অভ্যন্তরীণ সহিংসতার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সতর্কতা জারি
অভ্যন্তরীণ উগ্রবাদী-সন্ত্রাসীদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জারি করা সতর্কতায় যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ উগ্রবাদী-সন্ত্রাসীদের হামলার আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্রে রক্ষণশীল চরমপন্থার উত্থান ঘটে। যুক্তরাষ্ট্র এখন বাইরের সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের চেয়ে দেশের ভেতরে গড়ে ওঠা শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদী-সন্ত্রাসীদের নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন।
২৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদের ব্যাপারে বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করে বুলেটিন প্রকাশ করেছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ। বুলেটিনে বলা হয়, আগামী সপ্তাহজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের এক সপ্তাহের মাথায় এমন সতর্কবার্তা দেওয়া হলো।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদা ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালায়। ওই হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায়ই এমন সতর্কবার্তা দেওয়া হতো। ন্যাশনাল টেররিস্ট অ্যাডভাইজারি সিস্টেম যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য হুমকির কোনো তথ্য পেলেই এমন সতর্কতা জারি করা হতো। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলায় আশঙ্কায়ও যুক্তরাষ্ট্রে এমন সতর্কবার্তা দেওয়া হতো। এসব সতর্কবার্তায় নানা রঙের উল্লেখ থাকত। যেমন লাল রঙের সতর্কবার্তা দিয়ে গুরুতর হামলার আশঙ্কার কথা প্রকাশ করা হতো। ২০১১ সালে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ এমন সতর্কবার্তা দেওয়ার জন্য ‘ন্যাশনাল টেররিস্ট অ্যাডভাইজারি সিস্টেম’ চালু করে।
গতকাল বুধবার দেওয়া সতর্কবার্তায় বলা হয়, কিছু অভ্যন্তরীণ হিংস্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জালিয়াতির মিথ্যা দাবি ঘিরে সংগঠিত হচ্ছে। এই গোষ্ঠী সংহিতার পথ অবলম্বন করতে চাইছে। তারা ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। চরমপন্থী এই গোষ্ঠী তাদের উগ্রবাদী আদর্শ প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট। তারা মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। অভ্যন্তরীণ এই সন্ত্রাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বা যেকোনো সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা চালাতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে করোনা মহামারি মোকাবিলা, গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল, পুলিশি তৎপরতা, নাগরিক আন্দোলন, বর্ণবিদ্বেষ, অভিবাসনবিরোধিতা—এসব নিয়ে একটি মহলের চরমপন্থী মনোভাব ও উগ্রবাদী তৎপরতার উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রে লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে বলে সতর্কবার্তায় উল্লেখ করা হয়।
৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার সময় উগ্রবাদী-চরমপন্থীদের ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে। এর জের ধরে ২০২১ সালের প্রথম কয়েক মাস তাদের আরও এমন তৎপরতার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ।
উগ্রবাদী-চরমপন্থীরা বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর প্রয়াস নিচ্ছে বলে সতর্ক করা হয়। উগ্রবাদীরা প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও তাঁর প্রশাসনকে স্বীকার করতে প্রস্তুত নয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কট্টর অনুসারী এই চরমপন্থীরা ফেডারেল ও অঙ্গরাজ্যের স্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে।
এই চরমপন্থী গোষ্ঠী অভিবাসনের কঠোর বিরোধী। তারা শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদে বিশ্বাসী। ট্রাম্পের নির্বাচনে জালিয়াতির মিথ্যা দাবি বিশ্বাস করে তারা। এসব উগ্রবাদী রক্ষণশীলরা এখনো বিশ্বাস করে, ট্রাম্প নির্বাচনে হারেননি। জালিয়াতি করে তাঁর জয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন, এমন কথা তারা বিশ্বাস করে না।
ট্রাম্পের এই উগ্র সমর্থকেরাই ৬ জানুয়ারি মার্কিন আইনসভা ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলা চালায়। তারা ট্রাম্পের পক্ষ হয়ে ইলেক্টোরাল ভোটের ফলাফল পাল্টে দিতে চেয়েছিল। তবে এই উগ্রবাদীরা নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনে ব্যর্থ হয়। এ ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়। আহত হয় অনেকে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, আমেরিকার সব জনগণ জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি দায়িত্বের সমান অংশীদার। যেকোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ হামলার ব্যাপারে জনগণকে সজাগ থাকতে বলেছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ।
৬ জানুয়ারির আগে ওয়াশিংটন ডিসিতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শ্বেতাঙ্গ রক্ষণশীল সংগঠন ‘প্রাউড বয়েজ’-এর নেতা এনরিখ টেরিও। মিয়ামির আদালতে তাঁর বিচার শুরু হয়েছে।
আদালতে সরকারপক্ষের উপস্থাপিত নথিতে দেখা যায়, টেরিও একসময় এফবিআইয়ের তথ্য সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। এ নিয়ে টেরিওকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছেন, আগের কোনো কিছুই এখন আর তাঁর মনে পড়ছে না। যদিও টেরিওর সঙ্গে আলাপের জের ধরে ১৩ জন শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদীকে গ্রেপ্তার করার কথা জানানো হয়েছে।