যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ অব্যাহত
ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের জেরে স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করল সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
গাজায় যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের দ্য ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইউএসসি) তার প্রধান স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাতিল করা হয়েছে অনুষ্ঠানটি। আগামী ১০ মে এটি হওয়ার কথা ছিল।
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে ইউএসসি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক ডজন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখন বিক্ষোভে উত্তাল। এসব বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অনেক শিক্ষকও। ওয়াশিংটনে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নিয়েছেন হোয়াইট হাউসের অদূরে।
ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশ অমান্য করায় গতকাল বৃহস্পতিবার ২৮ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। নিউইয়র্ক সিটিতে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদের এদিন রাতের মধ্যে শিবির তুলে নিতে যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল, সেটি প্রত্যাহার করেছে।
ইউএসসি কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী, তাঁদের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের উপস্থিতিতে ১০ মে নির্ধারিত স্নাতক অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না।
এর আগে গত বুধবার পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশের অভিযোগে অন্তত ৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করে এবং সেখানে স্থাপন করা বিক্ষোভকারীদের অস্থায়ী শিবিরগুলো ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিলের ওই ঘোষণা দেওয়ার আগে এ মাসের শুরুর দিকে ইউএসসি বলেছিল, অজ্ঞাত নিরাপত্তা হুমকির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী মুসলিম শিক্ষার্থী আসনা তাবাসসুমকে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার অনুমতি দেওয়া যাবে না।
ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীরা বলেন, তাঁরা ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করছেন। একই সঙ্গে আটলান্টায় একটি পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বিষয়েও তাঁদের আপত্তি জানাচ্ছেন। তবে পুলিশ বলেছে, এ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় মোতায়েন করা পুলিশ সদস্যদের বাধা দিয়েছেন ও তাঁদের ওপর বিভিন্ন বস্তু ছুড়েছেন বিক্ষোভকারীরা। পরে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে রাসায়নিক উপকরণ নিক্ষেপ করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘গণহত্যা থেকে বিচ্ছিন্ন’ থাকার (গাজায় ইসরায়েলের ‘গণহত্যা’) আহ্বান জানিয়ে আসছেন। ইসরায়েলে সরবরাহের জন্য অস্ত্র তৈরিতে যুক্ত প্রতিষ্ঠান ও গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধকে সমর্থনকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ না করার জন্যও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আহ্বান জানাচ্ছেন তাঁরা।
কানেটিকাটের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলা বিক্ষোভে নেতৃত্বদানকারী ও আইনের শিক্ষার্থী চিসাতো মিমুরা বিবিসিকে বলেন, ইসরায়েলের গণহত্যায় অর্থায়ন ও তাদের অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করে চলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তাঁর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের ব্যাপারে তাঁরা হতাশ।
কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলা বিক্ষোভ নিয়ে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ উঠেছে। বেশ কিছু ইহুদি শিক্ষার্থী বলেছেন, তাঁরা কলাম্বিয়াসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিরাপদ বোধ করছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্য ইহুদি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয় গত সপ্তাহে। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন ক্যাম্পাসের অচলাবস্থা নিরসনে তাদের সঙ্গে একটা মতৈক্যে আসতে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের গতকাল রাত পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র বেন চ্যাং বলেছেন, ঐকমত্যে পৌঁছানো না গেলে ক্যাম্পাসে শান্ত অবস্থা ফেরাতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয় বিবেচনা করবেন তাঁরা।
গতকালই এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি জানায়, আলোচনায় অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে ও এটি চলবে। এমন অবস্থায় পূর্বঘোষিত সময়সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের কাছে বিক্ষোভকারীরা
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজধানী ওয়াশিংটনে জর্জটাউন ও জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের (জিডব্লিউ) শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের (জিডব্লিউ) ক্যাম্পাসে গতকাল একটি শিবির প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিক্ষোভকারীদের অবস্থান এখন হোয়াইট হাউস ও পররাষ্ট্র দপ্তরের অদূরে।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের একজন আন্না ওয়েসেলস। আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে ইসরায়েলকে আরও ২ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের সহায়তা দেওয়া নিয়ে কংগ্রেসে বিল পাস হয়েছে। প্রেসিডেন্ট এ বিলে সই করেছেন। এ প্রেক্ষাপটে তাঁদের বিক্ষোভের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
ওয়েসেলস বলেন, ‘আমরা যদি ওয়াশিংটনে কিছু না করি, তবে আমরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে থাকতে পারব না।’
এদিকে বিক্ষোভ চলছে ও অস্থায়ী শিবির গড়ে তোলা হয়েছে নিউইয়র্ক ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়েও। এ সপ্তাহের শুরুর দিকে উভয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এ ছাড়া বিক্ষোভ অব্যাহত আছে হার্ভার্ড, ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়, এমআইটি, ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান ও অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, বিক্ষোভকারীরা ভবনগুলো দখল করে রাখায় আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত এটির ক্যাম্পাস বন্ধ থাকবে।
গত রোববার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ ধরনের ‘স্পষ্ট ইহুদিবিরোধিতার’ নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে এর কোনো স্থান নেই।’ তবে হোয়াইট হাউস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন প্রেসিডেন্ট।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় নারকীয় তাণ্ডব শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ১৮০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন; যাঁদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু। আর গাজা উপত্যকার এক বড় অংশ পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।