আমেরিকার অভিশংসিত প্রেসিডেন্টরা

অ্যান্ড্রু জনসন, বিল ক্লিনটন, ডোনাল্ড ট্রাম্প
অ্যান্ড্রু জনসন, বিল ক্লিনটন, ডোনাল্ড ট্রাম্প

ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসন বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচনার বিষয়। প্রতিনিধি পরিষদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিশংসিত হওয়ার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। ক্ষমতার অপব্যবহার ও কংগ্রেসের কাজে বাধা দেওয়ায় ট্রাম্পকে তাঁকে অভিশংসিত করা হয়। এ নিয়ে আমেরিকার ইতিহাসে তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসিত হলেন ট্রাম্প।

অভিশংসন মানেই অবশ্য প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারণ নয়। ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকছেন কিনা তা সিনেটরদের ভোটের ওপর নির্ভর করছে। তার আগে অবশ্য অনেক লম্বা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ অভিযোগ গঠন করে অভিশংসন প্রতিবেদন পাঠাতে হবে সিনেটে। সিনেট সে অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করবে। এর মধ্যে নানা পর্যায়ে রয়েছে ভোটাভুটির মতো ব্যাপার।

সে যা-ই হোক, শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প যে ক্ষমতায় থাকছেন তা মোটামুটি নিশ্চিতই বলা যায়। কারণ, সিনেটে তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টিই সংখ্যাগরিষ্ঠ। প্রায় একইভাবে নিম্নকক্ষে অভিশংসিত হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগে সিনেটে বেঁচে যাওয়া দুই প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন ও বিল ক্লিনটন।

অ্যান্ড্রু জনসন আমেরিকার ইতিহাসে অভিশংসিত হওয়া প্রথম প্রেসিডেন্ট। যুদ্ধবিষয়ক সচিব এডুইন স্ট্যানটনকে ১৮৬৭ সালে অফিস থেকে বিতাড়িত করার মাধ্যমে তিনি আইন ভঙ্গ করেছিলেন। আইন অনুযায়ী সিনেটরদের অনুমতি ব্যতীত কোনো গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার অনুমতি প্রেসিডেন্টের ছিল না। প্রথম দিকে তিনি স্ট্যানটনকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন অন্য একজনকে। কিন্তু কংগ্রেস এতে হস্তক্ষেপ করে স্ট্যানটনকে পুনর্বহাল করলে তিনি তাঁকে পুরোপুরি বরখাস্ত করেন। এতেই বাঁধে গোল। এর তিন দিন পর ১৮৬৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ জনসনকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে অভিশংসিত করে। হাউসের অবস্থান ছিল, প্রেসিডেন্ট আইন লঙ্ঘন করেছেন এবং মার্কিন কংগ্রেসকে অপমান করেছেন। কিন্তু পরে সিনেটরদের ভোটে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারণের হাত থেকে বেঁচে যান অ্যান্ড্রু জনসন।

অভিশংসিত হওয়া দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট হলেন বিল ক্লিনটন। ১৯৯৪ সালের গোড়ার দিকে তাঁর নামের সঙ্গে নানা কেলেঙ্কারির ঘটনা যুক্ত হতে থাকে। এর শুরু হয়েছিল ‘হোয়াইটওয়াটার’ নামে পরিচিত আর্থিক তদন্ত শুরুর মাধ্যমে। একই বছর তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে মামলা করেন পলা জোনস। কিন্তু ক্লিনটন তা অস্বীকার করেন। হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা মনিকা লিউনেস্কির সঙ্গে সম্পর্কের জের ধরে এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে ১৯৯৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর বিল ক্লিনটনকে অভিশংসিত করা হয়। কিন্তু তিনিও শেষ পর্যন্ত সিনেটরদের ভোটে রক্ষা পান। এখন দেখার বিষয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে কিনা। সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও প্রেসিডেন্টের পক্ষে তাঁদের দৃঢ় অবস্থান বলছে, এবারও ক্ষমতা থেকে অপসারণের হাত থেকে বেঁচে যাবেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট।