ইলেকটোরাল কলেজ কি?

কোন রাজ্যে কত ইলেকটোরাল কলেজ, কার দখলে কয়টি যাচ্ছে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন অন্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোর নির্বাচনের মতো নয়। এতে সরাসরি জনগণের ভোটে (পপুলার ভোট হিসেবে পরিচিত) প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। তারা মূলত পছন্দের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার মধ্য দিয়ে একটি নির্বাচকমণ্ডলীকে নির্বাচিত করে। ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ নামের এই নির্বাচকমণ্ডলী প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কাজটি করে।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটসংখ্যা ৫৩৮। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে একজন প্রার্থীকে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজের ভোট পেতে হয়। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জন্য নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১০ সালের সমঝোতা অনুযায়ী (এবারের নির্বাচনও এর ভিত্তিতেই হচ্ছে) ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে রয়েছে সর্বোচ্চ ৫৫টি ইলেকটোরাল ভোট। আবার আলাস্কা, সাউথ ডাকোটা, ভারমন্টের মতো অঙ্গরাজ্যগুলোর প্রতিটিতে রয়েছে ৩টি করে ইলেকটোরাল ভোট।

ইলেকটোরাল ভোট কী করে নির্ধারিত হয়?

কোন অঙ্গরাজ্যে কত ইলেকটোরাল ভোট থাকবে, তা নির্ধারিত হয় সেখানে কতটি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট রয়েছে। প্রতিটি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের জন্য একটি করে ভোট এবং দুজন সিনেটরের জন্য দুটি ভোট বরাদ্দ থাকে। ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৩টি কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট রয়েছে। অন্য অঙ্গরাজ্যগুলোর মতোই সেখানে রয়েছে ২টি সিনেট আসন। ফলে অঙ্গরাজ্যটির মোট ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৫টি।

ইলেকটোরাল কলেজে কারা থাকে?

ইলেকটোরাল ভোট সিনেটর, নিম্নকক্ষের প্রতিনিধি, গভর্নর বা এমন কেউ দেবে না। এ জন্য একেবারে আলাদা একটি ভোটার দলকে নির্বাচন করা হয়। এটি দুই ধাপে ঠিক হয়। প্রথম ধাপটি দলগুলোর নিয়ন্ত্রণে। সাধারণ নির্বাচনের আগে দুই দলের পক্ষ থেকে তাদের মনোনীত ইলেকটোরাল ভোটারের তালিকা জমা দেওয়া হয়, যাকে স্লেট বলে। সাধারণ নির্বাচনের সময় যখন সাধারণ ভোটারেরা প্রেসিডেন্টকে ভোট দেন, তখন তাঁরা মূলত ইলেকটোরাল ভোটারের এই স্লেট নির্বাচন করেন। অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যেই যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জয়ী হন, তাঁর দলের স্লেটটিই ইলেকটোরাল ভোটার হিসেবে নির্বাচিত হয়। আসন্ন নির্বাচনে ক্যালিফোর্নিয়ায় যদি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন, তবে রিপাবলিকান দলের পাঠানো ইলেকটোরাল ভোটার স্লেটটি নির্বাচিত হবে।

ব্যতিক্রম

এ ক্ষেত্রে মেইন ও নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্য ব্যতিক্রম। এ দুই অঙ্গরাজ্যে আনুপাতিক হারে ইলেকটোরাল ভোটার বণ্টিত হয়। ২০১৬ সালের নির্বাচনে মেইন অঙ্গরাজ্যে বিজয়ী হয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটন। কিন্তু আনুপাতিক হারে নির্ধারিত চারটি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে হিলারি পেয়েছিলেন তিনটি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

জনগণের ভোটে নির্বাচিত ইলেকটোরাল কলেজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত ভোটটি দেন। সাধারণ নির্বাচনের পর ডিসেম্বরের দ্বিতীয় বুধবারের পরের প্রথম সোমবার (এবার ১৪ ডিসেম্বর) এই ইলেকটোরাল ভোটারেরা সভায় বসবেন এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য নিজেদের ভোটটি আলাদা ব্যালটের মাধ্যমে দেবেন। পরবর্তী ৬ জানুয়ারি এই ভোট গণনার জন্য কংগ্রেস চেম্বারে সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিদ্যমান ভাইস প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সে সভায় ভোট গণনার পরই জানা যাবে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল।

পদ্ধতি এমন হলেও সাধারণ নির্বাচনের পরপরই বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে জয়ী প্রার্থীর পরিচয় থেকেই নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল সম্পর্কে অনুমান করা যায়। কারণ, সাধারণত দলগুলো এমন ব্যক্তিকেই ইলেকটোরাল ভোটার হিসেবে মনোনীত করেন, যারা দল ও প্রার্থীর ভীষণ অনুগত।

প্রভাবশালী ছয় অঙ্গরাজ্য

ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, নিউইয়র্ক, ইলিনয়, পেনসিলভানিয়া—এই ছয় অঙ্গরাজ্যের হাতেই রয়েছে ১৯১টি ইলেকটোরাল কলেজ। ‘উইনার টেক ইট অল’ নীতির কারণে এই ছয় অঙ্গরাজ্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এক নজরে ইলেকটোরাল ভোট

  • প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জন্য রয়েছে নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেকটোরাল কলেজ ভোট

  • অঙ্গরাজ্যপ্রতি সংখ্যা নির্ধারণ—কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টের সংখ্যা + ২টি সিনেট আসনের জন্য দুটি ভোট

  • কারা থাকেন—দুই দলের নির্ধারিত একটি করে নির্বাচক দল (স্লেট)

  • সাধারণত কোনো অঙ্গরাজ্যে যে প্রার্থী বিজয়ী হন, তাঁর দল নির্ধারিত স্লেটটি বিজয়ী হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয় (ব্যতিক্রম: মেইন ও নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্য)

  • প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ডিসেম্বরের দ্বিতীয় বুধবারের পরের সোমবার (এবার ১৪ ডিসেম্বর) ইলেকটোরাল কলেজের সভায় গোপন ব্যালটে ভোট দেবেন নির্বাচিত ভোটারেরা

  • আগামী বছরের ৬ জানুয়ারি ইলেকটোরাল ভোট গণনার পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা হবে

  • মোট ভোট সংখ্যা—৫৩৮

  • বিজয়ী হতে প্রয়োজন—২৭০