টাইটান কেন ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে গেল
আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখার লক্ষ্যে সাবমেরিন টাইটানের যাত্রার করুণ সমাপ্তি হলো। বলা হচ্ছে, মহাসাগরের তলদেশে বিপর্যয়কর অন্তর্মুখী বিস্ফোরণে সাবমেরিনটি ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এই ঘোষণা আসার আগে চার দিন মহাসাগরের তলদেশে ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়। সাবমেরিনটিকে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায় কি না, আরোহীদের জীবিত উদ্ধার করা যায় কি না—এমন আশায় এই তল্লাশি অভিযানের দিকে নজর ছিল সারা বিশ্বের।
গত রোববার আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল টাইটান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তলদেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরুর পৌনে দুই ঘণ্টার মাথায় নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে সাবমেরিনটির যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এখন মার্কিন নৌবাহিনী বলছে, টাইটান যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হওয়ার পরপরই মহাসাগরের তলদেশে বিপর্যয়কর অন্তর্মুখী বিস্ফোরণে সাবমেরিনটি ভেঙে টুকরা টুকরা হওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শব্দ তারা শনাক্ত করেছিল। এই তথ্য তখন তার অনুসন্ধানকারীদেরও জানিয়ে দেয়।
গতকাল অনুসন্ধানকারী দল আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষের আশপাশে টাইটানের কিছু ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার কথা জানায়।
অনুসন্ধানকারীরা এখনো টাইটানের আরও ধ্বংসাবশেষের খোঁজে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ঠিক কখন ঘটনাটি ঘটল, ঠিক কী হয়েছিল, আর কেনইবা হয়েছিল—এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা রয়ে গেছে।
বিপর্যয়কর অন্তর্মুখী বিস্ফোরণ
পানির নিচে অন্তর্মুখী বিস্ফোরণ বলতে বোঝায়, নৌযান সমুদ্রের তলদেশের দিকে যাওয়ার সময় প্রচণ্ড চাপে হঠাৎ করে ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যাওয়া।
এ দুর্ঘটনার সময় টাইটানের অবস্থান কোথায় ছিল, সমুদ্রের কতটা গভীরে ছিল, তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।
তবে ১৯১২ সালে ডুবে যাওয়া টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৩ হাজার ফুট গভীরে রয়েছে। আর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তলদেশের উদ্দেশে যাত্রার ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের মাথায় নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয় সাবমেরিনটির।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব কেভ ডাইভারসের আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ পরিচালক রিক মুরকার জানান, টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ যেখানে আছে, সেখানে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে প্রায় ৫ হাজার ৬০০ পাউন্ড চাপ রয়েছে। ভূপৃষ্ঠে মানুষ যে চাপ অনুভব করে, এই চাপ তার চেয়ে কয়েক শত গুণ বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও সাবেক নৌ কর্মকর্তা এইলিন মারিয়া মার্টি বলেন, বিপর্যয়কর অন্তর্মুখী বিস্ফোরণ অবিশ্বাস্য দ্রুততায় ঘটে। এক মিলিসেকেন্ডের একটি ভগ্নাংশের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে। তিনি সিএনএনকে বলেন, অভ্যন্তরে থাকা ব্যক্তিরা কোনো কিছু বুঝতে পারার আগেই পুরো নৌযান ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনায় যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের লাশ উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা কম।
যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড গতকাল বলেছে, এখন তারা যা করতে পারে, তা হলো অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়া। তবে তারা সতর্ক করে বলেছে, সমুদ্রের তলদেশের এই জায়গার পরিবেশ অবিশ্বাস্য রকমের প্রতিকূল।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে
অনুসন্ধানকারীরা এখন সাবমেরিনটির আরোহীদের মরদেহের খোঁজ করবেন। পাশাপাশি তাঁরা ঘটনাটি সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়ার আশায় সমুদ্রের তলদেশে অনুসন্ধান-তৎপরতা চালিয়ে যাবেন।
মার্কিন কোস্টগার্ড বলেছে, ঘটনার ধারাবাহিকতা অনুযায়ী একটি সুনির্দিষ্ট সময়রেখা দাঁড় করাতে সময় লাগবে। তারা সমুদ্রতলের পরিবেশকে অবিশ্বাস্য রকম জটিল বলে বর্ণনা করেছে।
সমুদ্রে বিভিন্ন ধরনের অভিযান নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান আন্ডারওয়াটার ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটরসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টম ম্যাডক্স ২০০৫ সালে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, সাবমেরিনটির ধ্বংসাবশেষের টুকরা এখন ভাসমান থাকতে পারে। সমুদ্রের স্রোতে ধ্বংসাবশেষের টুকরা আরও দূরে চলে যেতে পারে। তাই এই মুহূর্তে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় হলো ধ্বংসাবশেষের অংশগুলো সংগ্রহের চেষ্টা করা।