অনিকেত মানুষের খোঁজে
‘দীর্ঘ হতে হতে ক্রমশ ছোট হয়ে আসে
দু’টি ছায়া। আবারও দীর্ঘ হয়...
অনন্তকাল ধরে এই পথ হাঁটা শেষ হয় না।
আর কত দূর যাব আমরা, কত দূর?’
কবি অনিকেত শামীমের পথ হাঁটা সেই শুরুর পর থেকে কেবলই চলছে…। গন্তব্য অনেক দূর, দূরান্তে। এক মাইলফলক ছুঁয়ে হেঁটে চলেন আরেক মাইলফলকের দিকে। তাই তো শামীমুল হক শামীম যখন ঢাকায় এলেন, তিনি হয়ে গেলেন ‘অনিকেত শামীম’! চাকরির পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা, ‘লোক’ পত্রিকা প্রকাশ, লোকসাহিত্য পুরস্কার, লেখক অভিধান প্রকাশ, লিটলম্যাগ আন্দোলনসহ নানা কার্যক্রমে জড়িয়ে গেলেন একের পর এক। থিতু হলেন শাহবাগ আজিজ মার্কেটের দোতলায়।
সেই নব্বই দশক থেকে কবি ও সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে নীরবে, নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন এই বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী মানুষটি। গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর ১০৩ জন কবি-সাহিত্যিকের জন্য গড়ে তুলেছেন ‘লেখক পল্লী’!
বাংলাদেশের কবি ও লিটল ম্যাগাজিন ‘লোক’-এর সম্পাদক অনিকেত শামীম এখন নিউইয়র্কে। গত ৮ আগস্ট, বৃহস্পতিবার বিকেলে অনিকেত শামীমের আগমন উপলক্ষে প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা কার্যালয়ে ছিল এক অনবদ্য কবিতা সন্ধ্যার আয়োজন।
যেহেতু লেখক ও কবিমাত্রেরই বন্ধু তিনি, তাই ছুটে এসেছিলেন প্রথম আলোর আমন্ত্রণে। সানন্দে যোগ দিলেন লেখক, কবি, সাংবাদিকদের আড্ডায়। আড্ডা জমতে সময় লাগেনি মোটেই। আগ্রহ নিয়েই পড়ে শোনালেন নিজের লেখা কবিতা। সহজ-সরল মানসিকতার এই কবির কবিতাও সহজ-সরল। কথা বললেন কবিতার কারুকাজ নিয়ে। ব্যাকরণ নিয়ে। মনোযোগ দিয়ে শুনলেন অন্যদের কবিতা।
লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা শামীমের উপস্থিতিতে লিটল ম্যাগাজিনের নানা কথা, কবিতার কথা নিয়ে ঋদ্ধ ছিল আড্ডা। কবিবন্ধু শামীমকে নিয়ে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করলেন লেখক আহমদ মাযহার। কথা বললেন, কবি বন্ধু শামস আল মমীনকে নিয়েও। যেন নতুন করেই আবার আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন বাংলা ভাষার এই মার্কিন কবিকে। জানা গেল কবি মমীন সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য। ১৯৮২ সালে ছাত্রজীবনে তিনি মার্কিনমূলকে এসেছিলেন পড়াশোনার লক্ষ্যে। পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে। কিন্তু লেখালেখির মূল মাধ্যম করেছেন মাতৃভাষা বাংলাকে। যদিও বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতেও তিনি কবিতা লিখছেন। কবি মমীনের কাছ থেকে আমরা শুনলাম তাঁর স্বরচিত কবিতা।
এভাবেই বৃষ্টিভেজা বিকেলে জমে উঠল কাব্য জলসা। একে একে কবিতা পড়লেন আহমাদ মাযহার, জেবুন্নেছা জোছনা, আনোয়ারুল হক লাভলু, সজল আসফাক, রওশন হক, ইশতিয়াক রূপু, আব্দুস শহীদ, সৈয়দ আহমদ জুয়েদ প্রমুখ।
আড্ডায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক মাহবুব রহমান, অ্যাডভোকেট শেখ আখতারুল, লেখক মনিজা রহমান, সুব্রত বিশ্বাস, ফকু চৌধুরী, আলমগীর কুমকুম, লেখক ও সাংবাদিক রহমান মাহবুব রহমান, লেখক মুহাম্মদ আলী বাবুল, কবি রওশন হাসান, হেলিম আহমেদ, সানজিদা উর্মি, আজমল আলী রিয়াজী, মনজুরুল হক প্রমুখ।
আড্ডায় যথারীতি স্মরণ করা হলো অসুস্থ লেখক ও সাংবাদিক এইচ বি রীতাকে। উঠে এল শৌখিন আলোকচিত্রী উইলী মুক্তিকেও, যিনি সম্প্রতি বেশ অসুস্থ। স্মরণ করা হলো প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার হেলিম আহমেদের অকালপ্রয়াত বড় ভাইকে। স্বজনদের অসুখ-বিসুখে মন ভারাক্রান্ত থাকলেও জীবন কখনো থেমে থাকে না। জীবন এগিয়ে যায় জীবনের নিয়মে। তারই প্রমাণ হয়ে থাকল যেন এই আড্ডা। সবশেষে গীতিকার ইশতিয়াক রূপু সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আড্ডার সমাপ্তি টানেন।