কমলা হ্যারিসের জনপ্রিয়তা ইউরোপেও বাড়ছে

কমলা হ্যারিসফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কমলা হ্যারিসের সম্ভাব্য প্রার্থিতা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে রীতিমতো সাড়া পড়ে গেছে। ইউরোপের গণতান্ত্রিক কর্মীরা এমনটাই দাবি করেছেন।

বিদেশে ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে কাজ করা সংস্থা ডেমোক্র্যাটস অ্যাব্রোডের (ডিএ) মুখপাত্র অ্যামি পোর্টার একে ‘আশ্চর্যজনক ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে অসংখ্য নতুন ভোটার নিজের নাম নিবন্ধন করেছেন। অনেকেই প্রচারণায় সহায়তা করতে স্বেচ্ছাসেবীও হতে চেয়েছেন।

অ্যামি পোর্টার বলেন, স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি ফ্রান্স ও অ-মার্কিন নাগরিকেরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, কমলা হ্যারিসকে নির্বাচিত করতে সাহায্য করতে চান। এই ঘটনা অত্যন্ত বিরল।

বিদেশে মার্কিন ভোটারদের মধ্যে উদাসীনতা

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ফেডারেল ভোটিং অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম ধারণা করছে, বিদেশে বসবাসকারী ২৮ লাখ আমেরিকান ফেডারেল নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্য। এই প্রোগ্রামের জরিপ অনুসারে, ২০১৬ সালে তাঁদের মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট দিয়েছেন।

ডিএ বলেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহের প্রথম তিন দিনে ফেডারেল পোস্ট কার্ড অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বসবাসকারীদের নিবন্ধনের সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি বেড়েছে। এই প্রক্রিয়ায় যেকোনো দলের ভোটারদের নিবন্ধন করা হয়। তবে তাঁদের নতুন সদস্যের সংখ্যা সোমবার থেকে বুধবার তিন গুণ বেড়ে গেছে।

মার্কিন নির্বাচনী প্রচারণায় বিদেশি নাগরিকদের অর্থ অনুদান দেওয়ার অনুমতি নেই। কিন্তু ডিএতে অনুদান দেওয়ার ঢল নেমেছে। অ্যামির ভাষ্য, ‘আমরা নিয়মিত অনুদান পাই, কিন্তু এটা ভাবনার বাইরে ছিল।’

ফিনল্যান্ডের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা

২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডেমোক্র্যাটস অ্যাব্রোড ফিনল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন ডানা ফ্রেলিং। তিনি জানান, নতুন নতুন স্বেচ্ছাসেবকেরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ফিনিশ নাগরিকেরা রয়েছেন। তাঁরা ন্যাটোর প্রতি ট্রাম্পের মনোভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন।

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর ফিনল্যান্ড ২০২৩ সালে ন্যাটোতে যোগ দেয়। রাশিয়ার সঙ্গে প্রায় ১ হাজার ৩৪০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে দেশটির। তাই ন্যাটোতে ফিনল্যান্ডের যোগদানের বিষয়টি মার্কিন-রাশিয়া কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

ডানা ফ্রেলিং বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ন্যাটোর এই গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্ককে কীভাবে দেখবেন, তার ওপর আমাদের নিরাপত্তা নির্ভর করবে।’

এর আগে ফিনল্যান্ডে আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কথায় আস্থা প্রকাশ করে ট্রাম্প। তিনি বলেন, ক্রেমলিন ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেনি। ট্রাম্পের সেই ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়। তাই ট্রাম্পকে নিয়ে ফিনিশরা খানিকটা চিন্তায় রয়েছেন।

এদিকে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই কমলা হ্যারিসের পররাষ্ট্র নীতিকে অন্যতম শক্তি হিসেবে বিবেচনা করছেন না। যদিও রাশিয়া সম্পর্কে তাঁর মতামত স্পষ্ট করেছেন কমলা। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে, ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন নিশ্চিত করেছেন তিনি। মিত্রদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন ‘ন্যাটোর প্রতি একনিষ্ঠভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

ডানা আরও বলেন, টেক্সাসে তাঁর ভাইয়ের মতো অনেক রিপাবলিকান কমলা হ্যারিসকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

প্রবাসী রিপাবলিকানরা কী ভাবছেন

রিপাবলিকান ভোটার মাইক কুলবিকাস কয়েক দশক ধরে ব্রাসেলসে থাকেন। তিনি স্থানীয় বিতর্ক সভায় দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ রিপাবলিকান মনে করেন, যদি কমলাকে মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নিশ্চিত করা হয়, তবে তাঁকে হারানো আরও সহজ হবে।’

যদিও মাইক স্বীকার করেছেন, ‘কমলা হ্যারিস একজন নারী। তিনি সংখ্যালঘু শ্রেণির প্রতিনিধি, সেটা কিছু ভোটারদের ওপর খানিকটা জোরালো প্রভাব ফেলবে।’ তবে তিনি বিশ্বাস করেন, ‘এমন কোনো পরিবর্তন হবে না’ যা নির্বাচনের ফলাফলে উল্লেখযোগ্য বদল ঘটাতে পারে।

মাইক বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা সব সময় নিজেদের আলোতে রাখতে চাইবে। তবে এটা রাজনৈতিক খেলা। তাই এই মুহূর্তের পরিস্থিতি দেখে কোনো জরিপ কিছু বলতে পারে, সেটা বিশ্বাস করি না।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ইউরোপ সম্পর্কে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মাইকেল বলেন, মানুষ ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ সম্পর্কে এতটা উদ্বিগ্ন নয়। তাঁরা কৌতূহলী। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে বড় কোনো পরিবর্তন আশা করেন না তিনি।

তবে ডিএর অ্যামি পোর্টার জোর দিয়ে বলেন, বিদেশি ভোটাররা প্রমাণ করেছেন, তাঁরা নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বিতার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। তিনি বলেন, জর্জিয়া ও অ্যারিজোনায় বাইডেনের জয়ের ব্যবধান (২০২০ সালে) আন্তর্জাতিক ভোটের সংখ্যার তুলনায় কম ছিল।

ডিএ বলছে, বিশ্বজুড়ে মানুষ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণা ও সরাসরি নিবন্ধন করছেন। তবে এটা শুধু কমলা হ্যারিসের বিষয়ে নয়—এটা সিনেট, কংগ্রেস, ব্যালট ও সব কিছুর জন্য।

আরও পড়ুন