবেন ফ্লোরিডায়। নির্বাচনের ক্ষেত্রে এসব এলাকা এমনিতেই ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত। জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা জো বাইডেন সতর্ক সমাবেশ করছেন। লোকজনকে মাস্ক না পরে সমাবেশে প্রবেশই করতে দেওয়া হচ্ছে না।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিতর্কের সময় জো বাইডেনের মাস্ক পরা নিয়ে বিদ্রূপ করেছিলেন। বলেছিলেন, বাইডেনের সভায় লোকজনই আসে না। নিজের সভায় লোক সামাল দিতে তাঁকে হিমশিম খেতে হয়। এটা ঠিক, ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক সমাবেশ করেছেন মরিয়া হয়ে। চলমান মহামারির স্বাস্থ্যবিধিকে নিজে উপেক্ষা করেছেন। অন্যদেরও মেনে চলার জন্য আহ্বান জানাননি।
হাসপাতালে অবস্থানরত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের সহানুভূতি পাচ্ছেন ঠিকই। তবে এ সহানুভূতি তাঁর নির্বাচনের জন্য কতটা সহায়ক হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে এ নিয়ে রিপাবলিকানদের মধ্যে উৎকণ্ঠা প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ২১টি রাজ্যের ৩২ লাখ ভোটার এর মধ্যেই ডাকযোগে ভোট দিয়ে ফেলেছেন। ডাকযোগে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটরা এগিয়ে আছেন।
জো বাইডেনের প্রচার উপদেষ্টা আনিতা ডান সাময়িকী পলিটিকো অনলাইনকে বলেছেন, সতর্ক থেকেই সবকিছু চালিয়ে নেওয়া যায়। সামাজিক ব্যবধান বজায় রেখে, মাস্ক ব্যবহার করে এমন প্রচার চালানোর কথা মার্চ থেকেই জো বাইডেন বলে আসছেন।
ডেমোক্র্যাটদের প্রচার থেকে কোভিড-১৯ সামাল দিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যর্থতার কথাও এখন আর প্রচারসভাগুলোতে সরাসরি তেমন বলা হচ্ছে না। আনিতা মনে করেন, এমন বক্তব্যের এখন আর প্রয়োজনও নেই। সবাই দেখছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই আজ আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।
ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা বার্নি স্যান্ডার্স গতকাল প্রচারসভা করেছেন জো বাইডেনের পক্ষে। নিউ হ্যাম্পশায়ারে সীমিত লোকজনের উপস্থিতিতে সভায় স্যান্ডার্স প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডির দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন। বার্নি স্যান্ডার্স বলেছেন, ‘রিপাবলিকানরা হয়তো আমাদের সমাবেশে অল্প উপস্থিতি দেখে উপহাস করবেন। আমরা দেখাতে চাই, সবাই দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থান করছে। মাস্ক ছাড়া কেউ সমাবেশে প্রবেশই করতে পারেনি। আমরা এটাই বিশ্বাস করি এবং আমরা মনে করি, এমন করাটাই সঠিক।’
বার্নি স্যান্ডার্স বলেছেন, ‘বিজ্ঞানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কোভিড-১৯–এর সংক্রমণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অসুস্থতা এবং বাস্তবতা আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে, বাইডেনকে হোয়াইট হাউসে আমাদের প্রয়োজন। দেশের অর্থনীতিতে গতি ফিরিয়ে আনতে হলে সংক্রমণ আগে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং তারপর অর্থনীতি চালু করতে হবে।’