করপোরেট যুক্তরাষ্ট্র কেন ট্রাম্পকে ভালোবাসে?
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা। বেশির ভাগই তাঁর অদ্ভুত সব কর্মকাণ্ডে বিরক্ত। অভিজাত সম্প্রদায় মনে করে, ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড তাদের দেশকে ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। পররাষ্ট্রবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি জটিল হয়ে উঠছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ছে। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কায় আছেন। তাঁদের ভয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে ট্রাম্পের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির নিন্দা জানিয়েছেন। আইনি বিশেষজ্ঞরাও নানা সংকট নিয়ে সতর্ক।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেট দুনিয়া ট্রাম্পকে নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। ব্যবসায় ট্রাম্পের নেওয়া নানা পদক্ষেপে তারা খুশি। কর কমানো, অনিয়ন্ত্রণ, দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাণিজ্যিক ছাড় দেওয়া, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ—সবই ইতিবাচক মনে করছে করপোরেট মহল। ঘরের মধ্যে বাণিজ্য প্রসারে ট্রাম্পের সহযোগিতামূলক পদক্ষেপেও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো খুশি।
দ্য ইকোনমিস্টের খবর বলছে, এ ধরনের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় আগের বছরের তুলনায় ২২ শতাংশ বেড়েছে। বিনিয়োগ বেড়েছে ১৯ শতাংশ।
হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেসের জয়ের পর থেকে রিপাবলিকানরা ব্যবসার রাশ ছেড়ে দেন। নির্বাচনের পরে ট্রাম্প সম্পদশালী ব্যবসায়ী বা টাইকুনদের সঙ্গে সম্মেলন করেন। ব্যবসার প্রসারের জন্য ট্রাম্প টাওয়ার থেকে সরাসরি সম্প্রচার চালান। সেই সঙ্গে সদর দপ্তর ও ওভাল কার্যালয় থেকেও সম্প্রচার চালান।
গত ডিসেম্বর মাসে রিপাবলিকান করপোরেট কর সংস্কার আইন পাস হয়। ১৯৮৬ সালের পর থেকে এই প্রথমবার এ ধরনের আইন পাস হলো। এতে বার্ষিক সঞ্চয় ও লাভের হার বেড়েছে।
উদারীকরণ পুরোমাত্রায় চলছে। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকিং নিয়মকানুন শিথিল হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার নেতাদের ট্রাম্প নতুনভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, শীর্ষ পর্যায়ে পরিবর্তনের অর্থ কর্মকর্তারা অনেক বেশি সহায়ক। বিস্ময়কর রকমের একটা বড় সংখ্যক নির্বাহী পর্ষদ চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণের পক্ষে। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া যায় যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদার কাছে আত্মসমর্পণ করে চীন এবং বছরে আরও ২০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে, তাহলে করপোরেট আমেরিকার আয় আরও ২ শতাংশ বাড়তে পারে। ট্রাম্পের ব্যবসার সুবিধাগুলো পরিষ্কার: কম কর ও কম লালফিতার দৌরাত্ম্য, বাণিজ্যে সম্ভাব্য বৃদ্ধি এবং ৬ থেকে ৮ শতাংশ আয় বৃদ্ধি।
সমস্যা হলো কোম্পানিগুলো প্রায়ই অস্পষ্ট ঝুঁকি মূল্যায়নে নিতে ব্যর্থ হয় এবং সিইওদের সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়নে ভ্রান্তি থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে করপোরেট আমেরিকা নিজেদের অবরুদ্ধ বলে বিশ্বাস করেছিল, যদিও সংখ্যার নিরিখে, গড়পড়তা মুনাফা দীর্ঘমেয়াদি স্তরের ৩১ শতাংশ বেশি নিয়ে, এর তখন স্বর্ণযুগ চলছিল।
নতুন কর্তারা মনে করেন, তাঁরা স্বর্গে প্রবেশ করেছেন, যখন বাস্তবতা হচ্ছে দেশের বাণিজ্য ব্যবস্থা নিয়মকানুন, স্বচ্ছতা এবং বহুপক্ষীয় চুক্তি থেকে সরে গিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা, সংকীর্ণতা আর ক্ষণস্থায়ী লেনদেনের দিকে ধাবিত হচ্ছে।