ঈদ মানে খুশি বা আনন্দ। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য বছরে দুটি দিন ধার্য রয়েছে এই আনন্দ উৎসব করার জন্য। এর একটি ঈদুল ফিতর, অন্যটি ঈদুল আজহা। এর একটি আসে সংযমের বার্তা নিয়ে। অন্যটি আসে ত্যাগের মহিমা নিয়ে। বছরের এ দুটি দিন যেমন আনন্দ ও উৎসবের বার্তাবাহী তেমনি মানুষে মানুষে ঐক্য ও সহমর্মিতার বাণীও রয়েছে এর অন্তরে। মুসলমানেরা বিশ্বাস করে, এ দুই দিন একই সঙ্গে সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ পাওয়ার সুযোগও করে দেয়। সংকট থেকে মুক্তির জন্য তাই এ দু দিন মুসলমানেরা প্রার্থনা করে।
এ বছর এক ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মানুষ। সারা বিশ্বেই একই অবস্থা। এই বাস্তবতার মধ্যেই এসেছিল ঈদুল ফিতর। দু মাস আগে যখন মহা আনন্দের এই দিনটি হাজির হয়েছিল, তখন কোথাও ছিল না কোনো উদ্যাপনের রং। শুধু প্রার্থনাই যেন সত্য হয়ে উঠেছিল। দু মাস পর পরিস্থিতির খুব একটা বদল হয়েছে বলা যাবে না। আগের মতোই এক নতুন ভাইরাসের সংক্রমণে নাকাল হয়ে আছে বিশ্ববাসী। আগের মতোই নতুন এই করোনাভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক মানুষ হাতে পায়নি। নেই কোনো ভ্যাকসিন। শুধু কিছু সুরক্ষা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এখনো মানুষের সম্বল। যতটুকু যা স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে, তার বেশির ভাগটাই এসেছে অভ্যস্ততার কারণে।
দীর্ঘ দিন দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাওয়ার কারণে যে অভ্যস্ততা জন্ম নিয়েছে, তার মধ্যেই উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে ঈদুল আজহা। পশু কোরবানির মাধ্যমে ত্যাগের মহিমাকীর্তন করা এই উৎসবের মাধ্যমে আবার সবাই এক জোট হওয়ার আশায় ছিল। কিন্তু সেই আশা এবারও পূরণ হওয়ার নয়। অন্তত আগের মতো এক কাতারে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঈদের নামাজ পড়ে কোলাকুলি করে শুভেচ্ছা বিনিময়ের রেওয়াজকে এবারও নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক সংকটে আগের মতো অনেকেই এবার পশু কোরবানি দিতে পারবে না। অনেকের পক্ষে এমনকি ঈদের দিন ভালো খাবারের আয়োজন করাও কষ্টকর হয়ে যাবে। অনেকের পক্ষে এমনকি সব থাকা সত্ত্বেও উৎসব করাটা অসম্ভব হয়ে উঠবে প্রিয়জন হারানোর কারণে।
নতুন বাস্তবতায় এই ঈদ তাই নতুন এক আহ্বান নিয়ে হাজির হয়েছে। এই ঈদুল আজহা সত্যিকার অর্থেই এক ত্যাগের ও সহমর্মিতার আহ্বান জানাচ্ছে। অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন পীড়িত, দুস্থ ও সংকটগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বেশি। আর্থিকভাবে কিংবা স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় প্রায় প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনোভাবে সংকটে। তাই এই ঈদুল আজহা সবাইকে পরস্পরের পাশে দাঁড়ানোর, পরস্পরকে ভালোবাসার আহ্বান নিয়ে হাজির হয়েছে। আর এই ভালোবাসা, সহযোগিতা ও সহমর্মিতা সবার প্রতি। এবারও আগের মতো ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু মনে রাখা জরুরি যে, করোনাভাইরাসের কোনো টিকা বা কোভিড-১৯ এর সুনিশ্চিত চিকিৎসা মানুষ এখনো আবিষ্কার করতে পারেনি। তাই শারীরিক দূরত্ব মেনে চলার নীতিটি আগের মতোই অবশ্যপালনীয়। আশা করা যায়, সবাই সেই সতর্কতা মেনে চলে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।
সবাইকে ঈদ মোবারক।