যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোট গ্রহণ সমাপ্ত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রাথমিক ও বেসরকারি ফলাফল ঘোষিত হবে—এমন প্রত্যাশা থাকলেও তা হয়নি। এ বছরের নির্বাচনী ফলাফল পেতে বিলম্ব হতে পারে। অধিকাংশ ফল হয়তো মঙ্গলবার মধ্যরাতের (বাংলাদেশ সময় আজ দুপুর) মধ্যেই জানা যাবে, প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পরিবর্তিত হয়েছে কি না, তা–ও হয়তো জানা যাবে।
কিন্তু সিনেটের নিয়ন্ত্রণ জানতে আরও দিন দুয়েক লাগবে বলে ভাবা হচ্ছে। জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, পেনসিলভানিয়া ও নেভাদা—এই চার অঙ্গরাজ্যের সিনেট আসনে কে জিতল, তার ওপর নির্ভর করবে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ কাদের থাকবে।
তদুপরি জর্জিয়ায় কোনো একজন প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে রান-অফ বা পুনর্ভোট গ্রহণের নিয়ম রয়েছে। সে ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ফল পেতে আরও এক মাস লাগতে পারে।
ফল ঘোষণায় এই বিলম্ব বিস্তর রাজনৈতিক জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে ভোট গ্রহণের নিয়ম সব অঙ্গরাজ্যে এক রকম নয়। কোথাও আগাম ও ডাক ভোট আগে গোনা হয়, কোথাও দিনের ভোট আগে। এ কথা মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত যে আগাম ভোটে ডেমোক্র্যাটদের কিছু বাড়তি সুবিধা রয়েছে।
আফ্রিকান-আমেরিকান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু আগাম ভোট দিতে পছন্দ করেন। অন্যদিকে নির্বাচনের দিনে ভোটে রিপাবলিকানদের বাড়তি সুবিধা রয়েছে বলে ভাবা হয়। ২০২০ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সব ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই নিজেকে বিজয়ী দাবি করেছিলেন। এমনকি তিনি আর ভোট গণনা না করার দাবিও তুলেছিলেন। কারণ, নির্বাচনের দিন প্রদত্ত ভোটে তিনি এগিয়ে ছিলেন।
যদি প্রাথমিক ও চূড়ান্ত ফলাফলে বড় রকমের ফারাক থাকে, তাহলে পরাজিত প্রার্থী ভোটে কারচুপি হয়েছে এমন দাবি তুলতে পারেন। এবারের নির্বাচনে এমন প্রায় ৩০০ প্রার্থী রয়েছেন, যাঁরা এখনো ২০২০ সালের নির্বাচনী ফলাফল মেনে নেননি। তাঁদের অনেকেই পরাস্ত হলে ফলাফল মানবেন, এমন আগাম প্রতিশ্রুতি দিতে অস্বীকার করেছেন।
ফলে নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে বড় ধরনের বিতণ্ডার আশঙ্কা রয়েছে। রিপাবলিকান পার্টি ইতিমধ্যে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ভোটে নজরদারির জন্য বিস্তারিত প্রস্তুতি নিয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, এটি আসলে ভোটদাতাদের ভয় দেখানোর একটি চক্রান্ত। রিপাবলিকানরা বলছেন, না, তাঁরা ভোটের সততা নিশ্চিত করতে চান। ভোটের প্রত্যাশিত ফলাফলে কোনো রকম ব্যত্যয় ঘটলে তা তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জের জন্যও তাঁরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
জনমত জরিপের ভিত্তিতে ডেমোক্র্যাটরা বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কায় রয়েছেন। এমনকি তাঁদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্কেও গভর্নর পদ ও একাধিক প্রতিনিধি পরিষদ আসনে ঘুঁটি উল্টে যাওয়ার ভয় রয়েছে।
তবে ডেমোক্রেটিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, অবস্থা ততটা খারাপ না–ও হতে পারে, যদি পর্যাপ্ত আগাম ভোট পড়ে। ইতিমধ্যে সারা দেশে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন, ২০২০ সালের তুলনায় যা ৪০ লাখের বেশি। ভাবা হচ্ছে, মোট ভোটের হিসাবে এ বছর নতুন রেকর্ড হবে।
এবারের নির্বাচনে এশীয় বংশোদ্ভূত ভোটারদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হতে পারে। মোট ভোটারসংখ্যার হিসাবে তারা তেমন উল্লেখযোগ্য নয়, মার্কিন জনসংখ্যার ৬ দশমিক ২ শতাংশ এশীয়। তাঁদের অধিকাংশ চীনা, কোরীয় ও জাপানি বংশোদ্ভূত। যেসব সিনেট আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এবং জয়-পরাজয়ের ব্যবধান খুব সামান্য, সেখানে এশীয়দের ভোট একটি প্রধান ভূমিকা রাখবে।
যেমন জর্জিয়ায়। এখানে শহুরে এলাকায় গত কয়েক দশকে বিপুলসংখ্যক এশীয় বসতি গড়ে তুলেছেন। তুলনামূলকভাবে অধিক শিক্ষিত ও বিত্তবান হওয়ায় এঁদের অধিকাংশই ডেমোক্রেটিক ভোট-ব্লকের অন্তর্গত। জর্জিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সিনেট নির্বাচনে এঁদের হাতে রাখতে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান উভয় দলই বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়েছে। ভাবা হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি এশীয়দের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়ায় এঁদের অনেকেই পুরোনো নিয়ম ভেঙে রিপাবলিকান বাক্সে ভোট দিতে পারেন।
উল্লেখ্য, জর্জিয়ায় একাধিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী রয়েছেন, যাঁরা রাজ্যব্যাপী আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এঁদের মধ্যে দুজন ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে জর্জিয়ার সিনেট পদে লড়ছেন। সিনেটর শেখ রহমান ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তিনি পুনর্নির্বাচনের জন্য লড়ছেন। তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তরুণ প্রার্থী নাবিলা ইসলাম। তাঁরা দুজনেই ডেমোক্রেটিক-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে সহজেই জয়ী হবেন—এমন আশা রয়েছে।