ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা
একতরফা ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
ইরানের ওপর জাতিসংঘের যেসব নিষেধাজ্ঞা আগে ছিল, সেগুলো আবারও বহালের একতরফা ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইরানের দিকে বন্দুক তাক করে আছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রিগারও টিপে দিয়েছে। কিন্তু বন্দুক দিয়ে গুলি বের হলো না। বন্দুকের নলে ধোঁয়াও নেই। তর্জন-গর্জনই সার! ঠিক এমন অবস্থাই হয়েছে মার্কিন মুলুকে। ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আবারও কার্যকরের একতরফা ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘে কর্মরত এক কূটনীতিকের মতে, এই ঘোষণায় অনেকটা ‘খালি বন্দুক দিয়ে গুলি করার মতো’ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাম্প ট্রিগার টিপেছেন ঠিকই, কিন্তু গুলি বের হয়নি।
গত শনিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ইরানের ওপর জাতিসংঘের যেসব নিষেধাজ্ঞা আগে স্থগিত করা হয়েছিল, তা আবার কার্যকর হবে। যুক্তরাষ্ট্র একে স্বাগত জানাচ্ছে। পম্পেও আরও বলেছেন, শনিবার মার্কিন স্থানীয় সময় রাত আটটা থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। শুধু তা–ই নয়, ট্রাম্প প্রশাসন এ-ও জানিয়ে দিয়েছে যে এসব নিষেধাজ্ঞা জাতিসংঘের যেসব সদস্যদেশ মানবে না, তাদের ভুগতে হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, শিগগিরই এসব নিষেধাজ্ঞা না মানার ফলাফল কী হবে, তা ঘোষণা করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী মঙ্গলবার জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব বিষয়ে আলোকপাত করতে পারেন।
পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করার শর্তে ২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে চুক্তি করে ইরান।
২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
এএফপি জানায়, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করার শর্তে ২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে চুক্তি করে ইরান। ২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তিনি বলেছিলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো ভালো চুক্তিতে জড়াননি। ওই সময় তেহরানের ওপর নানা ধরনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ওয়াশিংটন।
রয়টার্স জানায়, গত ২৯ আগস্ট জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এক প্রস্তাব দেন মাইক পম্পেও। তিনি বলেন, ইরানের ওপর জাতিসংঘের আরোপ করা আগের সব নিষেধাজ্ঞা আবারও বহাল করা প্রয়োজন। তবে ওই সময় তাতে নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যদেশের ১৩টিই আপত্তি জানিয়েছিল। কারণ, ২০১৫ সালের ওই চুক্তিতে শর্ত না মানলে এসব নিষেধাজ্ঞা আবারও আরোপ করার বিধান রাখা আছে। যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু ২০১৮ সালে এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে, সুতরাং ওই বিধান কার্যকর করার এখতিয়ার দেশটির নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য, তারা চুক্তি স্বাক্ষরকারী পক্ষগুলোর একটি। কাজেই নিষেধাজ্ঞা আবারও আরোপ করার এখতিয়ার তাদের আছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা ঘোষণায় গুরুত্ব দিতে রাজি নয় জাতিসংঘের অন্য সদস্যদেশগুলো, বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদের বাকি সদস্যরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বলা হচ্ছে, একক ঘোষণায় জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আবারও কার্যকর করার আইনি ভিত্তি যুক্তরাষ্ট্রের নেই। ওদিকে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাষ্ট্রগুলো বলছে, এই বিষয় নিয়ে বেশি দূর যাওয়া উচিত নয়।
গতকাল রোববার নিরাপত্তা পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্য ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। এতে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যদেশ জার্মানিও স্বাক্ষর করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, পম্পেওর শনিবারের ঘোষণার কোনো আইনি ভিত্তি নেই। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এক বিবৃতিতে বলেছে, তারাও মনে করে যে ওয়াশিংটনের এই কর্মকাণ্ডের আইনি ভিত্তি নেই এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তা মেনে চলার বাধ্যবাধকতাও নেই। রাশিয়া বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটির চশমা দিয়ে বিশ্বকে দেখছে এবং বাকিদেরও তা করতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে। রাশিয়ার বক্তব্য, এই বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কম্পিউটার গেম নয়।
এ ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়টির মুখপাত্র সাইদ খতিবজাদেহ তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা আশা করি যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশ হোয়াইট হাউসের এমন অযৌক্তিক ও মরিয়া কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করবে এবং এর বিরুদ্ধে এক হয়ে কথা বলবে।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আবারও আরোপ করার ব্যাপারে মার্কিন ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন না। কারণ, এর বিপরীতে পদক্ষেপ নিলে এ বিষয়ে ‘অনিশ্চয়তার’ সৃষ্টি হবে।