'মি টু' আন্দোলনের জয়, দোষী সাব্যস্ত উইনস্টেইন
বড় সাফল্যের মুখ দেখল ‘মি টু’ আন্দোলন। যৌন নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলেন হলিউড প্রযোজক হার্ভে উইনস্টেইন। গতকাল সোমবার আমেরিকার নিউইয়র্কের জুরি বোর্ড তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। বিশ্বজুড়ে তৈরি হওয়া ‘মি টু’ ঝড়ে প্রথম বিচার সম্ভবত তারই হলো।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, সোমবার নিউইয়র্কের একটি জুরি বোর্ড বলেছেন, যৌন নির্যাতনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন হার্ভে উইনস্টেইন। আর এর ফলে ‘মি টু’ আন্দোলনের জন্য এটি একটি বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হলিউডের অন্যতম শক্তিশালী প্রযোজক ৬৭ বছর বয়স্ক হার্ভে উইনস্টেইন বিরুদ্ধে সাবেক প্রযোজনা সহকারী মিমি হ্যালেইকে যৌন নির্যাতন এবং অভিনেত্রী জেসিকা মানকে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আর এ দুই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি। এরপরে তাঁকে আটক করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আগামী ১১ মার্চ তাঁর সাজা শোনাবে নিউইয়র্কের একটি আদালত। কমপক্ষে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে ৬৭ বছর বয়স্ক হলিউডের এক সময়ের প্রভাবশালী এই প্রযোজকের।
গত ৬ জানুয়ারি হার্ভ উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিচার শুরু হয় নিউইয়র্কের আদালতে। সোমবার মামলার রায় ঘোষণা করে জুরি বোর্ড। ২০০৬ সালে মিমি হ্যালেইকে যৌন নির্যাতন এবং জেসিকা মানকে ২০১৩ সালে ধর্ষণের অভিযোগে হার্ভে ওয়াইনস্টাইনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে মার্কিন আদালত। তবে যৌন আঘাতের গুরুতর অভিযোগ থেকে তিনি নিষ্কৃতি পেয়েছেন। এই অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিশ্চিত ছিল।
জোডি ক্যানটর ও মেগান টুহে নামের নিউইয়র্ক টাইমস-এর দুই প্রতিবেদক ২০১৭ সালের ৫ আক্টোবর হার্ভে উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে প্রতিবেদন লিখে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। তাঁদের প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সে সময় সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ আন্দোলন। পরবর্তীকালে ওই প্রতিবেদনের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার অর্জন করেন সেই দুই প্রতিবেদক।
নিউইয়র্ক টাইমসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গত তিন দশকে তিনি অন্তত আটজন নারীকে যৌন হয়রানি করেছেন। এরপর মার্কিন প্রযোজক হার্ভের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন কয়েকজন অভিনেত্রী। হলিউডের জনপ্রিয় তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও গিনেথ প্যালট্রো, ইতালিয়ান অভিনেত্রী আসিয়া আর্জেন্তোও, নরওয়ের অভিনেত্রী ও মডেল নাতাশিয়া মালথে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। কেউ কেউ বলেন, হার্ভে ওয়েনস্টেইনের কাছে তাঁরা ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।
হার্ভে ওয়েনস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর সারা বিশ্বে ঘটে যাওয়া যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো সামনে চলে আসতে শুরু করে। যেসব নারী ও পুরুষ যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন, তাঁরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হ্যাশট্যাগ ‘#মিটু’ দিয়ে সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করছেন। নারীরা হার্ভে ওয়েনস্টেইনের বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ যৌন হয়রানির দুই ডজনের বেশি অভিযোগ করেছেন। যদিও হার্ভে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।