ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে হ্যাকিংয়ের জন্য দায়ী ইরান: যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা

পেনসিলভানিয়ায় গত শনিবার নির্বাচনী সমাবেশে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ১৭ আগস্ট, ২০২৪ছবি: রয়টার্স

রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারশিবির সম্প্রতি হ্যাকিংয়ের কবলে পড়ে। সে সময় এ জন্য ইরানকে দায়ী করে ট্রাম্পশিবির। যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাও বলছে, এই হ্যাকিংয়ের পেছনে ইরানের হাত আছে।

তাদের অভিযোগ, তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (২০২৪) হস্তক্ষেপ করতে চায়।

এ মাসের শুরুর দিকে ট্রাম্পশিবির থেকে বলা হয়েছিল, তাদের হ্যাকিংয়ের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারশিবিরের অভ্যন্তরীণ কিছু তথ্য হ্যাকিংয়ের কবলে পড়েছে। এ হ্যাকিংয়ের পেছনে ইরান সরকার দায়ী। এ অভিযোগের তদন্ত শেষে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকের কার্যালয় (ওডিএনআই), কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই) এবং সাইবার নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত নিরাপত্তা সংস্থার (সিআইএসএ) পক্ষ থেকে এক যৌথ বিবৃতিতে একই কথা বলা হয়।

সোমবার নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর দেওয়া ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা এবারের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ইরানের আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ড দেখতে পেয়েছি। বিশেষ করে আমেরিকার জনগণকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে তারা নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারকে লক্ষ্য করে সাইবার হামলা চালাচ্ছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এগুলোর মধ্যে সম্প্রতি সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনী শিবির থেকে তাদের অ্যাকাউন্টে অবৈধ প্রবেশের যেসব অভিযোগের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোও রয়েছে। এ জন্য (গোয়েন্দারা) ইরানকে দায়ী করছে।’

আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

ট্রাম্প এবং তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসের নির্বাচনী শিবির গত কয়েক সপ্তাহে তাদের সাইবার হামলার লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোও এ ধরনের হামলা শনাক্ত করেছে বলে জানিয়েছে।

গতকাল সোমবার দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ‘আত্মবিশ্বাসের’ সঙ্গে বলেছে, ইরান উভয় রাজনৈতিক শিবিরের বিভিন্ন ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে সাইবার হামলা চালিয়েছে। তাদের এই হামলার লক্ষ্য ‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করা’।

গত ১০ আগস্ট ট্রাম্পের প্রচারশিবির থেকে দাবি করা হয়েছিল, ‘বিদেশি উৎস’ থেকে তাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। ট্রাম্পের রানিং মেট জে ডি ভ্যান্সের বিভিন্ন তথ্যও অবৈধভাবে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

ট্রাম্পের শিবির থেকে এর পেছনে ইরানের হাত থাকার কথা বলা হয়েছিল।

এদিকে সংবাদমাধ্যম পলিটিকো বলেছে, তারা একটি সূত্র থেকে ট্রাম্পের নির্বাচনী শিবিরের তথ্যসংবলিত কয়েকটি ই-মেইল পেয়েছে। তবে তারা নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হয়নি।

ট্রাম্পের শিবির থেকে অভিযোগ করার তিন দিন পর ১৩ আগস্ট কমলার নির্বাচনী শিবির থেকেও বিদেশি হ্যাকারদের হামলার শিকার হওয়ার দাবি করা হয়। তবে তাদের প্রচারশিবিরে হ্যাকিংয়ের পেছনে কাদের হাত থাকতে পারে, এ বিষয়ে তারা কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।

আরও পড়ুন

কমলার প্রচারশিবিরের এক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘জুলাইয়ে প্রচারশিবিরের আইনি ও নিরাপত্তা দলকে এফবিআই থেকে জানানো হয়েছিল, আমরা বিদেশ থেকে প্রভাবিত করার কার্যক্রমের শিকার হয়েছিলাম।’

গুগল থেকেও এ মাসে বলা হয়, ইরান–সমর্থিত হ্যাকাররা ডেমোক্রেটিক এবং রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী শিবিরকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে।

‘এপিটি ৪২’ নামে পরিচিত একটি হ্যাকার দল এ হামলার পেছনে থাকতে পারে বলেও গুগলের প্রতিবেদনে বলা হয়। হ্যাকারদের দলটি ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

এই হ্যাকার দল ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সংস্থার পেছনে পড়ে আছে। সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক প্রচারশিবিরও তাদের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে।

গুগলের সাইবার হামলার হুমকি বিশ্লেষণকারী দল থেকে বলা হয়েছে, তারা এপিটি ৪২ হ্যাকারদের বাইডেন, কমলা ও ট্রাম্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ঢোকার ব্যর্থ চেষ্টা করতেও দেখতে পেয়েছে।