রিপাবলিকান পার্টির সম্মেলন শুরু, যোগ দিলেন আহত ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় বন্দুকধারীর গুলি থেকে বেঁচে ফেরার পর নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল সোমবার থেকে উইসকনসিনের মিলওয়াকিতে শুরু হয়েছে চার দিনব্যাপী এই সম্মেলন। আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে এ সম্মেলন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেবে দলটি। পাশাপাশি ট্রাম্পের রানিং মেটের (ভাইস প্রেসিডেন্ট) নামও ঘোষণা করা হবে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষেই গত শনিবার পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বাটলারে এক সমাবেশে অংশ নেন ট্রাম্প। সেখানে বক্তৃতা দেওয়ার একপর্যায়ে হামলাকারীর গুলিতে রক্তাক্ত হন তিনি। আঘাত গুরুতর না হওয়ায় পরদিন রোববারই সম্মেলনে অংশ নিতে মিলাওয়াকিতে পৌঁছান তিনি। এর আগেই তাঁর দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হামলা সত্ত্বেও দলের জাতীয় সম্মেলন নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী এগিয়ে চলবে।

ট্রাম্পের ওপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে সিক্রেট সার্ভিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা অড্রে গিবসন-সিচিনো গত রোববার বিকেলে মিলওয়াকিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নিরাপত্তা পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আনা হবে না।

রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলন চলবে ১৮ জুলাই পর্যন্ত। প্রতি চার বছর পরপর এই সম্মেলনের আয়োজন করে দলটি। এবারের সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দেবেন দলটির বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিরা (ডেলিগেট)।

তবে এরই মধ্যে রিপাবলিকান দলের ২ হাজার ২৬৫ প্রতিনিধি তাঁর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ফলে তাঁর প্রার্থী হওয়াটা প্রায় নিশ্চিত।

সম্মেলনে রিপাবলিকান পার্টি থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কে নির্বাচনে লড়বেন, তা–ও বেছে নেওয়া হবে। মনোনয়ন পাওয়ার পর দুজনই সম্মেলনে বক্তৃতা করবেন। এ ছাড়া বক্তব্য দেবেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। থাকবেন তারকা জগৎ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরাও। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাউথ ক্যারোলাইনার গভর্নর নিকি হ্যালি, ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস, ফক্স নিউজের উপস্থাপক টাকার কার্লসন, মার্কিন মডেল অ্যাম্বার রোজ প্রমুখ।

সম্মেলনে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ অংশ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নভেম্বরের নির্বাচন সামনে রেখে ভোটারদের কাছে নিজেদের অবস্থানও তুলে ধরবে রিপাবলিকান দল। সম্মেলনের চার দিনের জন্য চারটি স্লোগান ঠিক করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দিনের স্লোগান ‘মেক আমেরিকা ওয়েলদি ওয়ানস অ্যাগেইন’ বা ‘চলুন আমেরিকাকে আবার ধনী দেশ হিসেবে গড়ে তুলি’।

গত শনিবার হামলায় আহত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন ট্রাম্প। মিলওয়াকিতে সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পথে রক্ষণশীল মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমার মারা যেতে পারতাম। হাসপাতালে চিকিৎসক আমাকে বলছিলেন, তিনি কখনো এমন ঘটনা দেখেননি। তাঁর মতে, এটা অলৌকিক একটি বিষয়।’

আগামী আগস্টে ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এর আগেই চলতি মাসের শেষের দিকে জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন দিতে যাচ্ছে দলটি। এ জন্য বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিদের (ডেলিগেট) ভার্চ্যুয়াল ভোটের আয়োজন করা হবে। এ বিষয়ে জানাশোনা আছে, এমন চারজন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমন তথ্য জানিয়েছেন।

গত মাসের শেষের দিকে বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর যখন বাইডেনকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে, তখনই এমন খবর সামনে এল। তবে ডেমোক্রেটিক পার্টির সাড়ে ৪ হাজার প্রতিনিধির মধ্যে চারজন রয়টার্সকে এ–ও বলেছেন, তাঁরা এ বিষয়ে কিছুই শোনেননি।

তদন্তের নির্দেশ বাইডেনের

ট্রাম্পের ওপর হামলার পর রোববারও এ বিষয়ে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। সিক্রেট সার্ভিসের এত নিরাপত্তার পরও ২০ বছর বয়সী হামলাকারী টমাস ম্যাথিউ ক্রুকস কীভাবে ট্রাম্পের এত কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলেন, তা স্বাধীনভাবে পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে হামলার ঘটনা তদন্তে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই।

এ তদন্তের বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য দিয়ে রোববার এফবিআই জানিয়েছে, ক্রুকস কেন ট্রাম্পের ওপর হামলা চালিয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। তিনি আগে কোনো অপরাধে জড়িত ছিলেন না। হামলায় ব্যবহার করা বন্দুকটিও বৈধভাবে কেনা। এ হামলায় ক্রুকসের সঙ্গে অন্য কেউ জড়িতও ছিল না। তবে এ হামলার পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে এফবিআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা কেন গ্রে বলেছেন, সিক্রেট সার্ভিসের ব্যর্থতার কারণেই হামলাকারী ট্রাম্পের এত কাছে যেতে পেরেছিলেন। আর হামলার পর তাঁরা ট্রাম্পকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিতেও বেশি সময় নিয়েছেন। কারণ, সেখানে দ্বিতীয় কোনো হামলাকারী থাকার প্রবল সম্ভাবনা ছিল।